নির্মাণ প্রক্রিয়ার নানা ধাপ পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বিধি অনুসরণ করে অবশেষে বহুল কাঙ্ক্ষিত মহামূল্যবান ইউরেনিয়াম এখন বাংলাদেশে। চূড়ান্ত ধাপে সফলভাবে এখন শুরু হবে এ ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল বা পারমাণবিক জ্বালানির প্রি-কমিশনিং। অর্থাৎ ধীরে ধীরে পরমাণু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এগিয়ে যাবে প্রকল্পটি। প্রথম চালানে আপাতত ২৪টি ফুয়েল অ্যাসেম্বলি বুঝে পেয়েছে বাংলাদেশ। পরবর্তী ধাপে আসবে জ্বালানির আরও চালান।
সংশ্লিষ্টদের আশা, শুধু বিদ্যুৎ নয়, এ প্রকল্পটি বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির সূচকেও দেশকে উন্নীত করবে অনন্য স্তরে। দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প – রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র। শুধু আর্থিক নয়, যুগান্তকারী এ প্রকল্পের ব্যাপ্তি বহুমাত্রিক।
পরমাণু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে স্বপ্ন মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই দেখছিল তৎকালীন পূর্ববঙ্গবাসী। যুগের পর যুগ অপেক্ষার পর অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে এ প্রকল্প এখন বাস্তব। আস্ত একটি পরমাণু কেন্দ্রের (নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট) মালিক হতে চলেছে, এককালে খুঁড়িয়ে চলা এ দেশটি।
নির্মাণের বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে স্বপ্নের রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পটি এখন প্রি-কমিশনিং ধাপ অতিক্রম করছে। এ ধাপে নিউক্লিয়ার জ্বালানি বা খোদ ইউরেনিয়াম রিয়্যাক্টর অর্থাৎ চুল্লিতে উঠানোর চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রকৌশলীরা।
নির্মাণ সূচি অনুযায়ী, সময়মতোই ইউরেনিয়ামের চালান বুঝে পেয়েছে বাংলাদেশ। এবার পালা এ ফ্রেশ ফুয়েলসহ পুরো প্ল্যান্টকেই বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কারিগরিভাবে প্রস্তুত করা।
করোনা মহামারি তো বটেই, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের যাঁতাকলেও কিছুটা ধাক্কা খেয়েছিল প্রকল্পটি। তবে ঢাকা-মস্কোর নিবিড় তদারকিতে থেমে যায়নি নির্মাণযজ্ঞ। সূত্র নিশ্চিত করেছে, রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় নভোসিবিরস্ক কেমিক্যাল কনসেন্ট্রেন্টস প্ল্যান্টে প্রস্তুত করা হয়েছে রূপপুরের জ্বালানি বা ইউরেনিয়াম। চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম তিন চালান বা তিন বছরের জন্য বিনামূল্যে ইউরেনিয়াম পাবে বাংলাদেশ।
জানা গেছে, প্রথম ধাপে মোট ১৬৮টি ফুয়েল অ্যাসেম্বলি পাবে রূপপুর। যার মধ্যে ২৪টি অ্যাসেম্বলি এখন বাংলাদেশে। ধাপে-ধাপে আসবে বাকিগুলো। একেকটি ফুয়েল অ্যাসেম্বলিতে রয়েছে ৩২০টি ফুয়েল রড। আর একেকটি রডে থাকবে ৩১২-৩১৩ টি ফুয়েল প্যালেট। রূপপুরের একটি চুল্লিতে এমন ১৬৩টি অ্যাসেম্বলি ইনস্টল করা থাকবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান জানান, একদিনে নয়, বরং ধাপে ধাপে আসবে এ জ্বালানি। সম্মান আর মর্যাদার স্তরে উন্নীত করার এ প্রয়াসে বাকিপথেও সব মন্ত্রণালয়কে একযোগে পাশে চান তিনি।
সবকিছু ঠিক থাকলে ৫ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে এ জ্বালানির মালিকানা বুঝে নেবে বাংলাদেশ। জ্বালানি হস্তান্তরের বর্ণাঢ্য ওই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি রূপপুরে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একক প্রকল্প হলো পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার টাকা এবং বাকি ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা হিসেবে রাশিয়া থেকে আসছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০২৪ সালে প্রথম ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চায়। একই বছর বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করার আশা করছে তারা।