Alopecia (চুল পড়া)
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় চুল পড়াকে বলে অ্যালোপেশিয়া। একটি গবেষণায় দেখা গেছে ৩০-৫০ বছর বয়সের প্রায় ৫৮% পুরুষ কোনো না কোনো অ্যালোপেশিয়ায় ভুগছেন। ২০-২৯ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে ১২% চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন। চুল পড়ার প্রধান কারণ বংশগত বা জেনেটিক। অ্যালোপেশিয়া অর্থে চুল পড়া, সেটি আংশিক বা সম্পূর্ণ, অল্প জায়গায় সীমাবদ্ধ বা বিস্তীর্ণ হতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক কারণে হতে পারে। সাধারণত: দিনে আমাদের ১০০টা চুল পড়ে, কিন্তু যদি আপনি তার চেয়ে বেশি চুল পড়তে দেখেন (১২০-১৫০ বা আরও বেশি) বা মাথার ত্বকের কোনো জায়গা খালি হয়ে যেতে দেখেন, তবে আপনার তখনই চুলের ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
চুল পড়ার প্রকারভেদ
বিশেষজ্ঞ চুলের ডাক্তাররা চুল পড়াকে নিম্নলিখিত শ্রেণিতে ভাগ করেন:
● য়া (androgenetic alopecia) (বয়সজনিত চুল পড়া) এটি অনেক লোকের হয়, মহিলা ও পুরুষ উভয়েই এই রোগের শিকার হতে পারেন। এটি খুব তাড়াতাড়ি শুরু হতে পারে যেমন টিনএজ (teenage) বয়সে এবং বয়সের সঙ্গে এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
● মেল প্যাটার্ন বল্ডনেস (male pattern baldness)–
● বিন্যাস অনুযায়ী চুল পড়া শুরু হয়, প্রথমে কপালের দুই পাশ থেকে (temple areas)। সময়ের সঙ্গে হেয়ারলাইন (hairline) পিছিয়ে ‘এম/গ’ আকৃতি ধারণ করে। ব্রহ্মতালুর (crown area) চুলও পাতলা হয়ে আংশিক বা পুরো ফাঁকা হয়ে যেতে পারে।
● ফিমেল প্যাটার্ন বল্ডনেস (female pattern baldness) – এতে চুল মাথার উপরের দিক থেকে ফাঁকা হওয়া শুরু হয় এবং মাঝখানের সিঁথি ক্রমশ: চওড়া হয়ে যায়। তবে হেয়ারলাইন পিছোয় না।
কখনও কখনও পুরো মাথায় টাক পড়ে যেতে পারে।
● টেলোজেন এফ্লুভিয়াম (telogen efflvuium)- এটি সারা মাথা জুড়ে চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। কোনো একটি ঘটনার ফলে ৩ মাস পরে শুরু হয়, এবং মাস ছ’য়েকের মধ্যে সাধারণত: নিজেই কমে যায়।
● অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটা (alopecia areata) – এই ধরনের চুল পড়াতে মাথার ত্বকের কিছু বিক্ষিপ্ত জায়গায় গোল করে টাক পড়ে যায়, কিন্তু বাকি চুল স্বাভাবিক থাকে। তবে অনেক সময় পরে পুরো মাথাতেই টাক পড়ে যেতে পারে। এতে শরীরের প্রতিরক্ষা শক্তি দেহের সুস্থ টিস্যুর (tissue) ক্ষতি করে তাকে নষ্ট করে দেয়।
● ট্রাইকোটিলোম্যানিয়া (trichotillomania) – এই রোগে বারবার চুল ধরে টানার ফলে চুল পড়ে যায়। ডাক্তাররা এই রোগকে ঝোঁক নিয়ন্ত্রণ রোগের (impulse control disorder) তালিকায় ফেলেন।
● ইনভল্যুশনাল অ্যালোপেশিয়া (involutional alopecia) – স্বাভাবিক বয়সবৃদ্ধির জন্য যে চুল পড়া। এর মূল কারণ হলো চুলের বৃদ্ধির অ্যানাজেন (anagen) পর্বটির সময় হ্রাস পাওয়া। এতে যত তাড়াতাড়ি চুল পড়ে, অত তাড়াতাড়ি নতুন চুল গজিয়ে উঠতে পারে না।
● স্কারিং অ্যালোপেশিয়া (scarring alopecia) – একে সিকাট্রিশিয়াল অ্যালোপেশিয়াও (cicatricial alopecia) বলা হয়। এটি খুব বেশি দেখা যায় না। এতে বিভিন্ন অসুখের ফলে মাথার ত্বকে প্রদাহ বা ক্ষতচিহ্ন তৈরি হয়ে নতুন চুল গজানোর স্বাভাবিক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
চুল পড়ার কারণ:
চুল পড়া শুরু হওয়ার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে, যেমন:
● বংশগত পরিবারে কারুর চুল পড়ার ইতিহাস থাকলে আপনারও অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা হতে পারে।
● হরমোনের সমস্যা গর্ভাবস্থা বা মেনোপজের (menpause) সময় হরমোনের তারতম্যর ফলে চুল পড়া শুরু করতে পারে। এছাড়া গর্ভনিরোধক বড়ি (birth control pill) খেলে, প্রসবের পরে বা হিস্টারেক্টমি (hysterectomy-গর্ভাশয় কেটে বাদ দেয়া) হলে অ্যানাজেন পর্যায়টি ছোট হয়ে গিয়ে চুল পড়তে পারে। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স (insulin resistance) আরেকটি কারণ। পুরুষদের ক্ষেত্রেও চুল পড়ার পিছনে হরমোনের তারতম্য থাকতে পারে।
