চট্টগ্রামে ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আগমনে স্বাগত জানানোর লক্ষ্যে জাতীয় নদী কর্ণফুলি ঘোষণা বাস্তবায়ন পরিষদ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। গতকাল ১৮ অক্টোবর বুধবার সন্ধ্যায় জামাল খান মোমিন রোডস্থ পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ে সংগঠনের সাধারণ সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সংগঠনের সভাপতি সরোয়ার আমিন বাবুর সভাপতিত্বে সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখেন, সহ- সভাপতি এম এ সবুর, সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাকসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন, যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক রেবা বড়ুয়া সহ অন্যান্যরা। গৃহীত কর্মসূচিগুলো হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে লিফলেট, পোস্টারিং, কর্ণফুলি নদীকে জাতীয় নদী ঘোষণার পক্ষে গণস্বাক্ষর অভিযান, মতবিনিময় সভা, সংবাদ সম্মেলন, কর্ণফুলী নিয়ে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কর্ণফুলি নদী বিষয়ক প্রকাশনা ও কর্ণফুলির ঐতিহ্য “সাম্পান নৌকা” স্মারক উপহার প্রদান। সভায় বক্তারা বলেন, ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই জাতীয় নদী কর্ণফুলি ঘোষণা বাস্তবায়ন পরিষদ কর্ণফুলিকে জাতীয় নদী ঘোষণার পক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর এসব কর্মসূচি। তারা বলেন, বাংলাদেশে জাতীয় ফুল আছে, ফল আছে, পাখী আছে, মাছ আছে, উদ্যান আছে কিন্তু কোন জাতীয় নদী নেই। অথচ নদীমাতৃক বাংলাদেশে জাতীয় নদী থাকা আবশ্যক। কর্ণফুলি জাতীয় নদী ঘোষিত হলে নদীর প্রতি মানুষের ভালবাসা বাড়বে এবং নদী দূষণ, দখল ইত্যাদি কমে যাবে। বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশের সব নদীই গুরুত্বপূর্ণ, তাই সব নদীকে সমান গুরুত্ব দিয়ে একটি নদীকে জাতীয় নদীর মর্যাদায় রাখা উচিত। পৃথিবীর অনেক দেশেই জাতীয় নদী আছে অথচ নদীমাতৃক বাংলাদেশে কোন জাতীয় নদী নেই। নদী ছোট নাকি বড় এটা মূল বিষয় নয় বরং মূল বিষয় হলো কোন নদীর ভৌগলিক অবস্থান, নদী কেন্দ্রীক জীবন-জীবিকা, বানিজ্যিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব কতটুকু । সেই প্রেক্ষিতে বলা যায়, নদী, পাহাড় ও সাগরের সমন্বয়ে গড়ে উঠা চট্টগ্রামের কর্ণফুলিই হতে পারে বাংলাদেশের জাতীয় নদী। বক্তারা বলেন, উন্নয়নের যুগান্তকারী পদক্ষেপে নদীর নীচে বাংলাদেশের প্রথম টানেল বঙ্গবন্ধু টানেল হওয়ায় কর্ণফুলি নদীর গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। একদিকে কর্ণফুলী নদীর তীরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লাইফলাইন চট্টগ্রাম বন্দর, অন্যদিকে যোগাযোগ উন্নয়নের বড় মাইলফলক বঙ্গবন্ধু টানেল কর্ণফুলি নদীকে দিয়েছে অনন্য মাত্রা। দিয়েছে স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট কানেক্টিভিটির পরিচয়। তাছাড়া কর্ণফুলি নদী কেন্দ্রীক বহুমাত্রিক জীবন জীবিকা, সমতলের বাঙ্গালী ও প্রায় ১৫টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এনে দিয়েছে শান্তি, সম্প্রীতির অপরূপ মেলবন্ধনের বিনি সুতার মালা, যা অন্য কোন নদীর তীরে দেখা যায় না। তাছাড়া কর্ণফুলির শাখা নদী হালদা হলো এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র, যা পেয়েছে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজের মর্যাদা। কর্ণফুলি নদীর তীরে অবস্থিত বাংলাদেশের বানিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, কর্ণফুলির দুই তীরে আছে গুরুত্বপূর্ণ সব সামরিক – বেসামরিক অবকাঠামো ও স্থাপনা, আছে ইপিজেড, তেলের ডিপো, সিমেন্ট, সার, কাগজ সহ বানিজ্যিক ভারী শিল্প কলকারখানা। কর্ণফুলির দক্ষিণ তীরে গড়ে উঠছে আরেক নতুন শহর যা ওয়ান সিটি টু টাউনের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করছে। কর্ণফুলির নদীর দুই পাড়ে সমতল ও সবুজ পাহাড়ী উপত্যকা জুড়ে বিশাল পর্যটন সম্ভাবনা দেশে বিদেশের বিনিয়োগকারীদের যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কর্ণফুলি নদীর রয়েছে ঐতিহাসিক গুরুত্ব। মহান মুক্তিযুদ্ধে কর্ণফুলি নদী হয়ে উঠেছিল অগ্নী নদী। দুনিয়া কাঁপানো নৌকমান্ডো গেরিলা অপারেশন অপারেশন জ্যাকপট সংগঠিত হয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরে, যা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে কাঁপন ধরিয়ে পর্যদুস্ত করে তুলেছিল। তাই ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, পর্যটন সবকিছু মিলিয়ে কর্ণফুলিই হতে পারে বাংলাদেশের জাতীয় নদী। তাইতো বলা হয়, বাংলাদেশের রংতুলি, জাতীয় নদী কর্ণফুলি।
প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর লক্ষ্যে জাতীয় নদী কর্ণফুলি ঘোষণা বাস্তবায়ন পরিষদের বিভিন্ন কর্মসূচি
সংবাদটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন
একটি মন্তব্য করুন