লন্ডনের একটি স্কুলে নামাজ নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদস্বরূপ নিজ স্কুল ত্যাগ করেছেন দুই মুসলিম ছাত্রী। তাদের মতে নামাজ পড়া নিষিদ্ধ হওয়ার পর তাদের মনে হতো মুসলিম হওয়াটাই একটি বিষাক্ত বিষয়। সংবাদ মাধ্যম বিবিসিকে এমনটিই জানিয়েছে ছাত্রী দু’জন।
গত বছর লন্ডনের ব্রেনট এলাকার ”মেকেইলা কমিউনিটি” স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুলের ভেতরে সকল ধর্মীয় উপাসনা নিষিদ্ধ করে। এতে স্কুলে নামাজও নিষিদ্ধের আওতায় আসে। তবে স্কুলের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। আদালতের রায় ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছেন অভিবাবক ও শিক্ষার্থীরা। তবে আদালতের রায় ঘোষণার অপেক্ষা না করেই স্কুল ছেড়ে আসেন এই দুই মুসলিম ছাত্রী। তারা হলেন সারাহ ও সেলিনা। মেকেইলা কমিউনিটি স্কুলের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৭শ’র কিছু কম। এদের ৫০ শতাংশই মুসলিম।
সারাহ ও সেলিনা বিবিসিকে আরো বলেন, ইসলাম ধর্মে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম।
তারা লাঞ্চ ব্রেকের সময় ৫ মিনিট সময় নিয়ে যোহরের নামাজ আদায় করতে চেয়েছিলেন। স্কুলের হেড টিচার কেথেরিন বারবলসিং এর সাক্ষাতকার চেয়েও পায়নি বিবিসি। জানুয়ারি মাসে সোশাল মিডিয়ার এক পোস্টে বারবলসিং বলেন, মেকেইলা স্কুলে ভর্তির আবেদনের সময় আমরা সব সময় শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দেই, স্কুলের কঠিন নীতিমালা এবং স্কুল ভবনের সীমাবদ্ধতার কারণে স্কুলের ভেতরে শিশুদের তদারকিহীনভাবে ঘুরে বেড়াতে দিতে পারি না। উপাসনা কক্ষ রাখা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু এই বক্তব্যের সাথে একমত নন সারা ও সেলিনা। ধর্মীয় পোশাক এবং নিজস্ব ঐতিহ্যের পোশাকের প্রতি স্কুল অসম্মানজনক আচরণ করে মর্মে অভিযোগ করে দুই শিক্ষার্থী।
স্কুলের হেড টিচার কেথেরিন বারবলসিং সোশাল মিডিয়া পোস্টে বলেন, আমাদের স্কুল হাসিখুশি, পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ একটি ধর্মনিরপেক্ষ স্কুল। যেখানে সব বর্ণ, বিশ্বাস ও অন্যান্য গ্রুপ সামগ্রিক কল্যাণের জন্য আত্মত্যাগ করতে প্রস্তুত। আমাদের স্কুলের বড় একটি অংশ মুসলিম শিক্ষার্থী এবং তাদের ইতিবাচক অভিজ্ঞতার ফলে মুসলিম শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে ৫০ শতাংশ হয়েছে। আমার দাদি ছিলেন মুসলিম। কিন্তু সারা ও সেলিনা জানিয়েছে, স্কুলে তাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে তাদের মনে হয়নি স্কুলের পরিবেশ ধর্ম নিরপেক্ষ।
টক টিভিতে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কেথেরিন বারবলসিং বলেছেন, স্কুলে উপাসনা নিষিদ্ধ করার সাথে ইসলাম ধর্মকে অপছন্দ করার সম্পর্ক নেই। কেবল স্কুলের নীতিমালা অনুযায়ী স্কুল পরিচালনা করতে গিয়েই নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ডিপার্টমেন্ট ফর এডুকেশন এবং অফস্টেডে অভিযোগ করেছেন স্কুলের শিক্ষার্থীর দুই পরিবারের সদস্য। বিবিসিকে তারা জানিয়েছেন, ফ্রি স্কুল হওয়ার কারণে মেকেইলা কমিউনিটি স্কুল সম্পর্কিত সব অভিযোগ স্কুলের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিষ্পত্তি করতে হবে। তবে সমালোচকেরা এই ধরনের প্রক্রিয়ার সমালোচনা করছেন এবং বলছেন, স্কুলের স্বচ্ছতার ওপর নির্ভর করবে এই স্কুলের দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য। বিবিসি’র প্রতিবেদক এই স্কুলের সাবেক দুই মুসলিম শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেছেন। শিক্ষার্থীদের অনুরোধে তাদের পরিচয় এবং কণ্ঠ গোপন রেখেছে বিবিসি।