বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু ও চাংক্রান উদযাপন কমিটির উদ্যোগে নগরে বসবাসরত আদিবাসীরা আনন্দ র্যালির মাধ্যমে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিয়েছেন।
শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) ভোর ৬টায় আদিবাসীদের সংস্কৃতি রক্ষার আহ্বান জানিয়ে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বৈসাবি উৎসব পালন করা হয়।
পানিতে ভাসানো হয় ফুল।
আনন্দ র্যালির আহ্বায়ক অমিজ দেওয়ান ও সদস্য সচিব জগৎ জ্যোতি চাকমার নেতৃত্বে র্যালিটি সৈকত এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
আয়োজকরা জানান, পার্বত্য এলাকার বাসিন্দা যারা কর্মসূত্রে নগরে বসবাস করেন, তারাও যেন বৈসাবির আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হন-সে লক্ষ্যে এমন আয়োজন। আনন্দ র্যালিতে যোগ দিয়েছেন আদিবাসীরা, নেচে গেয়ে বরণ করেছেন বাংলা বছরকে।
মূলত ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বৈসুক, মারমা জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাই এবং চাকমা জনগোষ্ঠীর বিঝু- এই তিন অনুষ্ঠান মিলে বৈসাবি। ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা জনগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে এই তিন জনগোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান উৎসবকে একত্রে উদ্যাপন করার একটি রাষ্ট্রীয় প্রথা এই বৈসাবি। এছাড়া বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে ম্রো আদিবাসীরা চাংক্রান পই উৎসব উদযাপন করেন এই সময়ে। ম্রোদের বিশ্বাস, মানত করে কুড়িয়ে পাওয়া বুদ্ধমূর্তিতে পূজা করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়। কথিত আছে, চিংক্লাং ম্রো নামে এক ব্যক্তি ৭০ বছর আগে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে একটি বুদ্ধমূর্তি পান। এ বুদ্ধমূর্তিকে পূজা দিতে চাংক্রান পই উৎসব শুরু হয়েছিল।
পয়লা বৈশাখ ত্রিপুরা, মারমা, চাকমাসহ প্রত্যেক আদিবাসী সম্প্রদায় নিজ নিজ বিশ্বাস ও সংস্কার অনুসারে প্রার্থনা করেন- নতুন বছর যেন সুখে-শান্তিতে কেটে যায়। প্রার্থনা করেন, প্রকৃতি যেন তাদের সহায়তা করে, ফসলের যেন ক্ষতি না হয়। ধনে-জনে যেন পূর্ণ হয়ে ওঠে প্রতিটি ঘর।
পতেঙ্গা সৈকতে ফুল ভাসাতে আসা অনিতা চাকমা বলেন, পুরোনো বছরের সব মন্দ, কালিমা ঝেরে-মুছে ক্ষমা চেয়ে বিদায় ও নতুন বছরের মঙ্গল কামনা করে ফুল ভাসানো হয়েছে। ফুলের মালা গেঁথে ঘরের দরজা সাজিয়েছি। রান্না হয়েছে পাঁচন।
র্যালিতে যোগ দিতে আসা প্রবীণ ব্যক্তি সুফল কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বিঝুর দিনগুলোতে ঘরে ঘরে ‘পাঁজন’ (অন্তত পাঁচ ধরনের শাকসবজি সংমিশ্রণে) রান্না হয়। অন্যান্য খাবারের আয়োজনও থাকে। ঘরে ঘরে ঘুরে বেড়ানো লোকজনকে আপ্যায়ন করা হয়। এই পাঁজন খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যান্ত্রিক জীবনে সবকিছু হারিয়ে যাচ্ছে। তাই বিশেষ এই দিনটাতে শহরে বসবাসরত আদিবাসীরা ক্ষণিকের জন্য খুঁজে নিয়েছেন একটিু আনন্দ।