চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বৌদ্ধ ছাত্র সংসদ আয়োজিত ‘মানুষের আলোতে কাটুক ধর্মান্ধতার তমসা, পৃথিবীর বুকে শান্তির বারতা আসুক সহসা, এ স্লোগানকে ধারণ করে ‘শুভ প্রবারনা ‘উপলক্ষ্যে ১৫ অক্টোবর ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০০ টায় ‘গণমানুষের অস্থির মানসিক মুমূর্ষতার অবসানে বিশ্ব শান্তি ও সৌম্য সম্প্রীতির বধিষ্ণুতার প্রত্যয়ে প্রদীপ প্রজ্জ¦লন ও ফানুস উত্তোলন অনুষ্ঠান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ—উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পালি বিভাগের প্রফেসর এবং বিশ্ব শান্তি প্যাগোডার অধ্যক্ষ ড. জ্ঞান রত্ন শ্রমণ এবং অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন চবি পালি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব অরূপ বড়ুয়া।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চবি’র মাননীয় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব প্রবারনা পূর্ণিমা। তিনি বলেন, ‘মানুষ যখন পাপাচারে লিপ্ত হয় এবং সমাজে অন্যায়, অধর্ম, অরাজকতা সৃষ্টি করে তখনই মহামানবদের আবির্ভাব হয়। মানুষকে সত্য, ন্যায় এবং সুন্দরের পথে আনার জন্য গৌতম বুদ্ধ যখন এসেছিলেন তখন তিনি এই একটা কলুষিত সমাজকে ন্যায় এবং কল্যাণের পথে আনার জন্য চেষ্টা করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্ব আজ অরাজকতায় ভরপুর। আমরা চাই না পারস্পরিক হিংসা, বিদ্বেষ এবং পাপাচারিতে লিপ্ত সমাজ; আমরা চাই সত্য, সুন্দর এবং ন্যায়ের পক্ষে সমাজ। এটি একমাত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব যদি সকল ধর্মের অনুসারীরা স্ব স্ব ধর্ম পালন করে ন্যায়বোধ ও সম্প্রীতির মাধ্যমে জীবনাদর্শ ধারণ করলেই একটা সুন্দর সমাজ হতে বাধ্য।’ মাননীয় উপ—উপাচার্য আরও বলেন, ধর্মের নামে আমরা অধর্ম দেখতে চাই না; সত্য, সুন্দর এবং ন্যায়ের পথে সমাজ বিনির্মাণ করতে চাই। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে চাই। যেখানে থাকবে মাল্টি কালচারাল, মাল্টি ডিসিপ্লিন এবং মাল্টি রিলিজিয়ান। কোন অবস্থাতেই এক ধর্মের উপর অন্য ধর্মের প্রভাব বিস্তার করা যাবে না। এখানে আমরা সকলকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করবো এবং সকলের অধিকার সমুন্নত রাখব। কোন প্রকার বৈষম্য চলবে না। সকলের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা যাতে নির্ভয়ে—নির্বিগ্নে পড়ালেখা শেষ করে ডিগ্রী অর্জন করতে পারে সেই ব্যবস্থাই আমরা করতে চাই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবারের সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই।’ এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছে। অনুষ্ঠানে মাননীয় উপ—উপাচার্য (একাডেমিক) প্রদীপ প্রজ্জ¦লন করেন এবং ফানুস উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে চবি প্রক্টর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তানভীর হায়দার আরিফ অনুষ্ঠান আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় জীবন গঠন করতে হবে। এত সুন্দর একটি দেশ এখানে সাম্য আছে, সম্প্রীতি আছে, অসাম্প্রদায়িকতা আছে এবং সকল ধর্ম-গোত্রের মানুষের বিচরণ আছে। আমরা অনেক বেশি সহনশীল।’ প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বদ্ধপরিকর। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে ভুল পথে পরিচালিত না হয় সে লক্ষ্যে তাদেরকে কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। জুলাই বিপ্লবে শিক্ষার্থীরা জাতিকে নতুন পথ দেখিয়েছে। তাদেরকে আদর্শ মানুষ ও সুনাগরিক হিসেবে তৈরি করতে পারলেই রক্তে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ সার্থক হবে।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ভদন্ত নিরোধানন্দ ভিক্ষু, ভূবন চাকমা, পল্লী বড়ুয়া, নিশান বড়ুয়া, কংকন বড়ুয়া অন্তু, পুনম বড়ুয়া নিশান ও প্রান্ত বড়ুয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জনি বড়ুয়া। অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক বৌদ্ধ ধর্মালম্বী শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।