চলে গেছেন বরেণ্য রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী সাদী মহম্মদ। বুধবার সন্ধ্যায় তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পরিবার। ধারণা করা হচ্ছে তিনি স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এ শিল্পীর এমন আকস্মিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের সংস্কৃতিক জগতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শোক প্রকাশ করছেন তারকারা। সেই শোকই তুলে ধরা হলো।
নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু- আমরা কখনো ভাবিনি সাদী মহম্মদ এভাবে চলে যাবে। তার এই চলে যাওয়ায় আমরা আতঙ্কিত ও শোকাহত। দেশে ও দেশের বাইরে যারা আছেন, যারা রবীন্দ্র সংগীত ও দেশাত্মবোধক গানের রসিক, শ্রোতা ও দর্শক আছেন, তারা শোকাহত, সাধারণ মানুষও শোকাহত। তার মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তার সেই ভরা গলা, দরাজ কণ্ঠের গান আর কোথায় পাবো? কতোদিন অপেক্ষা করতে হবে?
সুজিত মোস্তফা- প্রিয় সাদী ভাই, কাজটা একদম ঠিক করলেন না।
আপনাকে কতো মানুষ ভালোবাসে আপনি জানেন? আমাকে যতটা ভালোবাসা দিয়েছেন হয়তো বুঝতে পারেননি আপনাকে আমি তার চেয়েও বেশি ভালোবাসতাম। আপনি তো জানেন এখানে অভিমানের দাম নেই, তাই অভিমান করা তো বোকামি বই আর কিছু নয়। ওপারে ভালো থাকুন সাদী ভাই, আমাদের ভালোবাসায় থাকুন।
ফাহমিদা নবী- এমন কোনো সময় সেভাবে দেখিনি, যেখানে অনেক কিছু চাই তার। সম্মানটুকু ছাড়া! খুব সাধারণ একজন অভিমানী শিল্পী। শিল্পীর অভিমান তো থাকবেই, সেটাই তার বৈশিষ্ট্য। কিন্তু অভিমান করে শুধু কষ্টই বাড়ে, বাড়ে বিষণ্নতা! সে বিষয়টা তিনি হয়তো মানতে পারেননি। বহুবার বলেছি অভিমান করবেন না। কিন্তু একাকী অভিমানের ওজন, এতটাই হয়তো বেড়ে গিয়েছিল, পারলেন না আর সেই দৌড়ে নিজেকে বাঁচাতে।
চঞ্চল চৌধুরী- জন্ম যেমন আনন্দের, মৃত্যু ততধিক শোকের। স্বাভাবিক মৃত্যুতে শুধুই শোক বিরাজমান। কিন্তু এ কেমন মৃত্যু? এ কেমন চলে যাওয়া? পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্র এর কতোটুকু দায় নেবে জানি না, তবে সাদী ভাইয়ের মৃত্যু অন্য কোনো অভিমান বা বেদনার কথা কয়ে যায়। প্রিয় শিল্পী সাদী মহম্মদের এমন ভাবে চলে যাওয়াটাও মেনে নিতে পারছি না। তাকে নিয়ে ভাববার সময় কি আসলেই আমাদের হাতে ছিল? যখন কোনো মানুষ একান্তই একা হয়ে যায়, পৃথিবীর কোনো মায়া যখন তাকে আর আটকাতে পারে না, তখনই সে এমন কিছু করে। আমরাই তাকে একা করে দিয়েছি, যোগ্য সম্মান দিতে পারিনি। এই দেশটির জন্য সাদী ভাইয়ের পরিবারের আত্মত্যাগের কথাও নিশ্চয়ই আমরা ভুলে গেছি বা যাবো। আমাদের ক্ষমা করে দিন সাদী ভাই।
ফারুক আহমেদ: আমার জীবনে এমন ভালো মানুষ খুব একটা দেখিনি। এটা মৃত্যুর পর বলে বলছি না। আগেও যদি কেউ আমাকে ভালো মানুষের নাম জানতে চাইতো, তবে উনার নাম সবার আগে বলতাম। আমি সেই ১৯৬৮ সাল থেকে উনাকে দেখি। কোনোদিন কাউকে একটা কটু কথা বলতে শুনিনি। অথবা কারও সঙ্গে রাগ হয়ে কথা বলেছেন বলে দেখিনি। এত বড় একজন শিল্পী, কোনো অহমিকা ছিল না। এমন মানুষ এভাবে চলে গেলে আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। আমাদের আসলে ভাষা থাকে না মুখে। উনি এভাবে হুট করে চলে গিয়ে আমাদের বোবা করে দিয়েছেন।
প্রিন্স মাহমুদ: কি ২১শে পদক? কেমন লাগে তোমার? সাদী মহম্মদ গেলেন? চলেই গেলেন। ক্ষমা করেন সাদী ভাই। বেঁচে থাকতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানগুলোকে আমাদের চেনা হয়ে ওঠে না। তাদের প্রাপ্যটা আমরা এভাবেই দেই।
অনিমা রায়: স্যার শুধু অভিমানের কথা বলে গেছেন আমাদের। উনি বলেছিলেন, উনাকে যদি মরণোত্তর পদকও দেয়া হয় উনি ফিরিয়ে দেবেন। কারণ জীবদ্দশায় এ জাতি উনাকে সম্মান করেনি। একজন মানুষ সাদী মহম্মদ হয়ে উঠলেন, এখনো জাতীয় কোনো পুরস্কার পাননি। এটা কি মানা যায়? রবীন্দ্র সংগীতজগতে যে মানুষটার এত অবদান, এত এত শিল্পী যিনি তৈরি করেছেন, তার কোনো স্বীকৃতি নেই! স্বীকৃতি শুধু সাধারণ মানুষের ভালোবাসা। তাহলে বাকিদের সঙ্গে তার তুলনা কেন? কেন সাদী মহম্মদের মতো মানুষকে খুঁজে নিয়ে আসতে হবে? যে মানুষকে সবাই চেনে? এই অভিমান স্যারের বুকভরা ছিল।