সমকামিতা এবং ডাকাতির জন্য দোষী সাব্যস্ত নয়জনকে কান্দাহারের আহমাদ শাহি স্টেডিয়ামে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করেছে তালেবান। শুধু তাই নয়, প্রকাশ্যে কেটে নেওয়া হলো তাদের হাত। টলো নিউজের টুইট অনুযায়ী দেশের সুপ্রিম কোর্ট একটি বিবৃতিতে বলেছে, কান্দাহারের আহমদ শাহী স্টেডিয়ামে ডাকাতি এবং সমকামিতার অভিযোগে নয়জনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। মারধরের সময় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং কান্দাহারের বাসিন্দারা উপস্থিত ছিলেন সেই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করার জন্য। প্রাদেশিক গভর্নরের মুখপাত্র হাজি জায়েদ বলেছেন, দোষীদের ৩৫-৩৯ বার বেত্রাঘাত করা হয়েছে। আফগান পুনর্বাসন এবং যুক্তরাজ্যের শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রীর প্রাক্তন উপদেষ্টা শবনম নাসিমি ফুটবল স্টেডিয়ামে তালেবান কর্তৃক চারজনের হাত কেটে নেবার খবর সামনে এনেছেন। তিনি টুইট করে বলেছেন- ”ন্যায্য বিচার ও যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই আফগানিস্তানে মানুষকে বেত্রাঘাত করা হচ্ছে, হাত কেটে ফেলা হচ্ছে এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। এটি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমান। ”আন্তর্জাতিক নিন্দা সত্ত্বেও, তালেবান কট্টরপন্থীদের সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশ অনুসরণ করে অপরাধীদের বেত্রাঘাত এবং প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া আবার শুরু করেছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা প্রকাশ্যে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
আফগানিস্তানের তালিব সরকারকে অবিলম্বে চাবুক মারা এবং সব ধরনের কঠোর, অবমাননাকর শাস্তি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে তারা। জাতিসংঘের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে- ”১৮ নভেম্বর ২০২২ সাল থেকে তালিবান কর্তৃপক্ষ তাখার, লোগার, লাঘমান, পারওয়ান এবং কাবুল সহ বেশ কয়েকটি প্রদেশে ১০০ জনেরও বেশি নারী ও পুরুষ উভয়ের ওপর বেত্রাঘাত চালিয়েছে বলে জানা গেছে। চুরি, অবৈধ সম্পর্ক বা সামাজিক আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত অপরাধীদের প্রত্যেককে ২০ থেকে ১০০ বার বেত্রাঘাত করা হয়েছে। কর্মকর্তা ও জনসাধারণের উপস্থিতিতে স্টেডিয়ামে চাবুক মারা হয়েছে তাদের।” ৭ ডিসেম্বর, ২০২২-এ, তালেবানরা ফারাহ শহরে একজন ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়, যা ২০২১ সালে তালিবানদের ক্ষমতা দখলের পর প্রথম প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড বলে মনে করা হচ্ছে। সেই সময় উপ-প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিবৃতিতে যোগ করা হয়েছে, ১৩ নভেম্বর, ২০২২ এ সুপ্রিম লিডার বিচার বিভাগকে হুদুদ (ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অপরাধ) এবং কিসাস (প্রতিশোধ) কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়ার পরে এই ধরণের কঠোর শাস্তির প্রয়োগ শুরু হয়েছিল। প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত, মৃত্যুদণ্ড নির্যাতন মানবাধিকারের সার্বজনীন নীতি লঙ্ঘন করে। জাতিসংঘ জানিয়েছে – ”আমরা এই শাস্তির আগে বিচারের ন্যায্যতা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছি, যা মৌলিক ন্যায্য বিচার সম্পর্কে প্রশ্নের উদ্রেক করে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এই ধরনের নিষ্ঠুর সাজা, বিশেষ করে মৃত্যুদণ্ডের প্রয়োগ নিষিদ্ধ বলে বিবেচনা করে। একজন মানুষ অপরাধী হলেও সে মর্যাদা এবং সম্মানের অধিকারী। ”