রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়, মজুত করা হয়। সেগুলো লক্ষ্য রেখেই মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের সমাপনী ও রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, সুষ্ঠুভাবে সংসদ চলবে। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে। অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। দেশে-বিদেশে নালিশ করে কোনো ফায়দা হবে না। বিদেশিরা কী বললো, সেটা দিয়েও চলবে না। সব দেশের নির্বাচন আমাদের দেখা আছে। এবারের মতো সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন দেশে আর হয়নি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনে একটি দলসহ তাদের জোট অংশগ্রহণ করেনি। তবে ২৮টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেশের মানুষ প্রার্থী হয়। আমরা নমিশননেশন দেওয়া স্বত্ত্বেও প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। নির্বাচনে এক হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী ছিল। স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিল ৪৩৬ জন। এ নির্বাচন অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। নির্বাচনে নারী ও তরুণ ভোটারদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য।
তিনি বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখা ও দেশের মানুষের উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজ করে যাচ্ছি। দেশের মানুষ সুফল পেয়েছে বলেই আমাদের ওপর বারবার আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে। আমাদের বারবার নির্বাচিত করে তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।
সংসদে কাজে সহযোগিতা করার জন্য সরকারি দল, বিরোধী দলীয় ও স্বতন্ত্র এমপিদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। টেবিল চাপড়িয়ে এমপিরা প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানান। স্বতন্ত্র এমপিদের টেবিল চাপড়ানোর শব্দ বেশি জোরে হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী হাসির ছলে বলেন, মনে হচ্ছে স্বতন্ত্রদের চোটপাট বেশি।
শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশনস, কাউন্টার স্যাংশনস ও কোভিড অতিমারীর পরে এই মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের উন্নত দেশেও এ মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের দেশে যাতে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য যাতে সহনশীল থাকে। এখানে একটু অদ্ভুত ব্যাপার। দাম বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। মজুত করা হয়। সেগুলু লক্ষ্য রেখেই মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
মন্ত্রীদের দেওয়া নির্দেশনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে উপকারিতার ক্ষেত্রে দেশের জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিদেশি ঋণ ও সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। কেউ আমাদের এখানে এসে বললো, আমরা সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়বো না। আমরা বিবেচনা করে নেবো। সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা ও জবাবহিদিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৭৫ পরবর্তী নির্বাচনগুলোর ঘটনা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কেন নির্বাচেন বাধা দেওয়া? ৭৫-এর পর প্রতিটি নির্বাচন তো আমরা দেখেছি। সেই হ্যাঁ না ভোট। নির্বাচন কমিশনে তালা দিয়ে ভোটের রেজাল্টই নেই। তিন/চারদিন পর রেজাল্ট। আমাদের বিরোধী দলীয় নেতা দেখালেন- তিনি কিন্তু ২য়, ৩য়, ও ৪র্থ নির্বাচনের রেজাল্ট দেখাননি। ২য় নির্বাচন কীভাবে করেছিল। ৩য় নির্বাচনে বিরোধী দলীয় নেতার ভাই (এরশাদ) তখন আরেক মিলিটারি ডিকটেটর, ক্ষমতায়। এক মিলিটারি ডিকটেটর ভোট চুরির রাস্তা দেখিয়ে গেলো, ক্ষমতার দখলটা দেখিয়ে গেলো। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আরেকজন…। দুজনেরই একই খেলা। সেনাপ্রধান হলেন। একদিন ক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে গেলেন। একই সঙ্গে দুই রূপ। রাষ্ট্রপতির পদ নিয়ে ভোট চুরি। খুশি হতাম বিরোধী দলীয় নেতা যদি তার ভাইয়ের ১৯৮৮ এর নির্বাচনটা দেখাতেন। সে নির্বাচনটা ছিল শুভংকরের ফাঁকি। এরশাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করলো খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে। অবশ্য তিনি দেখিয়েছেন ২১ শতাংশ ভোট। ২১ শতাংশ কীভাবে হলো। সেদিন তো কোনো ভোটার কেন্দ্রে যেতে পারেনি। এরশাদের নির্বাচন টেকেনি। খালেদা জিয়ার নির্বাচনও টেকেনি। জনগণের রুদ্ধরোষে ভোট চুরির অপরাধে বিদায় নিতে হয়েছিল।