প্রস্তাবিত বাজেটে ‘কালো টাকা’ সাদা করার যে সুযোগ দেয়া নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর এর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এর পক্ষেই বলছেন। তিনি বলছেন, যারা অসচেতনতায়, অজ্ঞতায় বা কোনো জটিলতায় পড়ে আয়কর বিবরণীতে সম্পদের তথ্য দিতে ব্যর্থ হন, তাদের সুযোগ দিতেই ‘অপ্রদর্শিত আয়’ বৈধ করার এই সুযোগ।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা, অপ্রদর্শিত সম্পদ, জমি, ফ্ল্যাট-প্লট, শেয়ারসহ যে কোনো বিনিয়োগ ১৫ শতাংশ কর দিয়ে ঢালাওভাবে সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
শুক্রবার ঢাকার ওসমানী মিলনায়তনে অর্থমন্ত্রীর বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এনবিআর এর চেয়ারম্যানকে এর উত্তর দিতে বলেন।
রহমাতুল মুনিম বলেন, আসলে যখন এ ধরনের অ্যামনেস্টি দেয়া হয়, তখনই সাধারণের প্রশ্ন আসে যে, এটা কালো টাকাকে সাদা করার জন্য। কিন্তু আমরা মূলত এ অ্যামনেস্টি দিয়ে থাকি বিভিন্ন কারণে অপ্রদর্শিত কিছু সম্পদ থাকতে পারে।
রিটার্নে দেখানো হয়নি আগে, সেটা নানা কারণে হতে পারে। অসতর্কতার জন্য হতে পারে। অজ্ঞতার কারণে রিটার্নে দেখানো যায়নি অথবা অন্যের মাধ্যমে রিটার্ন জমা দেয়ার কারণে হতে পারে। আমাদের অনেকেই নিজে রিটার্ন জমা না দিয়ে অন্যের মাধ্যমে রিটার্ন জমা দেন।
অন্যের মাধ্যমে রিটার্ন দেয়ার কারণে তথ্যগুলো (অপ্রদশির্ত অর্থ-সম্পদ) নথিতে বাদ পড়ে যায় বা ভুল হয়ে যায় বলে মনে করেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
জমি কেনা-বেচার ফলে অজ্ঞাতে কিছু টাকা কালো হয়ে যায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, আরও একটি বিষয় রয়েছে, সেটা আপনারা স্বীকার করবেন যে, জমি ক্রয়-বিক্রয়ে আমাদের কিছু টাকা আমাদের অজ্ঞাতেই কালো হয়ে যায় বা অপ্রদর্শিত হওয়ার সুযোগ হয়ে যায়। এ ধরনের কিছু অনিবার্য কারণে রিটার্নে যে সমস্ত সম্পদ দেখাতে পারেননি, সেই সম্পদ দেখানোর সুযোগ দেয়ার জন্য অনেক দেশেই এ প্র্যাকটিসটি আছে।
কালো টাকা সাদা করার এ সুযোগ ‘ব্যবসায়ী মহল ও সাধারণের’ দাবি ছিল বলে মন্তব্য করে রহমাতুল মুনিম বলেন, এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ শতাংশ কর দেয়ার মাধ্যমে সুযোগটি দেয়া হয়েছে। কমপ্লায়েন্স ও টাকা পাচার রোধের বিবেচনা থেকেও কালো টাকা বৈধ করার পক্ষে যুক্তি দেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, কমপ্লায়েন্সের বিষয়টি আমরা যখন এনশিওর করতে যাচ্ছি, তখন দেখা যাচ্ছে কিছু অপ্রদর্শিত জিনিস রয়ে গেছে, যেগুলো ব্যবসায়ীরা দেখাতে চান, ব্যক্তি পর্যায়ে দেখাতে চান। নতুন করদাতা যারা, তারা করের আওতায় আসতে চান এবং এগুলো দেখাতে চান।
বিজ্ঞাপন
সেজন্য আমরা এ ধরনের একটি সুযোগ করে দিয়েছি। আরও একটি বিষয় হল, কালো টাকা যারা তৈরি করেন, আমরা কথায় কথায় বলি, কালো টাকাকে যারা প্রশ্রয় দেন, তারা অর্থনীতিতে এই কালো টাকাকে ব্যবহারের জন্য করেন না।
কালো টাকা মূলত দেশের বাইরেই বেশি চলে যায় এবং বিভিন্ন ভোগ বিলাসের কাজেই ব্যয় হয়ে যায়। সেই জায়গা থেকেই রিটার্নে বিষয়টি রাখার জন্য সুযোগটা রেখেছি বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করে তাদের অপ্রদর্শিত সম্পদ ট্যাক্স রিটার্নে সংযুক্ত করেন, তাহলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ অন্য কেউই কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবেন না।