দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে দেহাজারী-কক্সবাজার সিঙ্গেল ট্রাক ডবল গেজ (মিটার গেজ ও ব্রড গেজ) ১০১ মিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ কাজ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজধানী ঢাকা থেকে বহুল প্রত্যাশিত ট্রেন চলাচল করবে কক্সবাজারে।
সে কারণে প্রস্তুত করা হচ্ছে কর্ণফূলী নদীর উপরে নির্মিত পুরোনো কালুর ঘাট রেলওয়ের একমুখি সেতুকে। পুরোনো সেতুর বর্তমান লোড ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করার পরে আপাতত ওই সেতুর উপর দিয়েই ট্রেন চলাচল করবে রাজধানী ঢাকা থেকে কক্সবাজারে। পুরো রেল সেতু উন্নীতকরণের কাজ শুরু হচ্ছে চলতি মাসের মধ্যেই। ইতোমধ্যে ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নিয়োজিত ঠিকাদারকে কার্যাদেশও প্রদান করা হয়েছে। এ দিকে সেতু বন্ধ হওয়ার পরে সড়কে যে ট্রাফিক ভলিউম হবে তা নিয়ন্ত্রণের জন্যই সেতুর পাশে ফেরি সার্ভিস নির্মাণ করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। সেটি চালুর জন্যই ইতোমধ্যে চার দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সারা না পাওয়ায় চলতি জুলাইয়ে পঞ্চম দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। যা চলতি ১১ জুলাই উন্মুক্ত করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন সওজ চট্টগ্রাম জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা।
একই সাথে এবার এক ধাপ এগিয়ে আলোর মুখ দেখছে যৌথ অর্থায়নে কর্ণফূলী নদীর কালুরঘাটে পুরোনো রেল সেতুর উজানে নতুন রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি, এতে ব্যয় হবে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের রয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা।
ইতোমধ্যে কোরিয়ার ইউসিং ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি নতুন সেতু নির্মাণের জন্য সমীক্ষা শেষ করেছে। ইউসিং ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি সমীক্ষা প্রতিবেদন দাখিলও করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ের প্রকৌশলী ও জয়দেবপুর ইশ্বরদী প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর প্রকৌশলী ও নুতন সেতু প্রকল্পের গোলাম মোস্তফা।
তিনি জানান, সমীক্ষার পরে এবার চলতি মাসের মধ্যে কোরিয়ার প্রতিনিধির সাথে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার প্রত্যাশা করছেন ওই প্রকৌশলী। এর পরই খুব দ্রুত ওই প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করে প্লানিং কমিশনে জমা দেয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
সমীক্ষা প্রতিবেদন মোতাবেক জানা গেছে, বর্তমানে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপরে যে পুরোনো সেতু রয়েছে তার ঠিক ৭০ মিটার উজানে এই নতুন প্রস্তাবিত নতুন সেতু নির্মিত হবে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৭০০ মিটার আর এতে নেভিগেশন হাইট বা উচ্চত হচ্ছে ১২.২ মিটার। এ জন্য দুই প্রান্তে সংযোগ স্থাপন করা হচ্ছে (স্বাব) ২.৫০ মিটার করে।
সমীক্ষা অনুযায়ী নতুন সেতুর প্রস্থ হচ্ছে ৭০ ফুট। এর মধ্যে ৫০ ফুটে হবে ডবল গেজ ও (এমজি ও বিজি) ডাবল ট্র্যাক। ২০ ফুটের মধ্যে দুই লেনের সড়ক পথ তৈরি করা হবে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম সলিমুল্লাহ বাহার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে নয়া দিগন্তকে জানান, কক্সবাজারের সাথে দেশের রেলপথ যোগাযোগ দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তাছাড়া কক্সবাজারে গড়ে উঠছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর। ওই বন্দর দিয়ে প্রতিবছর দেশী-বিদেশী লাখ লাখ টন ভারী মালামাল উঠা-নামা করবে। আবার ওই সব মালামাল দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানো হবে। আবার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখ লাখ টন মালামাল বন্দরে পৌঁছানো হবে। এছাড়া মহাসড়কের ট্রাফিক ভলিউম নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি চিন্তাভাবনা করেই কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেলপথকে ডুয়েল গেজ (মিটার ও ব্রডগেজ) ব্যবহার করা হবে। সে কারণেই মূলত নতুন সেতু নির্মাণ যুক্তিসংগত কারণেই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
রেলওয়ের প্রকৌশলী ও জয়দেবপুর ইশ্বরদী প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর প্রকৌশলী ও নুতন সেতু প্রকল্পের গোলাম মোস্তফা জানান, একই সাথে দোহাজারী থেকে নগরীর ষোলশহর পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার পুরো মিটারগ্যাজ রেল লাইনকে ব্রডগ্যাজ লাইনে রূপান্তর করার জন্য ইতোমধ্যে ডিপিপি তৈরি করে প্লানিং কমিশনে পাঠানো হয়েছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন।