রমজান সামনে রেখে আমদানিতে প্রধানমন্ত্রীর শুল্কহার কমানোর ঘোষণাতেই নাগালে আসতে শুরু করেছে দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার। নতুন শুল্কহার কার্যকর হলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার শঙ্কায় মিল মালিকরাও আটকে রাখা পণ্য ছেড়ে দিচ্ছেন দ্রুত। এতে মাত্র একদিনের ব্যবধানে ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলার দাম মণপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে।
গত এক বছরে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের বুকিং রেট কয়েক দফা কমলেও দেশের বাজারে তা কমানো হয়নি। কিন্তু আমদানি করা ভোজ্যপণ্যের শুল্কহার কমাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক ঘোষণাতেই ধস নামতে শুরু করেছে তেলের বাজারে।
সোমবার বিকেলেই এক লাফে প্রতিমণে ৫০ টাকা, একইভাবে আরো ৫০ টাকা কমেছে মঙ্গলবার। ৫ শতাংশ শুল্কহার কমলে ১৮০ এবং ১০ শতাংশ কমলে অন্তত ৪০০ টাকা কমাতে হবে। তাই ভোজ্যতেলের মিল মালিকেরা এতোদিনের মজুত আগেই ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
বর্তমানে ভোজ্যতেলের বুকিং রেট (প্রতি মেট্রিক টন) সয়াবিন ৯১৫ মার্কিন ডলার এবং পাম অয়েল ৯০৫ মার্কিন ডলার।
একইভাবে ছোলার কোনো শুল্কহার না থাকলেও এতোদিন ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়েছিলেন আমদানিকারকরা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ছোলা আমদানির হার বাড়তে থাকায় দামও কমছে। গত এক সপ্তাহে ৯৪ টাকার অস্ট্রেলিয়ান ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮৯ টাকায়। আর সাধারণ মানের ছোলা নেমে এসেছে ৮০ টাকায়।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মেসার্স এফ এম ট্রেডার্স এর মালিক মো. মহিউদ্দিন জানান, রমজানের চাহিদা এখনও শুরু হয়নি। এর মধ্যে সরবরাহ বাড়ার কারণে চাহিদার কোন সংকট নেই। ফলে দাম কমেছে।
তেলের মতো পরিস্থিতি চিনির পাইকারি বাজারেও। এখানে মজুদ করা চিনি মিল মালিকেরা ছাড়লেও কাঙ্ক্ষিত দামে ক্রেতা পাচ্ছেন না। যে কারণে প্রতি ঘণ্টায় মণপ্রতি দাম কমছে ৫ থেকে ১০ টাকা। বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩২ টাকা দরে।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স এ এম এন্টারপ্রাইজ এর মালিক মাহমুদুল হক লিটন বলেন, যে পরিমাণ মাল আসছে তা কম দামেই পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাবে। এখন শুল্ক কমিয়ে দিলে মণে আরও ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত কমার সম্ভাবনা আছে।
তবে দাম কমে যাওয়ার শংকায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খেজুর ছাড় করছেন না আমদানিকারকরা। যে কারণে দাম এর নিয়ন্ত্রণে আসছে না। অবশ্য আমদানি করা খেজুর দ্রুত বাজারে আসলে দাম কমার সম্ভাবনার কথা বলছেন পাইকারি ব্যবসায়ী মেসার্স তুহিন এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ মাসুদ।
তিনি বলেন, সরকার তার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন এটা রাজস্ব বোর্ডে কার্যকর হলে দাম অবশ্যই কিছুটা কমবে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর পরই ভোগ্যপণ্যের শুল্কহার কমানোর কাজ শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। আর এনবিআর-এর নির্দেশনা পেলেই নতুন পদ্ধতিতে শুল্কায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সি।