চট্টগ্রাম সাহিত্য পাঠচক্রের উদ্যোগে স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রস্তাবক, চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান, ষাটের দশকের মেধাবী ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ স্বপন চৌধুরীর ৫১ মৃত্যুবার্ষিকীর সভা গত ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা পরিষদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি বাবুল কান্তি দাশের সভাপতিত্বে এতে প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুস। প্রধান আলোচক নাজিরহাট পৌরসভার মেয়র লায়ন এ.কে.জাহেদ চৌধুরী। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আসিফ ইকবালের পরিচালনায় এতে আলোচনা, কবিতা আবৃত্তি ও সঙ্গীতে অংশ নেন রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ভানুরঞ্জণ চক্রবর্তী, রাঙ্গামাটিজেলার প্রবীণ আওয়ামীলীগনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা রহুল আমিন, রাজনীতিক স্বপন সেন, সাবেক ছাত্রনেতা রকিবুল ইসলাম, আবৃত্তিশিল্পী শাহীন ফেরদৌসী, সোমা মুৎসুদ্দী, শবনম ফেরদৌসী, সঙ্গীতশিল্পী অচিন্ত্য কুমার দাশ, সঙ্গীতা চৌধুরী, দক্ষিণজেলা যুবলীগনেতা এম. নুরুল হুদা চৌধুরী, কবি সজল দাশ, সাবিহা সুলতানা রক্সি, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রাকিব উদ্দীন, মোঃ মিনহাজ উদ্দীন সিদ্দিকী, নিলয় দে, মোঃ তিতাস, মোঃ ইকবাল প্রমুখ। সভায় প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন শহীদ স্বপন চৌধুরী চট্টগ্রাম শহরে মুক্তিকামী ছাত্র ও যুবকদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। একাত্তরের ২৮ মার্চ তৎকালীন রাইফেল ক্লাবের অস্ত্রাগার ভেঙ্গে তাদের মধ্যে অস্ত্র বণ্টন করেন। পরবর্তীতে তিনি রামগড় হয়ে ভারতের আগরতলায় হরিনা ক্যাম্পে উচ্চতর ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিবাহিনীকে সংগঠিত করেন। তিনি বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে গিয়ে ছাত্র ও যুবক সম্প্রদায়কে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে আগরতলায় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর উপস্থিতিতে মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দীন আহমদ, মুক্তি বাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল এমএজি ওসমানী, মুজিব বাহিনীর প্রধান শেখ ফজলুল হক মনি ও সিরাজুল আলম খান সহ ভারতীয় মিত্র বাহিনীর এক যৌথ বৈঠকে শহীদ স্বপন চৌধুরী তার বক্তৃতায় গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করার রূপরেখা তুলে ধরেন। পরবর্তীতে বিএলএফ আঞ্চলিক কমান্ডার নিযুক্ত হয়ে তিনি অক্টোবরে অধিকৃত বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং বিভিন্ন গেরিলা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। তিনি তার দল সহ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কাউখালীতে টানা দুইদিন পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধের এক পর্যায়ে ৩০ নভেম্বর আরো ৩ জন নেতৃস্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ আহত অবস্থায় ধরা পড়েন। পাক বাহিনী তাকে তাদের রাঙ্গামাটি সদর দপ্তরে নিয়ে গিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের অল্প কিছুদিন আগে পাকবাহিনী মুক্তিযুদ্ধের এই মহান যোদ্ধাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে এবং লাশ গুম করে ফেলে।