স্বপ্নের ফাইনাল! কে জেতাবে ভারতকে? রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলির দুর্দান্ত ব্যাটিং নাকি মোহাম্মদ শামি, মোহাম্মদ সিরাজ ও জাসপ্রীত বুমরাহর গতি? যেভাবেই হোক ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা ফেরাতে হবে ভারতে। তাই ফাইনালের আগে সবচেয়ে আলোচনায় আহমেদাবাদ নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের উইকেট আর ইন্ডিয়ান পেস বোলিং উইনিট। বিশেষ করে শামি তো এখন প্রতিপক্ষের আতঙ্কের নাম! হবে না কেন, মাত্র ৬ ম্যাচে ২৩ উইকেট! শুধু কী তাই! সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শামি একাই নেন ৭ উইকেট। এবার অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের বাড়াচ্ছে হৃদকম্পন। তাইতো মহাযুদ্ধের আগে অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে ভাবতে হচ্ছে শামিকে নিয়ে। কোনো রাখঢাক না রেখেই স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন এই পেসারই তাদের চ্যালেঞ্জ। তবে তাকে কী! তারা যে কোনো কিছুতেই ভয় পান না। এমনকি অকপটেই বলে দিলেন লাখ দর্শককে চুপ করিয়ে দেয়ার কৌশলটাও জানেন তারা। যেহেতু ভারত পেসারদের ঘাড়ে চেপেই বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখছে তাই ফাইনালের আগে কামিন্সের শামিকে নিয়ে তাদের পরিকল্পনা ও চিন্তার কথা বলতেই হলো। তিনি বলেন, ‘ভারতের সব ক্রিকেটার প্রতি বিভাগেই দুরন্ত পারফর্ম করছে।
কিন্তু একজনের নাম বিশেষ করে বলতেই হয়। মোহাম্মদ শামি। টুর্নামেন্টের প্রথম থেকে ও খেলেনি। কিন্তু দারুণ পারফর্ম করছে। শামি বিশ্বমানের প্লেয়ার। তাই ও অজি টিমের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।’
তবে যে দেশ পাঁচবার বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছে তাদের নতুন যুগের প্রতিনিধি প্যাট কামিন্স যে কাউকে ভয় পাওয়ার নয়। শামিকে নিয়ে চিন্তার কথা জানালেও নিজ ব্যাটসম্যানদের কেন ছোট করবেন। নিজেদের শক্তির হুংকারটাও দিলেন তিনি। শামিই অস্ট্রেলিয়ার বড় চ্যালেঞ্জ বলার পাশাপাশি কামিন্স বলেন, ‘অজি টিমের ব্যাটাররা শামির বিরুদ্ধেও অনেক ম্যাচ খেলেছে। ফলে ওরা কিন্তু এই বোলারদের ওপর চাপ তৈরি করতেই পারে।’ শামি ছাড়া আর কোনো ক্রিকেটার কি ভাবাচ্ছে ক্যাঙ্গারুদের? এ প্রশ্নে কামিন্স বলেন, ‘পুরো টিমটাই অসাধারণ। ওরা ৫ বোলারকে প্রতি ম্যাচেই ১০ ওভার বল করাচ্ছে। ওদের স্পিনাররা মাঝের ওভারগুলোয় ভালো পারফর্ম করছে। কুলদীপ যাদব ও রবীন্দ্র জাদেজা অসাধারণ জায়গায় দলকে পৌঁছে দিচ্ছে। ভারতের প্রতি ম্যাচেই বোলারদের দাপট দেখা গিয়েছে।’ ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে ভারত যে এবারের বিশ্বকাপে অপ্রতিরোধ্য তা দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। এবার দেখার ফাইনালের মঞ্চে কী করে মেন ইন ব্লুরা। বোলিং শক্তি শুধু শামি নির্ভর! যদি তাই হতো এ পেসারকে বসিয়ে রাখা হতো না প্রথম ৪ ম্যাচে। হার্দিক পান্ডিয়া ইনিজুরিতে না পরলে তার সুযোগ কতটা হতো তাও নিয়ে প্রশ্ন ছিল।
ভারতের গতির আতঙ্ক এখানেই শেষ নয়। ভুলে গেলে হবে না ১০ ম্যাচে ১৮ উইকেট নেয়া জসপ্রিত বুমরাহর নাম। আর মোহাম্মদ সিরাজও কম কিসে! একই সমান ম্যাচ খেলে তার ঝুলিতে ১৩ শিকার। শামিকে এগিয়ে রাখা হচ্ছে তার গতির সঙ্গে কারুকাজের জন্য। আসরে তার তিনটি পাঁচ উইকেট! এই ফর্ম যে কোনও দলের জন্যই ভয়ের কারণ। আর ফাইনালের মতো ভয়াবহ চাপের ম্যাচে তাকে নিয়ে ভাবতে হবে আলদা করেই। অন্যদিকে শুধু ভারতের পেসাররাই যে ভয় তাও নয়। ২০১১ তে এই আহমেদাবাদে কোয়ার্টার ফাইনালে অজিরা হেরেছিল ইন্ডিয়ান স্পিনে নাস্তানাবুদ হয়ে।
অজি অধিনায়ক কামিন্স কিন্তু কুলদীপ যাদবের নামও ভোলেননি। ভারতের এই দুই স্পিনার কম কিসে। সমান ১০ ম্যাচ খেলে জাদেজা ১৬ আর কুলদীপ পকেটে পুড়েছেন ১৬ উইকেট। তারাও যে ম্যাচের ভাগ্য বদলে দিতে পারেন সেটি ভুললে হবে না। অন্যদিবে অস্ট্রেলিয়ার জন্য এবারের বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠাটা সহজ ছিল না, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু করেছিল তারা। এরপর টানা সাত ম্যাচ জিতে নক আউট পর্বে খেলা নিশ্চিত করেছে কামিন্সের দল। এবারের অজি স্কোয়াড নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয়েছিল, অ্যাডাম জাম্পা ছাড়া কোনো স্পেশালিস্ট স্পিনার ছিল না। কিন্তু সেই জাম্পাই কিনা আসরে এখন পর্যন্ত ২২ উইকেট নিয়ে রিয়েছেন সেরাদের দৌড়ে। তবে দ্বিতীয় স্পিনারের কাজটা ভালোভাবেই করেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল তার ৫ শিকারও কম নয়। আর গতির নেতৃত্্বতো দিচ্ছেন অধিনায়ক নিজেই। ঝুলিতে ভরেছেন ১৩ শিকার। তার অন্যম সৈনিক হ্যাজল উড নিয়েছেন ১৪ উইকেট। শাম, কুলদিপদের মত তারাও হতে পারেন ভারতীয় ব্যাটসম্যান বড় চ্যালেঞ্জ!