সুনামগঞ্জে নৌকা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঈগল সমর্থিত সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের প্রায় শতাধিক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে নারী-পুরুষসহ ৩০জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুরুতর ৩৩ জনকে সিলেট এবং সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে দোয়ারাবাজারের পূর্ব-মাছিমপুর ও নৈনগাঁও গ্রামবাসীর লোকজনের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পুলিশ বলছে পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে। ফের সংঘর্ষের আশঙ্কায় ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গত ৭ই জানুয়ারি নির্বাচনের দিন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মহিবুর রহমান মানিক (নৌকা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম আহমদ চৌধুরী (ঈগল) প্রার্থীর সমর্থিত পূর্ব-মাছিমপুর ও পশ্চিম মাছিমপুরবাসীর লোকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের জেরে গত দু’দিন ধরে উপজেলা সদরে দু’পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। মঙ্গলবার রাতে পূর্ব-মাছিমপুর গ্রামের আমরু মিয়ার ছেলে ঈগল মার্কার সমর্থক শামীম আহমদের সঙ্গে পাশের নৈনগাঁও গ্রামের নৌকার সমর্থক আবুল হোসেনের কথাকাটাকাটি হয়। এর জের ধরে আবুল হোসেনের সমর্থকরা শামীম আহমদের পূর্ব-মাছিমপুরের বাড়িতে ইটপাটকেল ছুড়ে।
পরে পুলিশ রাতে পরিস্থিতি শান্ত করে দু’পক্ষকে সরিয়ে দেয়।
বুধবার সকালে আবুল হোসেনের দোয়ারাবাজারের বাসভবনে এসে শামীম আহমদের লোকজন হামলা চালায়। এই ঘটনায় নৈনগাঁও গ্রামের লোকজন আবুল হোসেনের পক্ষে দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে উপজেলা সদরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয়পক্ষের প্রায় শতাধিক আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ৩৩ জনকে সিলেট এবং সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন- জাবেদ মিয়া (২৫), জুয়েল মিয়া (২৮), রুস্তম আলী (৬০), আব্দুছ সাত্তার (৪৫), সেলিম (৪৫), সুজন মিয়া (২৬), আলী নুর (২০), আক্তার হোসেন (৩২), রোয়াব আলী (৩০), ছদরুল ইসলাম (৪০), জিয়াউল (২৫), গিয়াস উদ্দিন (৩৫), ধনাই মিয়া (৫০) প্রমুখ।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু সালেহীন খান জানান, উভয়পক্ষের ৩৩ জনকে সিলেট এবং সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল মিয়া বলেন, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আমার বাসার সামনে গেলে পূর্ব-মাছিমপুর গ্রামের আমরু মিয়া দুই পুত্রসহ আগে থেকে ওঁৎপেতে থাকা ঈগল প্রতীকের ২৫-৩০ জন সমর্থক অতর্কিতভাবে আমার উপর হামলা চালায়। শামীম আমাকে লক্ষ্য করে তার হাতে থাকা পিস্তল থেকে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে। এ সময় আমার মোবাইল, পকেটে থাকা নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। আমাকে বাঁচাতে এলে আমার চাচা সাংবাদিক আশিক মিয়াকেও পেছন দিক থেকে হামলা চালিয়ে মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত করে। পরে পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি বদরুল হাসান বলেন, আমি সাক্ষ্য দিতে সুনামগঞ্জ কোর্টে এসেছি। শুনেছি দু’পক্ষের মধ্যে সংর্ঘষ হয়েছে। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ রাবার বুলেট ছুঁড়েছে। এএসপি (ছাতক-দোয়ারাবাজার সার্কেল) রণজয় চন্দ্র মল্লিক বলেন, দু’পক্ষের মধ্যে আগে থেকেই উত্তেজনা চলছিল। বুধবার সকালে জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল খালেকের পুত্র আবুল মিয়া তার বাসার সামনে গেলে আগে থেকে ওঁৎপেতে থাকা পূর্ব-মাছিমপুর গ্রামের আমরু মিয়ার পুত্ররাসহ কয়েকজন তার ওপর অতর্কিত আক্রমণ করে মারপিট করে। এ ঘটনায় দু’পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ ছত্রভঙ্গ করতে ১০৪ রাউন্ড শর্ট গান ছুঁড়ে। এ সময় ৩ টি রামদা, ১টি পরিত্যক্ত পিস্তলের গুলি ও বাঁশের লাটিসোঁটা উদ্ধার করা করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।


