ক্রিকেটের সুপার ওভারের মতো অবস্থায় ইমরান খান ও নওয়াজ শরীফ। ক্রিকেটে দুই পক্ষ নির্ধারিত ওভারে সমান রান করার পর যেমন সুপার ওভারে খেলা শেষ হয়, ঠিক তেমনই এক অবস্থা বিরাজ করছে পাকিস্তানে। তবে এক্ষেত্রে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও অন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ নির্ধারিত নির্বাচনে সমান সংখ্যক আসন পাননি। বিভিন্ন মিডিয়া বলছে, ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফের (পিটিআই) স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক ছাড়াই বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে জাতীয় পরিষদ হিসেবে পরিচিত পার্লামেন্টের ১০২ আসনে জয়ী হয়েছেন।
অন্যদিকে সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) ৭৩ আসন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৪ আসন নিয়ে আছে তৃতীয় অবস্থানে। ফলে কেন্দ্রে সরকার গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শুরু হয়েছে ‘সুপার ওভার’। এক পক্ষকে টপকে আরেক পক্ষ কেন্দ্রে সরকার গঠনের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। ইমরান খান তার নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন কারো সঙ্গে জোট গঠন করে কেন্দ্রে সরকার গঠনের জন্য। অন্যদিকে পিএমএলএন, পিপিপি ও অন্য কিছু দল মিলে সরকার গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে শনিবার স্থানীয় সময় রাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফল প্রকাশ না হওয়ায় আজ রোববার সারাদেশে নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে প্রতিবাদ বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে পিটিআই।
অনলাইন এনডিটিভি বলছে, পাকিস্তান এমনিতেই অর্থনৈতিক সঙ্কটে ভুগছে।
তার ওপর নির্বাচনে ‘ঝুলন্ত এক রায়ে’ দেশটিতে আরেকটি আঘাত দিয়েছে। এখন দলগুলোর মধ্যে চলছে হর্স-ট্রেডিং বা সমর্থন কেনাবেচা। তাতে যে দল বা পক্ষ পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখাতে পারবে, তারাই সরকার গঠন করবে। পিটিআই প্রধান ইমরান খান আদিয়ালা জেলে। তিনি নির্বাচন করতে পারেননি। তা সত্ত্বেও তার দল ১০২ আসন নিশ্চিত করার ফলে তিনি বিশ্বজুড়ে সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন। তবে পার্লামেন্টে তার দলকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখাতে হলে দরকার আরও ৩১টি আসন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৮টি আসনের ফল ঘোষণা করা হয়নি। এই ৮ আসনেও যদি পিটিআই জয়ী হয় তাহলেও তাদেরকে নির্ভর করতে হবে তৃতীয় এক বা একাধিক দলের ওপর।
অন্যদিকে সেনাবাহিনী সমর্থিত এবং নির্বাচনে ফেভারিটের তকমা পাওয়া নওয়াজ শরীফের পিএমএলএন ২৬৬ আসনের পার্লামেন্টে মাত্র ৭৩টি আসন নিশ্চিত করতে পেরেছে। বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পিপিপি পেয়েছে ৫৪ আসন। শুক্রবার নির্বাচনে ইমরান খান এবং নওয়াজ শরীফ দু’জনেই নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করেছেন। কিন্তু কে সরকার গঠন করবেন তা নিয়ে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে অনিশ্চয়তা। এ অবস্থা বিরাজ করছে এমন এক সময়ে যখন দেশের বহুবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দ্রুত পলিসি গ্রহণ জরুরি। ইমরান খান সরকার গঠনের নির্দেশ দিলেও তারা বাকি আসন কোথা থেকে কার সঙ্গে জোট করবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে তার দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২৪ কোটি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ফল করার ফলে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, ইমরান খানই এখন পাকিস্তানে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। ইমরান খানকে জেলে নেয়ার পর তার দলের নির্বাচনী প্রতীক কেড়ে নেয়া হয়েছে। দেশবাসী বিষয়টি পরিষ্কার বুঝতে পেরেছে এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কি। ফলে তারা পিটিআই না দেখে ইমরানের সমর্থিত প্রার্থীদের খুঁজে বের করে ভোট উপহার দিয়েছে।
পিটিআই সমর্থিত বেশ কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনেছেন। এ অভিযোগে তারা হাইকোর্টেও গিয়েছেন। স্থানীয় মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, আরও কিছু প্রার্থী কয়েকদিনের মধ্যে ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে আদালতে যেতে পারেন। দলটির চেয়ারম্যান গওহর আলি খান বলেছেন, জনগণ তার দলের প্রতি যে ম্যান্ডেট দিয়েছে তার প্রতি সম্মান দেখানো উচিত পাকিস্তানের সব প্রতিষ্ঠানের।