রং-বেরঙের বেলুন দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়েছে ঘোড়ার গাড়ি। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ফুলের তোরা। এলাকার সকল মুসল্লিরা তৈরি হয়ে এসেছেন মসজিদে। এই বিশেষ আয়োজনটি করা হয়েছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিঝারী এলাকার কাপাশপাড়া বাইতূন নূর জামে মসজিদে ইমাম হাফেজ ওয়াজউদ্দিন শেখের জন্য। কেননা দীর্ঘ ৩৫ বছর ইমামতি শেষে আজ তার বিদায় নেয়ার পালা। অবসরসংক্রান্ত এই বিদায় বেলাটি স্মরণীয় করে রাখতে গ্রামবাসী তাকে দিলেন এই জমকালো সংবর্ধনা।
শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাদ জুমার নামাজ শেষে মুসল্লী ও এলাকাবাসী মিলে প্রথমে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা দেন। এরপর নগদ ১ লাখ টাকা হাদিয়া ও বিভিন্ন উপহারসামগ্রী দিয়ে সুসজ্জিত একটি ঘোড়ার গাড়িতে উঠিয়ে তাকে নিজ বাড়ি পৌঁছে দেয়া হয়।
হাফেজ ওয়াজউদ্দিন শেখ (ইমাম) নড়িয়া ভোজেশ্বর ইউনিয়ন উপসী এলাকার মৃত রমিজউদ্দিন শেখের ছেলে।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, নড়িয়া উপজেলার বিঝারী এলাকার কাপাশপাড়া বাইতূন নূর জামে মসজিদটি ১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত। ১৯৮৪ সালে হাফেজ ওয়াজউদ্দিন শেখ
যখন মসজিদে ইমামতি করতে আসেন তখন ছোট্ট একটি টিনের ছাউনির মসজিদ ছিল সেটি। তখন মাত্র ২২ মণ ধানের বিনিময়ে সেখানে ইমামতি শুরু করেন তিনি। একটানা ৩৫ বছর ইমামতি করে এখন তার বয়স ৭৫ বছর।
দীর্ঘদিন ইমামতি শেষে বার্ধক্যের কারণে শুক্রবার তিনি অবসর নিলেন। এদিকে গ্রামবাসীও তার বিদায় বেলাটিকে স্মরণীয় করতে বিশাল আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ইমামের সম্মানে বিদায় বেলায় তাকে সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ি প্রস্তুত করে সেই গাড়িতে চড়িয়ে বাড়ি পৌঁছে দেয় এলাকাবাসী।
এমন বিদায়ী সংবর্ধনা পেয়ে হাফেজ ওয়াজউদ্দিন শেখ আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন, আমি যখন এখানে আসি মসজিদটি জানালা কপাট ছাড়া ছোট একটি টিনের ঘর ছিলো। আমি সামান্য একটি মাদুর বিছিয়ে থাকতাম। উঁই পোকায় বিছানা খেয়ে ফেলত। তবে আমার একটাই চিন্তা ছিলো কীভাবে এলাকার মুসল্লিদের নিয়ে মসজিদটিকে সুন্দর করা যায়। আসতে আসতে সবাইকে নিয়ে কাজ শুরু করি। বর্তমানে মসজিদটি এখন দোতলা হয়েছে। এখন আমার বয়স হয়ে যাওয়ায় আজ এই মসজিদ ছেড়ে বিদায় নিতে হচ্ছে। কিন্তু আমার মন চাইছে না বিদায় নিতে। এলাকার সকলে আমাকে অনেক সম্মান দেখিয়েছে। আল্লাহ তাদের সবাইকে ভালো রাখুক।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মান্নান চৌকিদার বলেন, হুজুর যখন আমাদের এখানে আসে তখন মসজিদটি জরাজীর্ণ ছিল। তাকে আমরা বেতন দিতে পারিনি, শুধু এলাকা থেকে ধান উঠিয়ে দিতাম। তারপরেও তার কোনো অভিযোগ ছিল না। আমাদের এলাকার সন্তানদের তিনি ইসলাম শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি অনেক কষ্ট করে সেই মসজিদটিকে পাকা দোতলায় পরিণত করেছেন। আজ হুজুর চলে যাওয়ায় আমরা সবাই কষ্ট পাচ্ছি। বাড়ির মহিলারা ও রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে হুজুরকে এক নজর দেখার জন্য।
মসজিদের সভাপতি রাশেদুজ্জামান চপল খান বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য বেদনার। কেননা আমরা আমাদের আত্মার আত্মীয়কে বিদায় দিচ্ছি। যিনি দীর্ঘ ৩৫ বছর আমাদেরকে দ্বিনি শিক্ষায় আলোকিত করেছে। আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ। সৃষ্টিকর্তা তাকে সুস্থ রাখুন ভালো রাখুন এটাই আমাদের কামনা।