সততা ও পেশাদারিত্বের সাথে ক্ষুরধার লেখনির মাধ্যমে সাংবাদিকতা চর্চা করে দেশ-জাতির কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত রাখতে হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ অনুষদ মিলনায়তনে আজ সকালে চবি সাংবাদিক সমিতির (চবিসাস) ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী-২০২৪ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার এ কথা বলেন।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর, ২০২৪) সকাল ৯:০০ টায় চাকসু কেন্দ্রের সামনে থেকে চবিসাসের শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি শহীদ মিনার ও প্রশাসনিক ভবন প্রদক্ষিণ করে চাকসু কেন্দ্রে এসে শেষ হয়। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ অনুষদ মিলনায়তনে সকাল ৯:৪৫ টায় আলোচনা সভা শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মোঃ কামাল উদ্দিন, চবি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোঃ এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী, চবি প্রক্টর প্রফেসর ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ, চবি ছাত্র-ছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন, চবি অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলের প্রভোস্ট জনাব এ. জি. এম. নিয়াজ উদ্দিন, চবি পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মোরশেদুল ইসলাম এবং উক্ত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জনাব শাহাব উদ্দিন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে “বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশে গণমাধ্যমের কেমন সংস্কার চাই?” শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চবি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও
সাবেক সভাপতি ড. মোঃ শহীদুল হক এবং “বিপ্লব-পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারে সাংবাদিকদের ভূমিকা” শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চবি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব খ. আলী আর রাজী।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জনাব শাহরিয়াজ মোহাম্মদ, চবি সংবাদিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনাব ইমাম ইমু, চবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জনাব আব্দুল্লাহ্ আল নোমান, চবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি জনাব নাহিদুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক জনাব খান তালাত মাহমুদ রাফি, রাষ্ট্রচিন্তা, চবি’র সভাপতি জনাব এসবি ফররুখ হোসেন রিফু ও চবি গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের ধ্রুব বড়ুয়া বক্তব্য রাখেন।
মাননীয় উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর তরুণ সাংবাদিকদের কী ধরনের সাংবাদিকতা করতে হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। তরুণরা কি মানিক মিয়া ও নুরুল কবিরের মত, নাকি ইকবাল সোবহান ও মুন্নি শাহার মত সাংবাদিকদের অনুসারী হবে, সেটা তাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করে সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করেছে।
চবি উপাচার্য বলেন, বর্তমান সাংবাদিকদের মধ্যে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও সিরিজ সাংবাদিকতা দেখতে না পাওয়ায় হতাশ হই আমি। এ ধরনের রিপোর্ট না হওয়ার কারণে সমাজে অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়ন ইত্যাদি বেড়েই চলছে। তিনি সাংবাদিকদের পোষা সাংবাদিক না হয়ে অনুসন্ধানী সিরিজ রিপোর্টের মাধ্যমে টিআইবি’র মত সম্মানজনক পুরষ্কার অর্জনের পরামর্শ দেন।
প্রসঙ্গক্রমে মাননীয় উপাচার্য বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে উচ্চ পদে আসীন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চবি ওয়েবসাইটে তাদের প্রকাশনাসহ একাডেমিক তথ্য সংযুক্ত করে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে র্যাংকিং সূচকে এগিয়ে নিতে হবে। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন। মাননীয় উপাচার্য গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংস্কার কমিশন গঠন করায় অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ধন্যবাদ জানান। একইসাথে শিক্ষা সংস্কার কমিশন নামে একটি কমিটি গঠনের জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের নিকট জোর দাবি জানান।
মাননীয় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন চবি সাংবাদিকদেরকে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার মূল স্রোতে অবদান রাখায় এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চবি সাংবাদিক সমিতির সদস্যবৃন্দ দেশের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রত্যক্ষভাবে অবদান রাখায় বিশেষ ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বিগত সরকারের সাড়ে পনের বছরের শাসনামলে সাংবাদিকদের চাপ প্রয়োগ করে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। এটা খুবই দুঃখজনক। সরকারের জুলুম, অন্যায়সহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজে দেশের বিভিন্ন শ্রেণির মানুুষ যোগ দিয়েছে, এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, একটি রাষ্ট্রের চরিত্র যখন নষ্ট হয়, তখন সাংবাদিক, আমলা, পুলিশসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ দেশ থেকে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। এমনটা আমাদের প্রত্যাশা ছিলো না। তিনি সাংবাদিকদের পেশাদারিত্বের সাথে সাংবাদিকতা চর্চার মাধ্যমে দেশ-জাতির কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানান।
চবিসাস সভাপতি মোহাম্মদ আজহার বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল আমাদের নিজেদেরকে ভেঙে নতুন করে গড়ার আন্দোলন। আমরা সংবাদের জন্য সংবাদ মাধ্যমের ওপর নির্ভর ছিলাম। কিন্তু জুলাই আন্দোলনে আমরা একজন ব্যক্তি একটি মিডিয়ার ভূমিকা পালন করেছি। চবি সাংবাদিক সমিতি একটি মিডিয়ার ভূমিকা পালন করেছে। যে সাংবাদিক সমিতির পেজে শুধু বিবৃতি ছাড়া কিছু যেত না, সেই পেজ প্রতিদিন লাইভ সম্প্রচারের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামের খবর সারা বাংলাদেশের মানুষের নিকট পৌঁছে দিয়েছিল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সাংবাদিকরা এই কাজ করেছে। আমাদের এই কলমের লড়াই সবসময় অব্যাহত থাকবে।