গ্রামের মানুষ উন্নয়ন চায় দাবি করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, গ্রামের মানুষ অধিকার ও গণতন্ত্র বোঝে না, তারা চায় টিউবওয়েল, ল্যাট্রিন, ভাতার কার্ড। তাদের বাচ্চারা যাতে স্কুলে পড়াশুনা করতে যেতে পারে সেজন্য সড়কে ছোট ছোট কালভার্ট চায়। গ্রামের মানুষের চাওয়া আর শহরের মানুষের চাওয়া এক নয়। আমি সময় পেলেই গ্রামে ছুটে যেয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলি। শনিবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনের বলরুমে ‘আইসিসি রাউন্ড টেবিল অন ইনভেস্টমেন্ট ফর ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
এম এ মান্নান বলেন, পরামর্শক খাতে বড় অংকের অর্থ চলে যায়। লেনডার্সের শর্তের খাতিরে কনসালটেন্ট নিতে হয়। আগে দেখেছি- নোট কিনলেই মূল বই পাওয়া যেতো। বাংলাবাজারে নোট না কিনলে বিক্রেতা বই বেচতো না। এখানেও ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, যদি কনসালটেন্ট (পরামর্শক) না নিই, তাহলে উন্নয়ন সহযোগীরা লোন (ঋণ) দেবেন না। মন্ত্রী বলেন, যেহেতু আমরা কম সুদে ঋণ নিয়ে থাকি, এজন্য অনেক বিষয় মেনে নিতে হয়।
ঋণ নিই, সুদে-আসলে ফেরতও দেই। আমরা কখনো ব্যর্থ হইনি। উন্নয়ন সহযোগীদের বলবো আপনারা শর্ত কমান। আমরা রাষ্ট্র, আপনারা সংস্থা। এটা দাতা সংস্থা হতে পারে না, এটা হবে উন্নয়ন সহযোগী।
উন্নয়নপ্রকল্প প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বার বার বলছেন, প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় খরচ করবেন না। সবার জন্য এটা সাধারণ বার্তা। আমাদের কাছে বার্তা এসেছে, আমরাও খরচ কমানোর চেষ্টা করছি। প্রকল্পের অনেক জায়গায় অপ্রয়োজনীয় খরচ হয়ে যায়। অনেক সময় পরিকল্পনা কমিশনও ধরতে পারে না।
দেশের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে এম এ মান্নান বলেন, ১২ বছরে দেশে পজিটিভ মুভমেন্ট (ইতিবাচক পরিবর্তন) হয়েছে। সড়ক দেখলেই আমরা আনন্দিত হই। সড়কে কতটুকু লাভ হবে, এটা দেখি না। সড়ক ও বাস দেখলেই আমরা আনন্দিত হই। সরকার সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে অনেক নজর দিয়েছে। রেলমন্ত্রী বলেছেন, পঞ্চগড় থেকে টেকনাফ রেল হবে, এটা তো স্বপ্নের মতো। আমি মনে করি, এটি দ্রুত হওয়ার দরাকর। চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে দরকার, রেলের ডাবল লাইন হচ্ছে। এটা হলেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাড়বে।
পরিবেশের ক্ষতি করে উন্নয়ন নয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, জাতি হিসেবে আমরা সচেতন ছিলাম না। এখন সচেতনভাবে কাজ করছি। ধানের জমি নষ্ট করবো না। সামান্য রেডিও ট্রান্সমিশন অফিস হবে অথচ বিশাল জায়গা নিয়ে বসে আছে- এমনটা হতে দেবো না। জমির সর্বোত্তম ব্যবহার করবো। দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখবো না। জলাভূমি ও প্লাবনভূমির ক্ষতি করবো না। প্লাবনভূমিতে ফ্লাইওভার করবো। হাওর অঞ্চলে ফ্লাইওভার করে দেবো। প্লাবনভূমি নষ্ট করবো না। দিরাই-শাল্লা এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। প্লাবন, চরে পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে-এমন অবকাঠামো করবো না।
তিনি আরও বলেন, ঢাকায় যোগাযোগের ব্যাপারে আমরা সতর্ক। ঢাকায় সার্কুলার রোড লন্ডনের আদলে হতে পারে। এটা হলে কিছু উপকার হবে। এটা সিরিয়াসলি অনুমোদন হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, চার মেয়াদে সরকার গঠন করে ইন্দিরা গান্ধী বা মার্গারেট থ্যাচারকেও ছাড়িয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে দ্য ইকোনমিস্ট এশিয়ার লৌহমানবী অভিহিত করেছে। ব্রিটিশ এ সাময়িকীর বিশ্লেষণে ১৭ কোটি মানুষের জনবহুল বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য দারিদ্র্য বিমোচনে নেতৃত্ব দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে বেশিরভাগ সময় জিডিপির বার্ষিক গড় হার ছিল ৭ শতাংশ। সমকালীন বৈশ্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় এটি অভাবনীয় বলে অভিহিত করেছে ইকোনমিস্ট। এটা আমাদের সবার পড়া দরকার। শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশীয়ার আইরন লেডি। অনেকে বলছিলেন, দেশ দেউলিয়া হয়ে যাবে। বাংলাদেশ দেউলিয়া হয়নি। আমরা পদ্মা সেতু নিজের টাকায় বাস্তবায়ন করেছি। তিনি বলেন, মাহাথির মোহাম্মদের প্রসংশা করা হয়। মাহাথির মালেশিয়াকে পরিবর্তন করে দিয়েছে, সে হিরো। বাংলাদেশের মাহাথির শেখ হাসিনা দেশকে পরিবর্তন করে দিয়েছে। মাহাথির মালেশিয়ায় যা করেছে, গত ১৪-১৫ বছরে শেখ হাসিনা সেটি করেছে।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের সভাপতি ইটিবিএল হোল্ডিংস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহবুবুর রহমানের সভাপতিতে গোলটেবিলে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল হক, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ প্রমূখ।