দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এবারের নির্বাচনে কেউ বলতে পারবে না যে, রাতে ভোট দিয়েছে, দিনের ভোট রাতে দিয়েছে, ভোট কারচুপি হয়েছে, এসব বলার কোনো সুযোগ নেই। গতকাল বিকালে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে এক জনসভায় প্রধান অতিথির
ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এ জনসভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা বলেন, আইন করে সম্পূর্ণ স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছি। সেই নির্বাচন কমিশনকে আমরা নির্বাচন পরিচালনা করতে দিয়েছি। কোনো রকম হস্তক্ষেপ আমরা করিনি, সহযোগিতা করেছি। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, প্রশাসন থেকে শুরু করে সবকিছুই নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত ছিল। যেন নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়। আমরা কখনো হস্তক্ষেপ করিনি। তিনি বলেন, অনেকেই নির্বাচন বন্ধ করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে।
নির্বাচনে মানুষ যাতে ভোট দিতে না আসে সেটা করার চেষ্টা করেছে। তারপরও ৪১ দশমিক ৮ ভাগ ভোট পড়েছে। এটা সোজা কথা নয়! খুবই বড় কথা। আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সমমনা দল যখন নির্বাচন করেছে আরেকটি দল তখন নির্বাচন ব্যাহত করার চেষ্টা করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আমরা দারিদ্র্যের হার কমিয়ে এনেছি। চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যে কাজ করে যাচ্ছি তার সুফল এ দেশের মানুষ পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের ক্ষমতায় আসা অনেক কঠিন কাজ ছিল। কারণ বারবার ষড়যন্ত্রের মুখে পড়তে হয়েছে আমাদের।
তিনি বলেন, আজকে অবাক লাগে যখন মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল তখন সেই নির্বাচন নিয়ে যারা কথা বলতো না আজকে যখন আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি তখনই আমাদের গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন। তখন নির্বাচন মানে ছিল ১০টা হোন্ডা, ২০টা গুণ্ডা, নির্বাচন ঠাণ্ডা। আজকে আর সেই অবস্থা নেই। জনগণের ভোটের অধিকার আমরা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি। গণতন্ত্রকে সুসংহত করেছি। দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলে আজকে এ দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে। দারিদ্র্যের হার কমেছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। সাক্ষরতার হার বেড়েছে। সবদিক থেকে যখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সারা বিশ্ব যখন বলে- বাংলাদেশ উন্নয়নের রোলমডেল তখন আমাদের দেশের ভেতরে কিছু শ্রেণি ও কিছু বাইরের লোক তাদের কাছে কিছুই ভালো লাগে না। মনে হয় যেন একটা অগণতান্ত্রিক সরকার এলেই তারা খুশি। তিনি বলেন, আমি জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই, সকল বাধা-বিঘ্ন উপেক্ষা করে হরতাল-অবরোধ, গাড়ি পোড়ানো, পুলিশকে হত্যা করা, ট্রেনে আগুন দেয়া, ট্রেনের লাইন কেটে ফেলা, বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানোর চেষ্টাসহ নানা কিছু করেছে। লিফলেট দিয়ে ভোট দানে মানুষকে বিরত রাখতে চেয়েছে। আমরা বাধা দেইনি। কিন্তু দেশের মানুষ ভোট দিয়ে আমাদের সমর্থন জুগিয়েছে। শত বাধা, ভয়ভীতি অগ্নিসংযোগ উপেক্ষা করে তারা আমাদের নির্বাচিত করেছে এবং নিজের ভোট নিজে দিয়েছে। গ্রামেগঞ্জেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ ভোট দিয়েছে। মহিলা ভোটাররা ছুটে এসে ভোট দিয়েছে। এ দেশের মানুষের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে যে বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। শিক্ষা-দীক্ষায় সবক্ষেত্রে স্মার্ট হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। উন্নত সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ অবশ্যই আমরা গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ্। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। কাজেই মানুষের শক্তিই বড় শক্তি আরেকবার প্রমাণ হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে না এলে এ দেশ এগুতে পারতো না। ৭ই জানুয়ারি নির্বাচনের পর আজ (গতকাল) আমরা শপথ গ্রহণ করেছি। এরপর আমাদের দলীয় সভায় আমাকে সংসদ নেতা হিসেবে নির্বাচিত করেছে তাই আমি সংসদ নেতাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা সরকার গঠন করবো। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী বেঈমানি করেছিলেন। অবৈধভাবে যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় বসেছে… ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে কিছু দল সৃষ্টি করে, আর কিছু এলিট শ্রেণি তৈরি করে, যার ওপর নির্ভর করে ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার চেষ্টা করে। এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী… যদিও ৭৫-এর পরে আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী বেঈমানি করে। বেশির ভাগ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করানো হয়। তারা মুক্তি পেয়ে দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, একদিকে খুনি, আরেকদিকে যুদ্ধাপরাধী, তারাই ক্ষমতায়। সেই অবস্থায় আমি দেশে ফিরে আসি। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করার প্রত্যয় নিয়ে ফিরে আসি। দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করা যে স্বপ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন- তা বাস্তবায়ন করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা।
জনভায় আরও বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, এড. কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ।