● ভুল জীবনযাপন (lifestyle) – স্ট্রেস, বাজে খাদ্যাভ্যাস, অপুষ্টি এবং ভুল জীবনশৈলী অনুসরণের কারণে চুল পড়তে পারে।
● ওষুধ ক্যান্সারের কেমোথেরাপি (chemotherapy) চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে চুল পড়তে পারে।
● টেনে চুল বাঁধা ও চুলে রাসায়নিক চিকিৎসা করানো (chemical treatment) – টেনে চুল বাঁধা যেমন ঝুঁটি (poûtail) বাঁধার ফলে হেয়ার ফলিকলে টান পড়ে চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে। ব্লিচ, রঙ দিয়ে চুলের রাসায়নিক চিকিৎসা করালে চুল সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে যেতে পারে।
● অন্যান্য কারণ- অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত কারণের মধ্যে পড়ে দীর্ঘস্থায়ী অসুখ যেমন থাইরয়েডের রোগ, লুপাস (ষঁঢ়ঁং) এবং পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ (পিসিওডি) (polycystic ovarian disease-PCOD)। ক্র্যাশ ডায়েট (পৎধংয ফরবঃ), চিন্তায় নিয়মিত চুল টানা বা মাথা চুলকানোর অভ্যাস, দ্রুত ওজন কমানো, ইনফেকশন (রহভবপঃরড়হ), চুলের রঙে অ্যালার্জি, চুলের কসমেটিক্স (পড়ংসবঃরপং), সেবোরিক ডার্মাটাইটিস (seborrheic dermatitis) বা সোরিয়াসিস (psoriasis) জাতীয় রোগের কারণে হঠাৎ করে চুল পড়া শুরু হতে পারে।
লক্ষণ সমূহ
● ক্রমাগত অতিরিক্ত চুল পড়া।
● মধ্যতালুর চুল পাতলা হয়ে যাওয়া।
● গোলাকৃতি আকারে বিভিন্ন জায়গায় টাক পড়া।
● ফাঙ্গাল ইনফেকশনের (fungal scalp infection) জন্য হঠাৎ করে চুল উঠে যাওয়া, সঙ্গে ব্যথা বা চুলকানি।
● বিক্ষিপ্ত ভাবে চুল গজানো।
● ‘এম/গ’ আকারে হেয়ারলাইন ক্রমশ: পিছিয়ে যাওয়া।
চিহ্নিত করা (diagnosis)
চুলের বিশেষজ্ঞরা চুল পড়ার কারণে চিহ্নিত করতে মেডিক্যাল হিস্ট্রি (medical history), খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ এবং ট্রাইকোস্কোপির (trichoscopy) সাহায্য ও ট্রাইকোস্ক্যানের সাহয্য নেন।
কারা ঝুঁকিতে আছেন
সাধারণত: পরিবারে কারুর ইতিহাস থাকলে পুরুষদের টাক পড়ার সমস্যায় ভোগার সম্ভাবনা থাকে। মহিলাদের যদি গর্ভধারণ, মেনোপজ, গর্ভনিরোধক বড়ি সেবন বা পিসিওডি’র সমস্যার জন্য হরমোনের তারতম্য হয় তবে তাদেরও হঠাৎ করে চুল পড়া শুরু হতে পারে।
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
চুল পড়া রুখতে নিম্নলিখিত সহজ টিপ্স (tips) গুলো অনুসরণ করতে পারেন:
● উগ্র রাসায়নিক দেয়া সামগ্রী চুলে লাগাবেন না। তাপ দিয়ে চুল স্টাইল (style) করার সরঞ্জাম যেরকম স্ট্রেটনার (straightener) বা পার্মিং আয়রন (perming iron) ব্যবহার করবেন না।
● একটি সুস্থ চুল পরিচর্যার রুটিন (routine) মেনে চলুন এবং একটি হালকা শ্যাম্পু দিয়ে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার চুল পরিষ্কার করুন। কতবার শ্যাম্পু করা উচিত তা আপনার চুলের প্রকৃতি ও ময়লা এবং পলিউশন চুলে কতটা প্রভাব ফেলছে তার উপর নির্ভর করে।
● প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট (nutrient) ও ভিটামিন যেমন আয়রন, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি, প্রোটিন আর ভিটামিন-ই সহ একটি ব্যালান্সড ডায়েট (balanced diet) খান।
● একটি সুস্থ লাইফস্টাইল মেনে চলুন। নিয়মিত ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাস ও ভালো অভ্যাস গড়ে তুলুন।
● এমনভাবে চুল বাঁধবেন না যাতে চুলের গোড়ায় বেশি টান পড়ে।
আধুনিক চিকিৎসা-
পিআরপি থেরাপি, মিনোক্সিডিল ট্র্যপিক্যাল থেরাপি ও চিকিৎসক যদি মনে করেণ হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করে চুলের স্থায়ী সমাধান করা হয় । তবে সবার জন্য প্রযোজ্য না। যাদের টাক থাকার পরও মাথায় ডোনার আছে তারাই কেবল হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করতে পারেন।
লেখক: হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট ও ডার্মাটো সার্জন চেম্বার: কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার বিটিআই সেন্ট্রা গ্রান্ড, (২য় তলা) গ্রীন রোড, ফার্মগেট ঢাকা। প্রয়োজনে-০১৭১১-৪৪০৫৫৮