দিনে প্রায় অধিকাংশ সময়ই আমরা কোনো না কোনো কারণে স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকি। যোগাযোগের মাধ্যম ছাড়াও নানা কারণে আমরা ডিভাইসটি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু অনেক সময়েই আমাদের অজান্তেই হাতের স্মার্টফোনটি ম্যালওয়্যার বা ভাইরাসের সংস্পর্শে আসে। যা কারণ হয়ে উঠে ভোগান্তির।
যদিও কম্পিউটার ভাইরাসের তুলনায় মোবাইলে ভাইরাসের উপস্থিতির কথা তেমন একটা শুনা যায় না। তাছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে এই অস্তিত্ব থাকা নিয়েও রয়েছে দীর্ঘদিনের বিতর্ক। তবে আপনার স্মার্ট ফোনটির ম্যালওয়্যারের শিকার হওয়ার ঝুঁকি কিন্তু কম নয়। নানা কারণেই স্মার্টফোন ভাইরাসের সংস্পর্শে আসতে পারে। অবশ্য ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেমের (ওএএস) কারণে আইফোনের তুলনায় অ্যান্ড্রয়েড ফোন ম্যালওয়্যারের সংস্পর্শে বেশি আসে।
মোবাইল ফোনে ভাইরাস আছে কি না বুঝবেন কীভাবে?
আমাদের নিজস্ব কিছু ভুলের কারণেই ভাইরাস ডিভাইসে প্রবেশ করে। সাধারণত থার্ড পার্টি ওয়েবসাইট, অ্যাপ বা অদ্ভুত ইমেইল এবং খুদে বার্তার মাধ্যমে আপনার স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার অজান্তে প্রবেশ করতে পারে। এমনটা হলে অবশ্য আপনি কিছুটা হলেও আঁচ পাবেন। যেমন ধরেন, আপনার স্মার্টফোনের কর্মক্ষমতা কমে যাবে বা অতি মাত্রায় ডেটা খরচ হবে। তবে মাঝে মাঝে ত্রুটিপূর্ণ হার্ডওয়্যার বা বাগ থাকার কারণেও এমনটা হয়ে থাকে। কাজেই দিনশেষে এটি বোঝা মুশকিল ঠিক আপনার ফোনে ভাইরাস আছে কি না।
তবে সাধারণভাবে স্মার্টফোনে ভাইরাস প্রবেশ করলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন- ঘন ঘন অ্যাপ ক্র্যাশ করা, অতিমাত্রায় ডেটা খরচ হওয়া, বেশি বেশি স্প্যাম বার্তা আসা, দ্রুত চার্জ ফুরিয়ে যাওয়া, ডিভাইস গরম হয়ে যাওয়া, অতিমাত্রায় বিজ্ঞাপন পপ আপ হওয়া, বার বার গুগল অ্যাকাউন্ট থেকে লগ আউট হয়ে যাওয়া এবং ফোনে অজান্তেই অদ্ভুত কিছু অ্যাপ ইনস্টল হয়ে যাওয়া।
কাজেই সাবধানে স্মার্টফোন ব্যবহার হতে হবে। কেননা, আপনার হাতের মুঠোফোনটিই রয়েছে আপনার জরুরি অনেক তথ্যাদি। তা সত্ত্বেও যদি কোনো কারণে আপনার ফোন ম্যালওয়্যার বা ভাইরাসের সংস্পর্শে আসে, তাহলে সেটি কীভাবে কিছু কার্যকর পদ্ধতি ব্যবহার করে অপসারণ করবে, সেটি নিয়েই সাজানো হয়েছে এই প্রতিবেদন।
ক্যাশ ক্লিয়ার করুন
