এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে ব্রাজিলকে পেছনে ফেলে বেশি মৃত্যু এখন বাংলাদেশে। এরইমধ্যে টানা ২৩ বছরের ইতিহাস ভেঙে দেশে চলতি মৌসুমে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ছাড়িয়েছে এক হাজার জনের বেশি। কিছুতেই লাগাম টানা যাচ্ছে না মরণঘাতি এডিসের। চলতি মাসে এসেও যেন টালমাটাল অবস্থা। বিগত কয়েক সপ্তাহে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় ঢাকার তুলনায় এগিয়ে আছে বাইরের জেলাগুলো। যা ভয়াবহ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের স্বাস্থ্য খাতে।
এ যখন অবস্থা তখন নতুন করে রেকর্ড গড়লো চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর পরিসংখ্যানে। গত ২৪ ঘণ্টায় মানে শনিবার সকাল থেকে বোরবার সকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। এর মাধ্যমে মশাবাহিত ভাইরাসটিতে চলতি বছর মৃত্যু হলো এক হাজার ছয়জনের। হাজারেরও বেশি মৃত্যুর এই পরিসংখ্যান দেশের দীর্ঘ ২৩ বছরের ইতিহাসই ভাঙেনি; রেকর্ড গড়েছে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলেও। অন্যদিকে, আক্রান্তের সংখ্যাও ছাড়িয়েছে দুই লাখের বেশি। যা ব্রাজিলকে পেছনে ফেলে বেশি মৃত্যু এখন বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে।
এদিকে গতকাল রোববার (০১ অক্টোবর) সচিবালয়ে ডেঙ্গুকে সারাবছরের রোগ উল্লেখ করে সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে একযোগে বছরব্যাপী কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঢাকার তুলনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যায় এগিয়ে আছে ঢাকার বাইরের জেলাগুলো। সব মিলিয়ে ঢাকার বাইরে ১৫ কোটি মানুষ ঝুঁকিতে আছে ডেঙ্গুর।
এদিকে আশার আলো জাগাচ্ছে ডেঙ্গু টিকা। তবে গত শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়াস্থ নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এর পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি করা ডেঙ্গু টিকা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।
তিনি জানিয়েছেন, আইসিডিডিআর,বি পরীক্ষামূলকভাবে একটি টিকা তৈরি করেছে, সেটা এখনও পরীক্ষায় রয়েছে। আইসিডিডিআর,বি জানিয়েছে, তাদের এই টিকাটি বেশ কার্যকর। আমাদের আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে, প্রয়োজনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদন নিব এবং আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব। যখন পরীক্ষাগুলো শেষ হয়ে যাবে, তখন আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন নিয়ে আমাদের দেশেও ব্যবহার করতে পারব। কিন্তু এই মুহূর্তে বিশ্বের কোনো দেশেই ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকরি টিকা তৈরি হয় নাই।
তিনি আরও বলেন, টিকা নিয়ে গবেষণা কিন্তু বিশ্বব্যাপী চলছে। ইতোমধ্যে দুটি টিকাও আবিষ্কার হয়েছে; তবে সেই টিকাগুলো ব্যবহার হচ্ছে না বারণ সেগুলোতেও আবার কিছু সমস্যা আছে। চার ধরনের ডেঙ্গু আছে, ভাইরাস আছে। টিকা নিলে দেখা যায় কিছু ভাইরাস দমনে হচ্ছে, কিন্তু সব ভাইরাস দমন হয় না। আর যারা একবার ডেঙ্গুর টিকা নিয়েছে তাদেরকে অন্য ভাইরাসে আক্রমণ করলে তাদের অবস্থা বেশি গুরুতর হয়ে যায়। যে কারণে বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গুর টিকা ব্যবহার হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত: সম্প্রতি দেশে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু টিকার সফল পরীক্ষা হয়েছে। আইসিডিডিআর,বি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউভিএম) লার্নার কলেজ অব মেডিসিনের গবেষকরা বাংলাদেশে এই টিকার পরীক্ষা চালান।
এর আগে গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় ১৮২ জনের।
এদিকে, গতকাল রোববার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মানে শনিবার সকাল থেকে বোরবার সকাল পর্যন্ত মারা যাওয়া ১৭ জনের মধ্যে রাজধানী ঢাকার ৯ জন, ঢাকার বাইরের ৮ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, সবশেষ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২ হাজার ৮৮২ জনের মধ্যে ঢাকায় ৬২৯ জন এবং ঢাকার বাইরে রয়েছেন ২ হাজার ২৫৩ জন। এ নিয়ে চলতি বছর দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার ২৮৮ জনে।
বর্তমানে মোট ৯ হাজার ৩৫৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৩ হাজার ১২০ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ৬ হাজার ২৩৭ জন। আর চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন মোট ১ লাখ ৯৫ হাজার ৯২৫ জন।
এরআগে, ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে মোট ২৮১ জনের মৃত্যু হয়। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একইসঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন।