গাজা সিটি থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সরে যাওয়া বেসামরিক গাড়িবহরে ইসরাইল বিমান থেকে বোমা হামলা চালিয়েছে। এতে কমপক্ষে ৭০ জন নিহিত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাসের কর্মকর্তারা। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। ইসরাইলের হামলায় লেবাননে নিহত হয়েছেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একজন সাংবাদিক। আজ শনিবার শেষ হচ্ছে ইসরাইলের বেঁধে দেয়া ২৪ ঘন্টার সময়সীমা। এ সময়ের মধ্যে গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে প্রায় ১১ লাখ মানুষকে সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইল। এ বিষয়ে জাতিসংঘকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘ জানিয়ে দিয়েছে গাজায় অবকাঠামো বিধ্বস্ত। মানুষগুলো আতঙ্কিত। তাদেরকে এত অল্প সময়ে উদ্ধার করা অসম্ভব।
জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও ইসরাইলের এমন নির্দেশ বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে। তা সত্ত্বেও যাদের পক্ষে সম্ভব, তারা যে যেভাবে পেরেছেন, গাজা ছেড়ে গেছেন। অনেক মানুষকে দেখা গেছে, ধ্বংসপ্রায় গাড়িতে পরিবার নিয়ে ছুটছেন নিরাপত্তার আশায়। উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণের দিকে এভাবে ছুটছিলেন লোকজন। যাদের কোনো পরিবহন সুবিধা নেই তারা হয়ত চারপাশের ধ্বংসস্তূপের পাশে অসহায় অবস্থান করছেন।
ওদিকে গাজা সীমান্তে প্রায় এক লাখ সেনা, সমরাস্ত্র মোতায়েন করে প্রতিরোধ দেয়াল তৈরি করেছে ইসরাইল। তাদের ২৪ ঘন্টার সময়সীমা বেঁধে দেয়া মানে এ সময়ের পর তারা ওই অঞ্চলে স্থল অভিযান শুরু করবে। কারণ, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় প্রতিশোধ যুদ্ধ সবেমাত্র শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে তার সেনারা বলেছে, গাজায় যেসব ইসরাইলিকে আটক করা হয়েছিল, তার মধ্যে অনেকের মৃতদেহ তারা উদ্ধার করেছে। গাজার নাগরিকরা পানি, খাদ্য, বিদ্যুতের অভাবে যখন অবর্ণনীয় মানবিক সংকটে তখন সেই সঙ্কট নিয়ে আঞ্চলিক সরকারগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁ গাজা পরিস্থিতি বিপজ্জনক এক নতুন নিম্নস্তরে পৌঁছে গেছে বলে উল্লেখ করেছেন। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বন্ধের জন্য আরও কিছু করার জন্য গুতেরাঁর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি জাতিসংঘের দূত।
অন্যদিকে গাজা থেকে কমপক্ষে ১১ লাখ ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে নেয়ার যে পরিকল্পনা করেছে ইসরাইল, তাকে মানবিক সঙ্কট বলে উল্লেখ করেছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল। তিনি শনিবার বেইজিংয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, একদিনের মধ্যে কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষকে গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে সরে যাওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী তা বাস্তবায়ন অসম্ভব।
তিনি বলেন, একবার কল্পনা করুন, গাজার মতো পরিস্থিতিতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১০ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেবেন। এটা শুধুই একটি মানবিক সঙ্কট। অন্যদিকে ইসরাইলের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন সহ পশ্চিমা অনেক নেতা। শুক্রবার ইসরাইলি নেতাদের সঙ্গে মিটিং করেছেন ভন ডার লিয়েন। তবে মিটিং শেষে তিনি গাজায় ইসরাইলের বোমা হামলার কথা সামনে আনেননি। গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে যে ১১ লাখ মানুষকে দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইলি সেনারা, সে বিষয়ে কোনো কথাই বলেননি।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগের সঙ্গে বৈঠকের পর দুটি বিবৃতিতে হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধে কঠোর সমর্থন দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। নিজেদের এবং জনগণকে রক্ষার দায়িত্ব আছে ইসরাইলের। বৈঠকের পর নেতানিয়াহু এবং ভন ডার লিয়েন বলেছেন, যা কিছু ঘটছে তার জন্য একা শুধু হামাস দায়ী।
ওদিকে লেবাননের দক্ষিণে সাংবাদিকদের একটি গ্রুপের ওপর গোলা নিক্ষেপ করেছে ইসরাইল। এতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। এ পর্যন্ত ইসরাইলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ১৯০০। আহত হয়েছেন ৭৬৯৬ জন।
শুক্রবার দখলীকৃত পশ্চিমতীরে ১৬ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। এ নিয়ে পশ্চিমতীরে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫১। অন্যদিকে ইসরাইলে নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ১৩০০ তে। আহত হয়েছে ২৮০০ মানুষ। এই যুদ্ধে ইসরাইল গাজা ও লেবাননে সাদা ফসফরাস ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।