যেহেতু ম্যালওয়্যার প্রায়শই আপনার ওয়েব ব্রাউজারকে আক্রমণ করে থাকে, কাজেই এক্ষেত্রে আপনার প্রথম যে কাজটি করতে হবে সেটি হচ্ছে ওয়েব ব্রাউজারের ক্যাশ পরিস্কার করতে হবে। এটি ফোনের মেমরিতে থাকা ম্যালওয়্যার নির্মূল করতে পারে। যদিও ব্রান্ডভেদে ক্যাশ ক্লিয়ার করার পদ্ধতিতে কিছুটা পার্থক্য থাকতে পারে, তবে নিচের পদ্ধতিটি ব্যবহার করে আপনি আপনার ফোনের ক্যাশ সেটিংস খুঁজে পাবেন।
প্রথমেই সেটিংস অ্যাপে প্রবেশ করে অ্যাপস অপশনটিতে ক্লিক করুন। অ্যাপ লিস্টে গিয়ে গুগল ক্রোমে ক্লিক করুন। এরপর স্টোরেজ অ্যান্ড ক্যাশে গিয়ে ক্লিয়ার ক্যাশে ক্লিক করুন। ম্যানেজ স্পেসে ক্লিক করে ক্লিয়ার অল ডেটাতে ক্লিক করুন।
গুগল প্লে প্রোটেক্ট চালু করুন
প্লে প্রোটেক্ট হলো গুগলের বিনামূল্যের অ্যান্টি-ম্যালওয়ার অ্যাপ, যা আপনার ফোনে ম্যালওয়্যারের উপস্থিতি এবং থার্ড পার্টি অ্যাপ থেকে স্মার্টফোনে প্রবেশ করা ম্যালওয়্যার খুঁজে বের করে। আপনি যেখান থেকেই অ্যাপ ডাউনলোডই করে থাকুন না কেন গুগল প্লে প্রোটেক্ট আপনার ইনস্টল করা প্রতিটি অ্যাপ স্ক্যান করে। পাশাপাশি নিয়মিতভাবে এটি ফোনের সিকিউরিটি চেক করে। ফলে প্রায় সময়ই কোনো অ্যাপ সন্দেহজনক বলে চিহ্নিত হলে সেটি আনইসস্টল করার জন্য গুগল প্লে প্রোটেক্ট ব্যবহারকারীকে অবহিত করে বা অনেক সময় ওই অ্যাপ স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মুঠোফোন থেকে সরিয়ে দেয়।
কাজেই আপনি যদি এখনও এটি ব্যবহার না করে থাকেন, তাহলে স্মার্টফোনের সুস্থ্যতায় এখনই তার চালু করতে পারেন। এক্ষেত্রে নিচের পদ্ধতিটি ব্যবহার করতে পারেন আপনি।
গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে ফোনের উপরের ডানদিকের কোনায় আপনার প্রোফাইল আইকনে ক্লিক করুন। এরপর মেন্যু অপশন থেকে প্লে প্রোটেক্ট সিলেক্ট করুন। সেখানে ‘টার্ন অন’ অপশনে ক্লিক করুন এবং স্ক্যান শুরু করুন।
অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার সফ্টওয়্যার ইনস্টল করুন
যদি প্রায় সময়ই আপনার স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার সংক্রমণের ঘটনা ঘটতে থাকে, তাহলে সুরক্ষার জন্য আপনি থার্ড পার্টির অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার সফ্টওয়্যার ইনস্টল করতে পারেন। তবে এগুলো ব্যবহার করতে আপনার কিছু অর্থ ব্যয় করতে হতে হবে।
ফ্যাক্টরি সেটিংস
যদি এসবকিছু করেও ফোন থেকে ম্যালওয়্যার অপসারণে ব্যর্থ হন। তাহলে শেষ উপায় হিসেবে আপনি ফ্যাক্টরি সেটিংসে গিয়ে ফোন রিসেট করতে পারেন। এতে ফোনের সব অ্যাপ, ডেটা ও সেটিংস ডিলিট হয়ে যায়। কাজেই বেশ সাবধানতার সঙ্গেই এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করতে হবে আপনাকে।
প্রথমে সেটিংস অ্যাপে যান। এর পর রিসেট অপশনে গিয়ে ইরেজ অল ডেটা (ফ্যাক্টরি সিরেট) অপশন চাপুন।