সালাউদ্দিনকে দেখতে গিয়ে পাপন
গত বছর অর্থসংকটের কারণ দেখিয়ে নারী ফুটবল দলকে অলিম্পিক বাছাই খেলতে পাঠায়নি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। এতে বাফুফে হর্তাকর্তাদের কড়া সমালোচনা করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি (বিসিবি) নাজমুল হাসান পাপন। উত্তপ্ত উত্তর দিয়েছিলেন বাফুফে প্রেসিডেন্ট কাজী সালাউদ্দিনও। সম্পর্কে টানাপোড়েন চললেও গতকাল বাফুফে সভাপতির বাসায় গিয়েছিলেন বিসিবি প্রধান। বাইপাস সার্জারি করা সালাউদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে পাপন বলেন, ‘এত বছরের সম্পর্ক তো একদিনের কথায় নষ্ট হয়ে যায় না।’
সম্প্রতি বাইপাস সার্জারি করেছেন বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিন। চিকিৎসার পর ডাক্তারের পরামর্শে একান্তে সময় কাটাচ্ছেন তিনি। সালাউদ্দিনের শারীরিক অবস্থা খানিকটা উন্নতি হওয়ায় শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে দেখা করছেন। সেই সুযোগে গতকাল দুপুরে তার বাসায় যান বিসিবি সভাপতি এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন। সৌজন্য সাক্ষাৎ হওয়ায় মন্ত্রণালয় বা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোনো কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি তার সঙ্গে। সালাউদ্দিনের বাড়ি থেকে বের হয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন বিসিবি সভাপতি পাপন।
এসময় তাকে সালাউদ্দিনের সঙ্গে মনোমালিন্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে পাপন বলেন, ‘শোনেন এত বছরের সম্পর্ক ওই একদিনের কথায় তো আর নষ্ট হয়ে যায় না। ছোটবেলা থেকে মাঠে যেতামই তো উনার খেলা দেখতে, এটা তো অস্বীকার করার কোনো পথ নেই। উনার মতো কিংবদন্তি ফুটবলার তো আর বাংলাদেশে নেই।’
পাপন বলেন, ‘অনেক সময় অনেক কথায় উনি কষ্ট পেতে পারেন, আমিও পেতে পারি। একটা প্রতিক্রিয়া জানালাম, সেটা ওখানেই শেষ। কিন্তু সম্পর্ক তো শেষ হবে না।’ গত বছর নারী ফুটবলারদের বিদেশ সফরে না পাঠানোর সমালোচনা করে পাপন বলেছিলেন, ‘আমার কাছে খারাপ লাগছে মেয়েরা (অলিম্পিক বাছাইয়ে মিয়ানমারে) যেতে পারল না! তাও মাত্র ২০ লাখ (বাফুফের দাবি ৬০ লাখ) টাকার জন্য! এর চেয়ে দুঃখ-কষ্ট আর কী হতে পারে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি কষ্টটাই না পেয়েছেন! আমার মনে হয আপনাদের যে চ্যানেলগুলো আছে, যেকোনো চ্যানেলের মালিকের কাছে চাইলেই টাকাটা দিয়ে দিতেন। কারো না কারো কাছে বলতে তো হবে। আমাদের খেলোয়াড়দের বললেও দিতো। এত গোপনে জিনিসটা রেখে, যে প্রক্রিয়ায় করেছে, এটা খুব দুঃখজনক।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল জিতলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেন পাপন। অথচ বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিন মেয়েদের মিয়ানমারে পাঠাতে প্রধানমন্ত্রীর সাহায্যই চাননি। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীও তাকে ধমক দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাফুফে সভাপতি। এনিয়ে গণমাধ্যমকে সালাউদ্দিন বলেছিলেন, ‘আমি ওই ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে উঠে আসিনি। আমি ওই নাটক করতে পারব না। আমি তো প্রকাশ্যে বলব না, প্রধানমন্ত্রী ফোন দিয়েছেন।’ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ ৬ আসনে ফের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন নাজমুল হাসান পাপন। এমনকি হয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। তাই শুধু বিসিবি সভাপতি নয়, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবেও সালাউদ্দিনকে দেখতে গিয়েছিলেন পাপন। যে কারণে দেশের ফুটবল নিয়েও দুজনের কথা হয়েছে। পাপন বলেন, ‘আসলে ইতোমধ্যেই আমি ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে বসেছি। বাকি ফেডারেশনগুলোর সঙ্গেও আলোচনায় বসব। বাফুফের সঙ্গে আলাদা করে বসেছিলাম। তখনই ফেডারেশনের প্রধান সমস্যাগুলো আমি শুনেছি। আজকে যেহেতু উনার (সালাউদ্দিন) সঙ্গে দেখা করলাম, উনিও কয়েকটা সমস্যার কথা জানালেন। এসব শোনার পর আমি উনাকে বলেছি, আপনি একেবারে সুস্থ হয়ে আসুন। তার আগে সম্ভব হলে কিছু কাগজপত্র পাঠাতে বলেছি। তারপর এটা নিয়ে কী করা যায় আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আশা করি মাঠ সংকটেরও একটা সমাধারন করতে পারবো।’
২০০৮ সাল থেকে বাফুফে প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন কিংবদন্তি ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিন। আর নাজমুল হোসেন পাপন বিসিবির প্রধান হিসেবে যোগ দেন ২০১২ সালে।