বিএনপি’র ৩ সংগঠনের তারুণ্যের রোডমার্চে ফখরুল
সরকার পতনের একদফা দাবিতে রংপুর শহর থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত তারুণ্যের রোডমার্চ করেছে বিএনপি’র তিন সংগঠন। ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘপথে সাতটি পথসভাসহ ৯টি স্থানে বক্তব্য দেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল এসব পথসভা ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি সর্বস্তরের জনগণকে সরকারের পদত্যাগ দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করার আহ্বান জানান। প্রতিটি পথসভার বক্তব্যে উপস্থিত জনগণের কাছে তার জিজ্ঞাসা ছিল, এই সরকার আবার একটা যেনতেন নির্বাচন করতে চায়। আপনারা কী সেই একতরফা নির্বাচন হতে দেবেন? উপস্থিত জনতা সমস্বরে জবাব দেন- ‘না’। এসময় মির্জা ফখরুল জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। আমরা এই সরকারকে একদফা নির্বাচন করতে দেবো না। এই সরকারের পতন অবশ্যম্ভাবী।
মির্জা ফখরুল বলেন, মানে মানে কথা শুনুন, দয়া করে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। অতীতে যেভাবে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটানো হয়েছে আপনাদের পতন সেভাবে ঘটানো হবে। সারা দেশের মানুষ জেগে উঠেছে।
জাগরণের মাধ্যমে তরুণদের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে মুক্ত করা হবে।
সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, এখনই এই সংসদ ভেঙে দিন। দলীয় নির্বাচন কমিশন বিলুপ্ত করুন। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন।
বেলা সোয়া ১১টায় রংপুর জেলা শহরের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে রোডমার্চ শুরু হয়। ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বিকাল ৫টায় দিনাজপুর শহরে পৌঁছে রোডমার্চের গাড়িবহর। রোডমার্চে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল ও স্থানীয় বিএনপি’র ও অঙ্গদলের হাজার হাজার নেতাকর্মী বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে অংশ নেন। পথে পথে রংপুর, সৈয়দপুর, নীলফামারী, দিনাজপুরসহ আশপাশের ৮টি জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী গাড়ি নিয়ে রোডমার্চে যোগ দেন। একপর্যায়ে রোডমার্চের গাড়িবহর কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ হয়ে যায়। অনেকে ক্যাপ, দলীয় টিশার্ট, ব্যানার, ফেস্টুন ও জাতীয় পতাকা হাতে রোডমার্চে অংশ নেন। রংপুর শহর থেকে বের হওয়ার সময় উৎসুক জনতা দুই পাশে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে রোডমার্চের বহরকে অভিবাদন জানান। পথে পথে বিভিন্ন স্থানে নারী, শিশুরা ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রোডমার্চকে স্বাগত জানায়। রোডমার্চের শুরুতে রংপুর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম তদারকি করেন। সহযোগিতায় ছিলেন জেলা বিএনপি’র বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা।
দিনাজপুর শহরের ট্রাকস্টেশন মাঠে প্রথম দিনের রোডমার্চ শেষে সমাপনী বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনার সরকার নির্বাচিত নয়। জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। তারা আবার একতরফা নির্বাচন করতে চায়। এবার মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এবার আর আপনার জারিজুরি খাটবে না। দেশের মানুষ ও সমস্ত রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ। তাদের আর বোকা বানাতে পারবেন না।
তিনি বলেন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আমানউল্লাহ আমানসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে। তিনি বলেন, শুধু আমরা নই, সারা বিশ্বের মানুষ আজ বলছে, বাংলাদেশে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি; এবারো হবে না। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আবার পাতানো নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে তারা। সেজন্য সব আয়োজন করছে। নিজের ইচ্ছামতো ডিসি-এসপি নিয়োগ দিয়েছে। এটা মানুষ মেনে নেবে না। এসময় তিনি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করার দাবি জানান।
এর আগে সৈয়দপুরে পথসভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এবার জনগণ নিজের ভোট নিজে দিতে চায়। পুলিশ, র্যাব দিয়ে ভোট নিয়ে যাবেন, মানুষকে বোকা বানাবেন- এবার এটা হবে না।
তারাগঞ্জে পথসভায় ফখরুল বলেন, এই সরকারের বিদায় অবশ্যম্ভাবী। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। আপনারা কি এই সরকারের অধীনে নির্বাচন চান? জনতা সমস্বরে বলে উঠেন ‘না’। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ, তিনি চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
বেলা সোয়া ১১টায় রংপুর জেলা বিএনপি কার্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে তারুণ্যের রোডমার্চ উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, আমাদের দাবি একটাই, এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়। তাই বিনীত অনুরোধ করবো এখন এই সংসদ ভেঙে দিন। দলীয় লোক দিয়ে গঠিত নির্বাচন কমিশন বিলুপ্ত করুন।
তিনি বলেন, আজকে আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমাদের একদফা দাবি যদি না মানেন, তাহলে লক্ষ লক্ষ তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবো। কারণ এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এর আগে কুত্তা মার্কা নির্বাচন হয়েছে। কারণ তখন ভোটকেন্দ্রে শুধুমাত্র কুকুর ছিল। সুতরাং আমরা সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়।
বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, এই আন্দোলনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যদি নির্বাচন করতে পারি তাহলে আমরা একটি জাতীয় সরকার গঠন করবো। রংপুর দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে রোডমার্চ শুরুর পর পাগলাপীর বাজার, তারাগঞ্জ বাজার রোড, সৈয়দপুর ট্রাক স্ট্যান্ড, সৈয়দপুর ওয়াপদা মোড়, দিনাজপুরের রানীরবন্দর, দশমাইলেও পথসভা হয়। পথে পথে রোডমার্চের বহরে যুক্ত হন ৮ জেলার নেতাকর্মীরা
দিনাজপুর শহরের ট্রাকস্ট্যান্ডে সমাপনী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী। সঞ্চালনা করেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল। বক্তব্য দেন, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত রাশেদ ইকবাল খান, বিএনপি’র ফরহাদ হোসেন আজাদ প্রমুখ।
এদিকে আজ সকাল ৯টায় বগুড়া চার রাস্তার মোড় থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো রোডমার্চ শুরু হবে। নওগাঁ হয়ে রাজশাহী গিয়ে রোডমার্চের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।