আজ জিতলেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে ২৫৫ রান তাড়া করে টাইগাররা তুলে নিয়েছে ৬ উইকেটের জয়। তবে এই জয়ের গল্পটা সহজ ছিল না। টসে জিতে উইকেটের সুবিধা নিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন লঙ্কান অধিনায়ক। পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেট হারিয়ে ৭২ রান তুলে ফেলেছিলেন। সেই হিসেবে স্কোর বোর্ডে ৩’শ ছাড়ানো অসম্ভব ছিল না। সেখান থেকে বোলাররা তাদের চেপে ধরে। রানের লাগাম টেনে ধরে আড়াই’শর মধ্যেই। এরপর লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ২৩ রানে তিন উইেেকটের পতন। দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার ছাড়াও তাওহীদ হৃদয় দলকে বিপদে ফেলে ফিরে যান সাজঘরে।
লঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয়ের গল্পটা আসলে এখান থেকেই শুরু। অধিনায়ক নজামুল হোসেন শান্ত দলের হাল ধরেন। শুরুতে তার সঙ্গী হন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু ব্যক্তিগত ৩৭ রানে রিয়াদ আউট হওয়ার পর সবাই যখন হারের শঙ্কায় তখন দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে যান মুশফিকুর রহীম। শান্তর সঙ্গে দেশের ক্রিকেটের পঞ্চম উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি গড়েন সেই সঙ্গে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন। অধিনায়ক খেলেন ১২২ রানের অপরাজিত ইনিংস। এমন ইনিংসের পর দলের পক্ষ থেকে মেরুন জ্যাকেটটা তারই দখলে যায়। মুশফিকের অবদান ৭৪ রান। আজ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে সাগরিকায় জিতলেই ওয়ানডে সিরিজ নিজেদের করে নিবে বাংলাদেশ। তবে টি-টোয়েন্টি সিরিজের মতো এখানেও থাকছে ওপেনিং নিয়ে দুশ্চিন্তা।
লিটন, সৌম্যদের ব্যর্থতার পর টাইগারদের নয়া ব্যাটিং কোচ ডেভিড হ্যাম্প অধিনায়ক শান্তর এমন ব্যাটিংকে দলের জন্য অনেক বড় অবদান হিসেবেই দেখছেন। গতকাল দলের ঐচ্ছিক অনুশীলনের পর সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘১৬৫ রানের পার্টনারশিপ আমাদের ম্যাচ জিতিয়েছে, শান্ত ও মুশফিক ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছে দেখে খুব ভালো লাগল। ক্যাপ্টেন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সে নিজের কাঁধে দায়িত্ব নিচ্ছে। খেলোয়াড় হিসেবে তো বটেই, অধিনায়ক হিসেবেও এমন ইনিংস মুগ্ধকর। ব্যাটাররা নিজেদের শক্তিমত্তা অনুযায়ী খেলছে। আমিও ওদের বলেছি, নিজের শক্তির জায়গা বুঝে খেলো।’ বিশেষ করে তিন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে দল যখন বিপদে তখন যে ভাবে রান তাড়া করেছে শান্ত, রিয়াদ, মুশফিকরা তা নিয়ে উচ্ছ্বসিত তিনি। এমন মানসিকতার প্রসংশাও করেন হ্যাম্প। তিনি বলেন, ‘কালকের (মঙ্গলবার) রান তাড়াটা দারুণ ছিল। ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। পাওয়ার প্লেতে ৫৫ রান আসলে বোঝা যাচ্ছিল ছেলেদের রান করার ইতিবাচক মানসিকতা। ৬৯ ও ১৬৫ রানের পার্টনারশিপ দুটি বড় ভূমিকা রেখেছে। ফ্যান্টাস্টিক চেজ। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সগুলো দারুণ ছিল। তবে আমাদের কাছে এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ইতিবাচক মানসিকতা, শান্ত থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ রাখা।’
২৫৫ রান তাড়া করতে নেমে ওপেনার লিটন দাস নিজের নামের পাশে কোনো রানই যোগ করতে পারেননি। আরেক ওপেনার সৌম্য ৯ বল খেলে ৩ রান করে আউট হন। দু’জনের আউট হওয়ার ধরন ছিল বেশ দৃষ্টিকটু। এই বছর প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে ওপেনিং নিয়ে চিন্তাটা আরো একবার প্রকট হলো। গেল বছর ১৫ ম্যাচে টাইগারদের ওপেনিং জুটি দশবারই ২০-এর নিচে আউট হয়েছে। এই সময়ে ওপেনিং জুটি ৫০’র বেশি রান ছুঁতে পেরেছে মাত্র ৫ বার। লঙ্কানদের বিপক্ষে সবশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ওপেনিং ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে হ্যাম্প মনে করেন প্রথম ওয়ানডেতে উইকেটটা ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন ছিল। তিনি বলেন, ‘বল সুইং করছিল। লঙ্কানরা স্টাম্পে লক্ষ্য করে বল করছিল। রিয়াদ খুব বুঝেশুনে খেলছিল। তার অ্যাপ্রোচ শ্রীলঙ্কাকে চাপে ফেলে দেয়। শান্তর সঙ্গে তার ৬৯ রানের পার্টনারশিপই ম্যাচের গতিপথ গড়ে দিয়েছে। তার অ্যাপ্রোচই শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে আমাদের হাতে নিয়ন্ত্রণ এনে দিয়েছে।’ তবে এমন উইকেটে যে ধরনের ব্যাটিং প্রয়োজন সেটি শান্ত, রিয়াদ ও মুশফিকরা দারুণ ভাবে করতে পেরেছে বলে মনে করেন ব্যাটিং কোচ। তিনি বলেন, ‘মুশফিকের ইনিংস আউটস্ট্যান্ডিং। সে মোটেও বিচলিত হয়নি। রিয়াদ বাউন্ডারিতে রান বের করছিল, মুশফিক সেটাকে নিজের মতো খেলে অব্যাহত রেখেছে। সে প্রমাণ করেছে রান করা মানেই শুধু বাউন্ডারি নয়, সিঙ্গেল রোটেশন করেও রান বের করা যায়। পুরো ইনিংসজুড়েই সে দারুণ খেলেছে।’
দেশের মাটিতে সর্বশেষ দুই ওয়ানডে সিরিজেই হেরেছে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে টানা ৭ সিরিজ জয়ের পর গেল বছর ইংল্যাান্ডের বিপক্ষে হার দেখে টাইগাররা। পরের সিরিজ ফের জিতে নেয় আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। তবে বছরের শেষ দুটি সিরিজ হার দেখতে হয় আফগানিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। তাই আজ দেশের মাটিতে টাইগারদের ওয়ানডেতে ফের সিরিজ জয়ে ফেরার মিশনও।