মোঃ নজরুল ইসলাম লাভলু, কাপ্তাই (রাঙামাটি)।
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে ফুলের নাম দিয়েছিলেন উদয়পদ্ম। সেই বিরল প্রজাতির অপরুপ উদয়পদ্মের দেখা মিলেছে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে। রাঙামাটি জেলাধীন কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের বনফুল রেস্ট হাউসের সামনে সম্প্রতি ফুটেছে উদয়পদ্ম ফুল। বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাগনোলিয়া গ্র্যান্ডিফ্লোরা।
ফুল প্রেমিকদের কাছে ম্যাগনোলিয়া নামেই অধিক পরিচিত। উদয়পদ্মের বাংলা নাম হিমচাঁপা। হিন্দিতেও এর নাম হিমচাঁপা। উদয়পদ্ম দেখতে সাধারনত সাদা ডিম আকৃতির একটি ফুল। সাধারনত ফুল ফোটা শুরু হয় বসন্তের শেষ দিক থেকে, বর্ষাকাল পর্যন্ত ফুটতে থাকে, তবে গ্রীষ্মকালেই বেশি ফোটে। এগাছের পাতা দেখতে অনেকটা কাঁঠাল পাতার মত। ফুলটির মাঝে অনেক গুলো পুংকেশর আর ডিম্বাশয় ঘিরে আছে কয়েকটি পাপড়ি। তাই এই ব্যুহ ভেদ করে সহজে পরাগের কাছে ভিড়তে পারে না পোকামাকড়। এছাড়া এই উদয়পদ্ম দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি এটি সুঘ্রান যুক্ত। এটি সুগন্ধ ছড়িয়ে থাকে চারপাশে। আলো পড়লেই ঝলমল করতে থাকে ফুলটি। কিভাবে এই বিরল প্রজাতির আদিম উদ্ভিদ ফুলটি কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে এল বা এই ফুলটির চারা কবে রোপণ করা হয়েছে এবিষয়ে সঠিক কোন তথ্য জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে ২০০০ সালে যখন কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে বনফুল রেষ্ট হাউসটি স্থাপন করা হয় তখন হয়তো এই ফুলটির চারা রোপণ করা হয়। উদয়পদ্মের বিষয়ে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা মোঃ জাহিদুর রহমান মিয়া জানান, বাংলাদেশে ২০১২ সালের বণ্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-৪ অনুযায়ী উদয়পদ্মের এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত। উদয়পদ্ম বা হিমচাঁপা খুব ধীরে বর্ধনশীল একটি গাছ। এর বিবর্তন প্রক্রিয়া থেকে ধারণা করা হয় এটি একটি আদিম উদ্ভিদ। ওয়াশিংটন ভিত্তিক বৃক্ষ ও বাগান বিষয়ক অনলাইন কেয়াহেইস এস্টেটের তথ্য অনুযায়ী, বিবর্তনের ইতিহাস অনুসারে সবচেয়ে প্রাচীন উদ্ভিদ গুলোর একটি ম্যাগনোলিয়া। জীবাশ্ম নমুনা থেকে দেখা যায়, প্রায় একশ মিলিয়ন বছর আগে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ায় এ উদ্ভিদ ছিল। এই গাছ গুলোর সর্বোচ্চ উচ্চতা হয় ১৮ থেকে ৩০ মিটার। এটি যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের জাতীয় ফুল। উদয় পদ্ম গ্রীষ্ম ও উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এশিয়া, মেক্সিকো, পশ্চিম ভারতীয় দীপপুঞ্জ এবং মালয়েশিয়াতেও পাওয়া যায়। উদয়পদ্ম বা হিমচাঁপা মাঝারি আকারের একটি সপুষ্পক বৃক্ষ। ফুলের রঙ, সুগন্ধি এবং ধীরে বৃদ্ধির কারণে এই গাছটি নগরের ল্যান্ডস্কেপিং সজ্জার জন্য খুবই উপযোগী। উদয়পদ্ম সম্পর্কে কয়েকটি সূত্রে আরও জানা যায়, কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই উদয়পদ্মের নাম দেওয়ার পাশাপাশি তিনি তার কাব্যগ্রন্থে ম্যাগ্নোলিয়া বা উদয়পদ্মের কথা ও অনেকবার উল্লেখ করেছেন। এদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিন বনবিভাগের কাপ্তাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ এসএম মহিউদ্দীন জানান, বিরল প্রজাতির এই ফুলটি যেন কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষণ করা হয় সে বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহন করা হবে। এছাড়া এই প্রজাতির উদয়পদ্মের আরও কিছু গাছের চারা সংগ্রহ করে রোপণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।