দা, বঁটি, হাতপাখা, ফুলঝাড়ু ইত্যাদি গৃহস্থালি সামগ্রী। শিমুল তুলা থেকে শীতল পাটি, খাট পালং। কী নেই জব্বারের বলী খেলার বৈশাখী মেলায়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কুটির শিল্পসামগ্রী এনে পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। সোমবার (২৪ এপ্রিল) বিকেল থেকে এক বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে সর্বজনীন এ মেলায় কেনাকাটার ধুম পড়েছে।
নানা বয়সী ক্রেতা। বেশিরভাগই নারী আর তরুণী। সংসারের টুকিটাকি পণ্যসামগ্রী কিনছেন তারা। রীতিমতো দরকষাকষি করে সেরা পণ্যটি কিনছেন হাসিমুখে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সিনেমা প্যালেস মোড়ে কাঠের তৈরি সস্তা খাট, পালং, ওয়ারড্রব, আলনা, শোকেস ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। এরপর হাজারী গলির মুখ পর্যন্ত মৃৎশিল্প সামগ্রীর বিশাল পসরা। মৃৎশিল্প সামগ্রী আছে লালদীঘির মাঠের পেট্রল পাম্পের সামনেও। এবার মৃৎশিল্পসামগ্রীতে শৈল্পিক ছোঁয়া লেগেছে। বর্ণিল রঙের আঁচড়ে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে ফুলদানি, মাটির ব্যাংক ইত্যাদি। শীতল পানির জন্য কিছু মাটির পাত্রে ট্যাব লাগানো দেখা গেছে। বরাবরের মতো বেশি বিক্রি হচ্ছে মাটির ব্যাংক, ফুলদানি, বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতিকৃতি, খেলনা ইত্যাদি।
প্রতি বছর মেলায় ঘুরে ঘুরে হাতপাখা বিক্রি করেন বাঁশখালীর খায়রুল বাশার। তিনি জানান, এ মেলার কিছু বিশেষত্ব আছে। যেমন প্রথম দুই দিন বিক্রেতারা বেশি দামে পণ্য বেচেন। শেষের দিন বলতে অনেকে লসেও বিক্রি করেন। আবার দিনের বেলা পুরুষদের ভিড় থাকে মেলায়। রাতে ও ভোরে নারীরা পছন্দের জিনিস কিনে নিয়ে যান স্বাচ্ছন্দ্যে।
সিলেটের বিখ্যাত শীতলপাটি বিক্রি হচ্ছে সোনালী ব্যাংকের সামনের কয়েকটি স্টলে। বিক্রেতারা জানান নকশা ও মান ভেদে দেড় হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে একেকটি শীতলপাটি। তবে শীতলপাটির সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে সস্তা প্লাস্টিকের মাদুর।
মেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ফুল ঝাড়ু। হাজার হাজার ফুল ঝাড়ু বিক্রি হচ্ছে। মেলাফেরত বেশিরভাগ সংসারী মানুষের হাতেই দেখা গেছে ফুলঝাড়ু। এক জোড়া ফুলঝাড়ু ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে আড়াইশ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ফুলের পরিপক্বতা, বাঁধাইয়ের মানের ওপর দাম নির্ভর করছে। আন্দরকিল্লা মোড়, জেল রোড, জেল গেইট, লয়েল রোড, পুরাতন গির্জা থেকে শুরু করে পুরো মেলা জুড়েই ফুলঝাড়ু ও হাতপাখা বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকার কালীগঞ্জ থেকে পাটের তৈরি নয়ন ভূইয়া এসেছেন মেলায়। দোলনা, চেয়ার, পুতুল, শোপিস, টেবিল ম্যাট ইত্যাদি পঞ্চাশ পদের পণ্য নিয়ে স্টল সাজিয়েছেন তিনি। কালারফুল এসব পণ্য দেখে থমকে দাঁড়াচ্ছেন শৌখিন ক্রেতারা। পছন্দ হলেই শুরু দরকষাকষি।
রাউজানের নোয়াপাড়া থেকে মেলায় এসেছেন অজয় দেব। তিনি জানান, পাহাড়ি এলাকা থেকে ঝাড়ু তৈরির ফুল সংগ্রহ করে শহরেই বাঁধাই করা হচ্ছে। প্লাস্টিকের পাইপ, বেত, প্লাস্টিকের সুতা, অ্যালুমিনিয়ামের তার ইত্যাদি ব্যবহার করে ফুলঝাড়ু তৈরি হচ্ছে। তবে সব কিছুর মতো ফুলঝাড়ুর দামও এবার বেশি। নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালি সামগ্রী হওয়ায় একবছরের জন্য সাড়ে চারশ টাকায় ৬টি ফুলঝাড়ু কিনেছেন তিনি।
লালদীঘির মাঠের উত্তর প্রান্তে হাফডজনের মতো নাগরদোলা বসানো হয়েছে। নানা বয়সী মানুষ এসব নাগরদোলায় চড়তে ভিড় জমাচ্ছেন। যথারীতি লালদীঘির উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারার স্টল রয়েছে। এসব চারায় ঝুলছে বাহারি আম, কমলা, লেবু, আমড়া, সফেদা ইত্যাদি। বৃক্ষপ্রেমীরা কিনছেন পছন্দের চারা।
লালদীঘির পশ্চিম-দক্ষিণ প্রান্তে আছে বেতের তৈরি সোফা, চেয়ার ইত্যাদি। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের মোড়া বিক্রি হচ্ছে মেলায়।
মেডিক্যালের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী এনি নাথ জানান, চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা আসেন এ মেলায়। মেলায় প্রচুর মৃৎশিল্পসামগ্রী পাওয়া যায়। এসব কালেকশনে রাখা ঐতিহ্যের বিষয়। এ অঞ্চলের মানুষ বিশেষ করে শহর ও শহরতলীর মানুষ এক বছরের গৃহস্থালি সামগ্রী এ মেলা থেকে সংগ্রহ করেন।
মেলার ঘোষণা মঞ্চ থেকে মাইকে বারবার প্রচার করা হচ্ছে- মেলা কমিটি চাঁদা আদায় করে না। কেউ চাঁদা দাবি করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করার জন্য।
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলা অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে বালুর মঞ্চ তৈরিসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আয়োজকরা। পরদিন বুধবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে লালদীঘি মাঠে অনুষ্ঠিত হবে চাটগাঁইয়া ঈদ আনন্দ উৎসব।