আন আইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট তথা ইউএফও নিয়ে গবেষণার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ফলাফল প্রকাশ করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত নাসার সদর দফতরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
ভিনগ্রহের জীব বা এলিয়েন আছে কিনা, সেটা নিয়ে মানুষের কৌতূহল নতুন নয়। সম্প্রতি সেই কৌতূহল বেড়ে যায়। কারণ বিজ্ঞানীদের একাংশ দাবি করেন, পৃথিবীতে ভিনগ্রহের প্রাণীরা এসেছে।
এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের আকাশে দ্রুতবেগে উড়ন্ত অজ্ঞাত অনেক বস্তু দেখার ঘটনা বেড়ে যায়। এ নিয়ে নতুন করে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়।
নাসার গবেষণা নিয়ে নানা গুজবের কথা সারা বিশ্বে প্রচলিত। অনেকে এমনও দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষ অঞ্চলে নাকি ভিনগ্রহের প্রাণীরা বাস করে। এ নিয়ে সম্প্রতি বিশদ গবেষণার ঘোষণা দেয় নাসা। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সেই গবেষণারই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে।
আকাশে যেসব উড়ন্ত বস্তু দেখা যায় সেগুলোকে প্রায়ই আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট তথা ইউএফও বা আনআইডেন্টিফায়েড অ্যানোমেলাস ফেনোমেনা তথা ইউএপি বলে ডাকা হয়।
নাসা বলছে, আকাশে দেখা গেছে এমন বেশিরভাগ ইউএফও সম্পর্কে ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে। তবে এমন কিছু বস্তু আছে যা মানুষের তৈরি বা প্রাকৃতিক ঘটনা।
ইউএফও গবেষণা রিপোর্টে নাসা জানিয়েছে, আকাশে যদি এমন কোনো বস্তুর দেখা পাওয়া যায় যা চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না, তাহলে সেই বস্তুটিকে সঙ্গে সঙ্গেই ভিনগ্রহের প্রাণীদের মহাকাশযান বলে দেয়া যাবে না। সেটি অন্য কিছুও হতে পারে।
তবে একইসঙ্গে নাসা এও বলছে, প্রাণের অস্তিত্ব সৌরজগতেই সীমাবদ্ধ নেই। সৌরজগতের বাইরেও প্রাণ থাকতেই পারে। কিন্তু এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।
এতদিন আকাশে অজ্ঞাত কোনো অজ্ঞাত বস্তু দেখলে ‘আন আইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট’ বা ইউএফও বলত নাসা। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে ‘আই আইডেন্টিফায়েড অ্যানোম্যালাস ফেনোমেনা’।
নাসার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এখন নাসার যে মহাকাশ অভিযান চলছে বা যে অভিযানগুলোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেই অভিযানগুলোর ক্ষেত্রে একটু বদল আনা হচ্ছে। চাঁদ বা অন্যান্য উপগ্রহ কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে, সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’
নাসার পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, মহাকাশ অভিযান ও গবেষণার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নেয়া হচ্ছে। ভিনগ্রহের জীব সত্যিই আছে কিনা, সে ব্যাপারেও গবেষণা চলছে। এর জন্য বিভিন্ন অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্য নেয়া হচ্ছে। যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এই তথ্যের উপরেই গবেষণার ফল নির্ভর করছে।
ইউএফও বা ভিনগ্রহী যানের অস্তিত্ব আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে গত বছরের জুন মাসে গবেষণা শুরু করে নাসা। এক ঘোষণায় সংস্থাটি জানায়, তারা অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু নিয়ে (আনআইডেন্টিফাইড ফ্লাইং অবজেক্টস) পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। এজন্য একটি স্বাধীন গবেষণা দলও গঠন করা হয়েছে।
স্পেস ডটকমের প্রতিবেদনে জানা যায়, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ডেভিড স্পারগেলের নেতৃত্বে ১৬ জন বিজ্ঞানী, পাইলট ও ডেটা বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে ২০২২ সালে নাসার ইউএফও গবেষণার একটি দল গঠিত হয়। এরপর চলতি বছরের ৩১ মে ইউএফও নিয়ে প্রথমবার উন্মুক্ত সংলাপের আয়োজন করে নাসা।
সংলাপে জানা যায়, গত এক বছরে ৮০০ ঘটনা বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন তারা। তবে এখনো এলিয়েন বা ভীনগ্রহের কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব এখনও পাওয়া যায়নি। তবে ভিন্ন গ্রহবাসীদের থাকার সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। আর এ বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন গবেষণা সরঞ্জাম।