মাঠে প্রবেশ করে প্রেসবক্স খুঁজতে খুঁজতেই ৩০ মিনিট পার। প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটেই সেখানে পৌঁছাতে হলো। এরইমধ্যে আকাশে উড়ছে একের পর এক ফাইটার বিমান। গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে তা দেখতে দেখতেই বিস্ময়ের ঘোর কাটানোই যেন কঠিন। হ্যাঁ, বলছিল নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের কথা, যা কিনা এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট মাঠ বলেই পরিচিত। আহমেদাবাদ শহরের মোতেরা এলাকাতেই এই স্টেডিয়াম। যার বিশালতায় চলছে ওয়ানডে ক্রিকেটের মহাযুদ্ধের প্রস্তুতি। এখান থেকে চলতি আসরের পর্দা উঠেছিলো কাল এখনেই তা নামবে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ফাইনালের মধ্যদিয়ে। নিজ দেশের মাটিতে আয়োজকদের তৃতীয় শিরোপা জয়ের হাতছানি। তাই ম্যাচের দু’দিন আগের সকাল থেকেই মোতেরাতে সমর্থকদের ভিড়।
ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া স্লোগানে মুখর গোটা এলাকা। গোটা ভারতে চলছে মার্চ টু আহমেদাবাদ স্লোগান। ১৩০ হাজার দর্শক উপস্থিত হবে এখানে। আর যারা টিকিট পায়নি তারা থাকবে স্টেডিয়াম এলাকাজুড়ে প্রতিক্ষায়। প্রতিক্ষা একটাই রোহিত শর্মার হাতে উঠবে স্বপ্নের সোনালী ট্রফি। কে জিতবে ১৩তম ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা! অস্ট্রেলিয়া নাকি ভারত? যে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে আর মাত্র একদিন পরই। যা দেখতে উপস্থিত থাকবেন গুজরাটের সন্তান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।
অস্ট্রেলিয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৫ বার শিরোপা ঘরে তুলেছে। অন্যদিকে ভারত দুইবার। প্রথমটি ১৯৮৩ তে আর সবশেষটি ছিল তাদের ঘরের মাঠে ২০১১। এবারো সুযোগ নিজেদের মাঠে স্বপ্ন জয়ে। তবে এত সহজ নয়। ফাইনাল বলে কথা। চলতি আসরে টানা ৯ ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি রোহিতরা। মুম্বইয়ে দারুণ এক জয় দিয়ে নিশ্চিত করে ফাইনাল। অন্যদিকে এই বিশ্বকাপে ধারণা করা হচ্ছিল ফাইনালে প্রথমবারের মতো দেখা যাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। কিন্তু ইতিহাসের চাকা আর ঘুরলো না। চোকার্স’ তকমাই থাকলো দক্ষিণ আফ্রিকার। মাত্র ২১২ রানের পুঁজি নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে বেঁধে ফেলা যাবে না, তা ক্রিকেটের অন্ধভক্ত না হয়েও বলে দেয়া যায়। কোনো অবিশ্বাস্য বা ম্যাজিকেল কিছু ঘটলো না কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে। দক্ষিণ আফ্রিকা মরিয়া লড়াই করেও পারলো না শেষমেশ। অস্ট্রেলিয়া তিন উইকেটে জিতে নিশ্চিত করে আরও একটি বিশ্বকাপ ফাইনাল। কাল নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা খেলবে ভারতের বিপক্ষে। বিশ্বকাপের ফাইনালে দুই দলের শেষ দেখা ২০০৩-এ। সেবার সৌরভ গাঙ্গুলীর ভারত খেলেছিল রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। ফাইনালে ভারত হেরেছিল ১২৫ রানে। এবার রোহিতদের সামনে সুযোগ মধুর প্রতিশোধ নেয়ার তাও ঘরের মাঠে।
গতকাল দুপুর ৩টায় ভারত দল চলে আসে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিতে। অবশ্য ঐচ্ছিক অনুশীলন থাকায় দলনেতা রোহিতের সঙ্গে ছিলেন মাত্র ৫ ক্রিকেটার। তাতে কি তাদের অভ্যর্থনা জানাতেই গোটা স্টেডিয়াম এলাকা হাজার হাজার ভক্তদের পাগলামি যা গুজরাট পুলিশকেও সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর ম্যাচের দিনের উত্তেজনা সামলাতে গতকাল থেকেই নেয়া হচ্ছে কঠিন প্রস্তুতি। প্রধানন্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন ভারতের দুই ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক কপিল দেব ও মহেন্দ্রর সিং ধোনি। আকাশে রং ছড়াবে ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের যুদ্ধ বিমান। যার মহড়া হয়ে গেছে গতকাল সকালে। এ ছাড়াও বলিউডের মহাতারকারাও হাজির হবেন মাঠে। এক কথায় ১ লাখ ৩০ হাজার দর্শকের নীল দুর্গে থাকবে তারার মেলাও। এমন দিনে গ্যালারি জুড়ে স্লোগান হতে পারে ‘বদলা বদলা’ যার বাংলা দাঁড়ায় প্রতিশোধ প্রতিশোধ। এই ফাইনালকে ভারতীয় সমর্থকরা অজিদের বিপক্ষে একরকম প্রতিশোধ হিসেবেও দেখছে। কারণ এই বিশ বছরে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে অনেক জল গড়ালেও তারা ভুলতে পারেনি ২০০৩-এ ফাইনাল ও ২০১৫ এর সেমিফাইনাল। দুটিতে ভারকে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
ভারতীয় ক্রিকেটের একাধিক সোনায় মোড়া মুহূর্ত মঞ্চস্থ হয়েছিল এই স্টেডিয়ামেই ১৯৮৭ এপ্রিলে ভারত সফররত ইমরান খানের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লিটল মাস্টার সুনীল গাভাস্কার টেস্ট ক্রিকেটে দশ হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়েছিলেন এই মাঠের গ্যালারিকে সাক্ষী রেখে। তার অনেক পরে গাভাস্কারের সার্থক উত্তরসূরি শচীন তেন্ডুলকার টেস্ট ক্রিকেটে তার প্রথম দ্বিশতরানের ইনিংসও খেলেছিলেন এই মাঠের বাইশ গজেই। এহেন মোতেরা স্টেডিয়ামের সঙ্গে ইতিহাস ও আবেগ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে। যে কারণে নরেন্দ্র মোদিতে আরও একটি স্বপ্নের জাল বুনছে গোটা ভারত।