সামশুল হক চৌধুরী পটিয়ায় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, জনবিচ্ছিন্ন নানা অপকর্মের হোতা স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী নিজের এবং স্বজনদের অপকর্মের কারণে এখন জনগণের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছেন, তাই তিনি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নানা অপপ্রচার শুরু করেছেন।
তারই ধারাবাহিকতায় গত দুইদিন ধরে আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি মনে করি, বিচ্ছিন্ন কিছু হলেও তা হচ্ছে, ক্ষুব্ধ জনতার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
বিশেষ করে হাবিলাসদ্বীপ, পটিয়া বাইপাস, জিরির বাকখাইন, কাশিয়াইশের বুধপুরা বাজারে সংঘটিত ঘটনাগুলো ঘটেছে মূলত ১২০০ কোটি টাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল খনন প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্তু মানুষের ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাতের ক্ষোভ। এ প্রকল্পের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থী অনেক মানুষকে পথে বসিয়েছেন। রাতারাতি মানুষের চাষের জমি, বসত ভিটা গ্রাস করেছেন। এসব নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয়েছে। এছাড়া তার ভাই নবাব, মহব্বতসহ আত্মীয় স্বজনরা সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে তাদের মাধ্যমে ভূমিদস্যুতা এবং অবৈধ বালি মহালের কারবার চালিয়েছে। শুধু তাই নয়, সরকারের প্রতিটি উন্নয়ন কাজে কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে বিপুল অর্থ লোপাট করেছে। তার সাঙ্গপাঙ্গদের লুটপাটের কথোপকথন ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। মোটকথা বিগত ১৫ বছরে পটিয়াকে পিছিয়ে দিয়েছেন এই ডিগবাজ। যিনি এখন আওয়ামী লীগ তথা জাতির পিতার নৌকার বিরুদ্ধে হুংকার ছুড়ছেন, ষড়যন্ত্র করছেন।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে পটিয়া কমিউনিটি সেন্টার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, গত ১৯ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব ও আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবির বিন আনোয়ার পটিয়া সফর করে গেছেন। তিনিও বীর পটিয়াবাসীকে বলে গেছেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটিয়ার মানুষের মনে কথা বুঝতে পেরে প্রার্থী পরিবর্তন করেছেন। এবার আপনাদের দায়িত্ব মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে বিজয়ী করা। এবার পরীক্ষা দেওয়ার পালা। এখন আপনাদেরই প্রমাণ করতে হবে নৌকা বিজয়ী হবে নাকি দূর্বৃত্তায়ন বিজয়ী হবে। নৌকা বিজয়ী হবে নাকি ইয়াবা ব্যবসায়ী বিজয়ী হবে। নৌকা বিজয়ী হবে নাকি সন্ত্রাস, মাদকের হোতা বিজয়ী হবে’।
মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়েছেন কোনো প্রটোকল ব্যবহার না করে। তার বিপরীতে পটিয়ার স্বতন্ত্র প্রার্থী হুইপের পূর্ণ প্রটোকলে, ভিভিআইপি প্রটেকশনে পটিয়া আদালতে সশরীরে হাজিরা দিতে যান। থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন তাকে বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে তার সাথে গোপন বৈঠক করেন। এসব নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিলে ওসিকে বদলির আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু বদলি আদেশের ১০ দিন অতিবাহিবাহিত হলেও এই ওসিকে বদলি করা হয়নি। আমার কর্মীরা আমাকে জানিয়েছেন, ওসি নেজাম উদ্দিন বিভিন্নভাবে আমার কর্মীদের হুমকি দিচ্ছেন। রাতে তাদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। আমি আপনাদের মাধ্যমে অতিদ্রুত ওসি নেজাম উদ্দিনের বদলির আদেশ কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, সামশুল হক চৌধুরী তার ১৫ বছর ধরে করা নানা অপকর্মের কারণে যেখানে যাচ্ছেন সেখানে জনরোষের শিকার হচ্ছেন। বিভিন্ন প্রকল্পে জনগণকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ না দিয়ে তাদের অর্থ আত্মসাৎ করায় সাধারণ মানুষ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বিষয়টা তিনি বুঝতে পেরে কৌশলে নিজের লোকদের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষতি করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন।
অপকর্মের কারণে তিনি জনরোষের শিকার হলেও ওসির সাথে মিলে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছেন। অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনে ওসি নেজাম উদ্দীন ও তার বশংবদ অফিসাররা বাধা হতে পারে। ইসিতে অভিযোগ দেয়ার ১০ দিন পার হলেও ওসি নেজামউদ্দীন স্বপদে বহাল থাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন এবং নেতাকর্মীদের বাড়ি ঘরে গিয়ে নানা রকম হুমকি দিচ্ছেন।
এজন্য সংবাদ সম্মেলন থেকে ওসি নেজাম উদ্দীনকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে অব্যাহতি দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য চেমন আরা তৈয়ব, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আইয়ুব আলী, যুগ্ম সম্পাদক প্রদীপ দাশ, পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জামান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক হারুনুর রশীদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরী, পটিয়া উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. তিমির বরণ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মোহাম্মদ ফারুক, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম আবদুল মতিন চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আবু তৈয়ব, বীর মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী মাহবুবুর রহমান, মেয়র আইয়ুব বাবুল, আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদ মনোয়ার, মোজাহেরুল আলম চৌধুরী, ঋষি বিশ্বাস, নাছির উদ্দিন, আলমগীর আলম, এম এন এ নাছির, আবুল কালাম আজাদ, গোলাম সারোয়ার চৌধুরী মুরাদ, মোজাম্মেল হক রাজধন, মর্তুজা কামাল মুন্সি, জেলা যুবলীগের সদস্য আবদুল হান্নান লিটন, রাজু দাশ হিরু, নুর আলম সিদ্দিকী, রফিকুল আলম, শহিদুল আলী মঞ্জু, জহির উদ্দিন প্রমুখ।