বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থান একদিনে সংঘটিত হয়নি। এর পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক দলসমূহ ও জনগণের বহু বছরের মরণপণ লড়াই-সংগ্রাম। এবারকার ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রাম ষোল বছর ও ছত্রিশ দিনের। হঠাৎ কোনো ঘটনা সংঘটিত হয়নি।
আজ বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির দুই ‘শহীদ’ বদিউজ্জামাল ও আবদুল লতিফ স্মরণে দলের উদ্যোগে ‘রক্তেভেজা গণঅভ্যুত্থান- গণআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’-শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। কিন্তু সরকারকে তাদের ক্ষমতা ও এখতিয়ার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। আশা করি, রাজনৈতিক দল ও জনগণকে আস্থায় নিয়ে সরকার সফল হবে।’
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক সোহরাব হাসান বলেন, অতীতে কয়েকবার স্বৈরতন্ত্রের পতন হয়েছে; কিন্তু গণতন্ত্র আসেনি, জনগণেরও মুক্তি হয়নি। এবার সবাইকে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় শেষ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ভদ্রোচিত অনেকগুলো কমিশন হয়েছে। কিন্তু শ্রমজীবী মেহনতিদের অধিকার নিয়ে কোনো কমিশন হয়নি।
সভাপতির বক্তব্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার কাজ সম্পর্কে অস্পষ্টতার পাশাপাশি সমন্বয়হীনতাও দেখা যাচ্ছে, আত্মবিশ্বাসেরও ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার যাতে আবার বিশেষ কোনো স্বার্থান্বেষীদের কাছে কোনোভাবে জিম্মি হয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনে যে অস্থিরতা চলছে অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে নানা উসকানি, অনৈতিক চাপ ও প্রভাব মোকাবিলা করে তার নিরপেক্ষ চরিত্র বজায় রাখতে হবে। সরকার বিতর্কিত হলে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সাইফুল হক আশু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার উদ্যোগের পাশাপাশি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়াকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখে এটাকে পরিস্থিতি সামাল দিতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবস্থা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির এই সাধারণ সম্পাদক আশা করেন, জনআস্থা ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করবেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান ও আবু হাসান টিপুর যৌথ সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজুল হাকিম, এবি পার্টির আহবায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব আবু ইউসুফ সেলিম, নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার, সোনার বাংলা পার্টির সভাপতি আবদুন নূর, ডেমোক্রেটিক পিপলস পার্টির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ প্রমুখ নেতারা।
সভায় শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী। সাধারণ সভার শুরুতে এক মিনিট দাঁড়িয়ে গণঅভ্যুত্থানে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির দুই ‘শহীদ’ বদিউজ্জামাল ও আবদুল লতিফসহ হাজারো শহীদের অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়।