‘বাঘের মেলায়’ বণ্যপ্রাণী
সেজে নাচ দেখায় মানুষ
শফিউল আলম, রাউজান ঃ
কেউ সেজেছিলেন বাঘ, কেউবা হনুমান, কেউ ভাল্লুক আবার কেউ কেউ নানা বন্য প্রাণী। শিশুসহ সব শ্রেণীর মানুষকে মাতিয়ে তোলার জন্যই নানা বন্যপ্রাণীর মুখোশ পড়ে ঢোল বাজিয়ে দৌঁড়াদৌঁড়ি, মাটিতে গড়াগড়ি, নাচা-নাচি করেছিল তারা। দিক-বেদিক ছুটছিল শিশু কিশোরেরা। গত বৃহস্পতিবার (১৮ই এপ্রিল) বিকালে এমন দৃশ্যের দেখা মিলে রাউজানের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মনপোদ্দার স্মৃতি বিজড়িত বাঘের মেলায়। যুগ যুগ ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাংলা নববর্ষের ৫ ও ৬ বৈশাখে অনুষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী বাঘের মেলায় এভাবে বন্যপ্রাণী সেজে আনন্দ দেন মানুষকে। প্রধান অতিথি থেকে ফিতা কেটে দুইদিনব্যাপী বাঘের মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাউন্সিলর জানে আলম জনি। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘ ছোট বেলায় মাটির ব্যাংকে টাকা জমিয়ে মেলায় খরচ করতাম। শতবছরের ঐতিহ্যবাহী এই মেলা টিকিয়ে রাখার জন্য রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী নির্দেশনায় আমরা কাজ করছি।’ রাউজান পৌরসভার ৫নম্বর ওয়ার্ডে মনপোদ্দার বাড়ী মেলা উদযাপন কমিটির ব্যবস্থাপনায় প্রতিবছরের ন্যায় গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুইদিনব্যাপী মেলার আয়োজনকে ঘিরে ছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, বাঘের নৃত্যসহ বিভিন্ন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির আয়োজন। বাঘের মেলায় পসরা সাজিয়ে বসেন শতাধিক দোকানী। নাগর দোলায় চড়ে আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন শিশু-কিশোরেরা। মেলায় বিভিন্ন ধর্মবর্ণের নানা শ্রেণি পেশার মানুষের উপস্থিথি ছিল চোখে পড়ার মতো। তীব্র দাবদাহের মধ্যে ব্যাপক লোকসমাগমে মুখরিত হয়ে উঠে মেলাঙ্গন। মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দর্শক মাতিয়ে রাখেন স্থানীয় শিল্পী ও বেতার-টেলিভিশন শিল্পীরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিভাষ ধর। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মনপোদ্দার পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীপক ধর। মনপোদ্দার পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ ধরের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আইয়ুব, সাংগঠনিক সম্পাদক ওসমান গণি, আবুল মনছুর খোকন, জসিম উদ্দিন। বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা প্রক্তন শিক্ষক জহর লাল ধর, মেলা কমিটির সদস্য নেপাল ধর, মিলন ধর, দীপক ধর,পার্থ ধর, তন্ময় ধর, রুদ্র ধর। এসময় মনপোদ্দার বাড়ী মেলা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, রাউজানের ঐতিহ্যবাহী এই বাঘের মেলায় শতবছর আগে বাঘ, ভাল্লুক, হনুমানসহ নানা প্রজাতির বণ্যপ্রাণী দ্বারা মানুষকে আনন্দ দেওয়া হতো। বন্যপ্রাণী দেখতে মেলায় ভীড় করতেন দূর-দূরন্ত থেকে আসা নারী-পুরুষেরা।