সবশেষ নারী ফুটবল লীগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এফসি দলের হয়ে খেলেছিলেন সাগরিকা। সেখান থেকেই তাকে বয়সভিত্তিক দলে টানেন তৎকালীন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। কিন্তু সে সময় তার শারীরিক গঠন দেখে কেউ কেউ অনাগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ছোটন অনেকটা জোর করেই বাফুফের আবাসিক ক্যাম্পে নিয়ে নেন। সেই সাগরিকাই আজ বাংলাদেশের নারী ফুটবলের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। যার অসাধারণ পারফরমেন্সে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বহু নাটকের পর যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। সাগরিকাকে আগামীর তারকা বলছেন গোলাম রব্বানী ছোটন। ম্যাচ তখন শেষ হয় হয় করছে! চলছে যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটের খেলা। ভারতীয়রা মাঠে তখনো টগবগে। যেন শিরোপা-উল্লাস করার অপেক্ষায়।
ম্যাচের ধারাভাষ্যকার বলে উঠলেন খেলার যে গতিধারা তাতে বাংলাদেশ দল সমতা ফেরাতে পারবে কিনা সন্দেহ! তবে আবারও দৃশ্যপটে সাগরিকা। প্রথম রাউন্ড রবিন লীগে যিনি এই ভারতেরই বিপক্ষে শেষ মুহূর্তের গোলে জিতিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। মাঠে বসে মেয়ের খেলা দেখবেন। সাগরিকার গোলে বাংলাদেশ জিতবে। নিজের মেয়ে এভাবে মাঠ মাতাবে।
দর্শকরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করবে। তা শুরুতে ভাবেননি বাবা-মা। ফাইনালের দিন তো সকালে ঢাকায় এসে বিকালে কমলাপুর স্টেডিয়ামে চর্ম চোখে সেটা দেখেছেন। কাল মেয়ের সামনে বসে আনন্দে কিছু বলতে পারছিলেন না। মাত্র বছর দুয়েক যেতে না যেতেই ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল থেকে উঠে আসা এক দরিদ্র পরিবারের সেই কন্যা এখন দেশের নারী ফুটবলে আলোচিত মুখ। নারী দলের দায়িত্ব ছেড়ে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব নেয়া কোচ ছোটন তাই নিজেকে সার্থক মনে করেন। কাল এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সাগরিকার খেলা দেখে তখনই ভালো লেগে যায়। তখনই বুঝতে পারছিলাম ওকে ঠিকমতো পরিচর্যা করলে দেশের ফুটবলে একদিন সম্পদ হবে। সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল দিয়ে অন্তত তা পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। যদিও শুরুতে সাগরিকাকে নিতে চাননি তখনকার টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি, বিশেষ করে তার শারীরিক গঠনের দিকে তাকিয়ে। আমি জোর করেই ঝুঁকি নিয়েই দলভুক্ত করি। আজ সাগরিকা তার পারফরম্যান্স দিয়ে সবাইকে আনন্দে ভাসিয়েছে।
এটা দূর থেকে দেখে অনেক ভালো লাগছে। সামনের দিকে ও নারী ফুটবলে বড় তারকা হবে এটা এখন প্রত্যাশা করাই যায়। বাংলাদেশের চারটি ম্যাচের তিনটিতে ৪ গোল সাগরিকার। ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচে খেলা হয়নি। সবগুলো গোলই ছিল দৃষ্টিনন্দন। সাগরিকার বড় গুণ হলো ঠান্ডা মাথায় দারুণ ফিনিশিং করতে পারেন। প্রতিপক্ষের বক্সে গিয়ে খেই হারায় না। যতই চাপ থাকুক না কেন, ফিনিশিংটা তার চমৎকার। আমার মনে হয় সাগরিকা এক সময়ে দেশ সেরা তারকা হবে।’ এই প্রথমবার ক্যারিয়ারে আন্তর্জাতিক শিরোপা, তাও আবার নারী ফুটবলের মাধ্যমে, সেই কোচ সাইফুল বারী টিটুর প্রশংসাও কম পাচ্ছেন না সাগরিকা। সাগরিকাকে নিয়ে টিটু বলেন, ‘ও তো মেধাবী ফুটবলার। ওর যেমন রানিং রয়েছে তেমনি আবার নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা কম নয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ঠান্ডা মাথায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ওর গোলগুলো দেখবেন, সবগুলোতেই দারুণ ফিনিশিং। যদিও ওর শারীরিক গঠন কিংবা পায়ের পেশী সেভাবে গড়ে ওঠেনি। তারপরও যা গুণ আছে তা কম নয়। আমার মনে হয় ও বাংলাদেশের ভবিষ্যতের তারকা হবে।’