রংপুর রাইডার্স শেষ ৩ ওভারে তুললো ৫২ রান। আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের শেষ ৩ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৫০ রান। রংপুর পারলেও পারেনি কুমিল্লা। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারের ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেয় এই শেষের ৩ ওভার। যেখানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রংপুর রাইডার্স।
গতকাল চলতি বিপিএলের ১৫তম ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ৮ রানে হারায় রংপুর রাইডার্স। সিলেটে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে ১৬৫ রান করে রংপুর। জবাবে ১৫৭ রানে থামে কুমিল্লার ইনিংস। ব্যাট হাতে ৩৬ রান করার পর বল হাতে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। এবারের আসরে দ্বিতীয়বার ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতলেন রংপুরের এ আফগান অলরাউন্ডার । এদিন রান তাড়ার শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় কুমিল্লা।
ইনিংসের তৃতীয় বলে ওমারজাইয়ের ডেলিভারি উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হন অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। চলতি আসরে ৪ ম্যাচ সাকুল্যে ৩৫ রান শোভা পাচ্ছে দেশের অন্যতম সেরা এ ব্যাটারের নামের পাশে।
এরপর পাওয়ার প্লের সুবিধাও কাজে লাগাতে পারেনি কুমিল্লা। ৬ ওভারে ওঠে কেবল ৩৬ রান। রানের জন্য হাঁসফাঁস করা পাকিস্তানি ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান ক আউট হন আফগান অফস্পিনার মোহাম্মদ নবীকে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে। ২১ বলে ১৭ রান থামে রিজওয়ানের ইনিংস। এরপর একপাশ আগলে রেখে কুমিল্লাকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। পাওয়ার প্লের দুই ছক্কার পর সাকিবকে হাঁকান আরেকটি ছক্কা। কিন্তু স্ট্রাইক রোটেট করতে যথেষ্ট হিমশিম খাচ্ছিলেন এই ডানহাতি ব্যাটার। ফিফটি পূর্ণ করতে তিনি খেলেন ৪২ বল। ৪০ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথম ফিফটি তার। এরপর ১৩ রান করেন ১৩ বল করে হাসান মাহমুদকে স্লগ করতে গিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। চারটি চার ও তিন ছক্কার পরও ৬৩ রান করতে ৫৫ বল খেলেন তিনি। এরপর তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটে কিছুটা গতি পায় কুমিল্লার স্কোরবোর্ডে। উইকেটে গিয়ে শেখ মেহেদি হাসানকে টানা দুই বলে বাউন্ডারির পর একটি ছক্কা হাঁকান তিনি। তবে প্রয়োজনীয় রান রেটের ব্যবধান ঠিকই বেড়ে যাচ্ছিল। শেষ ৩ ওভারে জয়ের জন্য কুমিল্লার প্রয়োজন ছিল ৪৬ রানের। ১৮তম ওভারে ২ ছক্কা আশা জাগিয়ে আউট হন খুশদিল শাহ। শেষ ওভারে জাকের আলীর ৪ বলে ১৮ রানে কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে কুমিল্লার।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা রংপুরের ব্রেন্ডন কিং শুরুতে ঝড়ের ইঙ্গিত দিলেও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। আলিস আল ইসলামকে বাউন্ডারির পর বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলামকে হাঁকান ছক্কা। তবে তৃতীয় ওভারে সেই তানভিরকে আরেকটি বড় শটের চেষ্টায়ই স্টাম্পড হয়ে যান তিনি।
অন্যপ্রান্তে কুমিল্লার মিস্ট্রি স্পিনার আলিসের বিপক্ষে অস্বস্তিতে ছিলেন বাবর আজম। ৪ ওভার শেষে তার রান ছিল ১০ বলে ৫। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আলিসকে ছক্কা হাঁকান ফজলে মাহমুহ রাব্বি। এরপর ওই ওভারেই টানা দুই বলে চার ও ছক্বা মেরে অস্বস্তি কাটান বাবরও। প্রথম ২ ওভারে ৮ রান দেওয়া আলিসের ওই ওভার থেকেই আসে ১৯ রান। তবে এরপরও রানের গতি বাড়াতে পারেননি বাবর। স্বদেশি আমের জামাল ও খুশদিল শাহর বোলিংয়ে টানা ৭ বল ডট দেন তিনি। ফলে ১০ ওভারে স্রেফ ১ উইকেট গেলেও রংপুরের স্কোরবোর্ডে জমা হয় মাত্র ৬৯ রান। খুশদিলের আর্ম বলে বোল্ড হওয়ার আগে বাবর করেন ৩৬ বলে ৩৭ রান। গতকালই চলতি আসরে প্রথম মাঠে নামা রাব্বি দারুণভাবে এগোতে থাকলেও কাটা পড়েন মোস্তাফিজকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে। ৩০ রান করেন ২০ বলে। চারে নামা শামীম হোসেন ১৮ বলে ১৪ রানে যখন আউট হন তখনও বড় সংগ্রহ থেকে অনেক দূরে রংপুর। তবে এরপর আজমাতউল্লাহ ওমারজাইয়ের কার্যকরী ক্যামিওতে দেড়শো ছাড়ানো সংগ্রহ পায় তারা। মুস্তাফিজকে দুই ছক্কা ও এক চার হাঁকান আফগান এই অলরাউন্ডার। অবশ্য দ্বিতীয় ছক্কাটি ক্যাচও হতে পারতো। কিন্তু লং অফে বল মুঠোয় জমাতে গিয়ে ছক্কা বানিয়ে দেন কানভির। পরের ওভারের রেমন রিফারকে টানা দুই বলে ছক্কা ও চার মারেন আরেক আফগান ব্যাটার মোহাম্মদ নবি। শেষ ৩ ওভারে রংপুর তোলে ৫২ রান। যেখানে মুস্তাফিজের ২ ওভার থেকেই আসে ৩৯ রান। ৭ বলে ১৩ রান করেন নবি। ২০ বলে ৩৬ রানে অপরাজিত থাকেন ওমারজাই। আর সোহান খেলেন ৬ বলে ১৫ রানের ক্যামিও। আগের ম্যাচে ব্যাটিং অর্ডারে ১১ নম্বরে থাকা সাকিব আল হাসান গতকালও ব্যাটিংয়ে নামেননি।