শফিউল আলম, রাউজান: চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার ৪ নং গহিরা ইউনিয়নের কোতয়ালী ঘোনা সুলতান নসরত বাদশার দিঘি, ১৫ নং নোয়াজিশপুর ইউনিয়নের নোয়াজিশপুর ঈশা খা দিঘি, হলদিয়া ইউনিয়নের বৃকবানপুর এলাকায় বৃকবানুপুর দিঘি, ১১ নং পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের মগদাই জলপাইন্যার দিঘি, ৮ নং কদলপুর ইউনিয়নের কদলপুর লস্কর উজির দিঘি, পাহাড়তলী ইউনিয়নের মহামুনি দিঘি, বাগোয়ান ইউনিয়নের বাগোয়ান কোয়ে পাড়া কিবরিয়া বাড়ী পুকুরে শীতের মৌসুমে ঝাকেঁ ঝাকেঁ দল বেধে অতিথি পাখী আসছে । প্রতিদিন পাখীর কিচির মিছির শব্দে এলাকা মুখরিত হয়ে উঠেছে । এসব এলাকায় পুকুর দিঘিতে অতিথি পাখী দেখতে প্রতিদিন বিনোদন প্রত্যাশী মানুষ দল বেধে এসে অতিথি পাখীর কিচির মিছির শব্দ শুনে আনন্দে বিমোহিত হয়ে পড়ছে ।
এছাড়া ও হালদা নদীতে জেগে উঠা নোয়াপাড়া ইউনিয়নের মোকামী পাড়ার বিপরিতে হালদার চর, কর্ণফুলী নদীর তীরে জেগে উঠা ছায়ার চর , হালদা নদীর মোহনায় ঝাকেঁ ঝাকে অতিথি পাখীর বিচরন করছে । অতিথি পাখি ও প্রকৃতির এক অপরূপ মেলবন্ধন এখন চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের কোয়েপাড়া গ্রামের গোলাম কিবরিয়া বাড়ির বিশাল পুকুর। শীতের শুরু থেকে এই পুকুরে ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে অতিথি পাখির দল। ভোরবেলা হলে পাখির কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভাঙে এখানকার মানুষের। এসব বিদেশী পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে শুধূ এই গ্রামে নয়, উপজেলার কদলপুর লস্কর দিঘি, গহিরা নরসরত বাদশা দিঘি, রায় কুকুট দিঘি, নোয়াজিষপুর ঈসা খাঁ দিঘি, হালদা নদীসহ বড় আকৃতির জলাশয় গুলোতে এখন অতিথি পাখির মেলা বসেছে। আর এই পাখিদের ডাকে ঘুম ভাঙছে কয়েক গ্রামের মানুষের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের কোয়েপাড়া গ্রামের গোলাম কিবরিয়া বাড়ির জামে মসজিদের পুকুরে অতিথি পাখিদের অবাধ বিচরন, জলকেলি ও কিচিরমিচির কলতানে মুখর পুকুটি। এই পুকুরের স্বচ্ছ পানির উপর দিয়ে ডানা ঝাপটে উড়ে বেড়াচ্ছে পাখিরা। আবার কেউ কেউ এক পায়ে দাঁড়িয়ে পুকুরে থাকা বাঁশের উপর ঘুমাছেন সেই দৃশ্য মুগ্ধ করছে। সন্ধ্যা হলে আশ্রয় নেয় আশেপাশের গ্রামের গাছগাছালিতে। সকাল হলে আবারও তাদের শুরু হয় ব্যস্ততা। এলাকার প্রকৃতিপ্রেমীরা প্রতিদিন বৈচিত্র্যময় এ দূশ্য দেখতে ভিড় করেন। বিশেষ করে কোয়েপাড়া গ্রামের পাশে কর্ণফুলী নদী ঘিরে খেলার ঘাটে বসে পর্যটকের মেলা। সেখানে বেড়াতে আসা লোকজন খবর পেয়ে অতিথি পাখির সৌন্দর্য উপভোগ করে যাচ্ছেন। কোয়েপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইলিয়াস চৌধুরী বাচ্চু বলেন, একসঙ্গে এত পাখি আমাদের মুগ্ধ করেন। অতিথি পাখি আমাদের গ্রামে এসে আমাদের গ্রামকে আলোকিত করেছেন। পাখিগুলোর জন্য প্রায় ৩ হাজার টাকা খরচ করে এই পুকুরে তাদের জন্য বাঁশবেঁধে দিয়েছি। যাতে তারা সেখানে বসে বিশ্রাম নিতে পারেন। তিনি জানান গত পাঁচবছর ধরে এই পুকুরে অতিথি পাখিরা দলবেঁধে বেড়াতে আসেন। এই অতিথি পাখিদের অতিথি হিসেবে আমাদের গ্রামের ছোটবড় সবাই স্বাগত জানান। যখন পাখিগুলো থাকে, তখন পুকুটি মুখর করে রাখে। আবার যখন থাকে না, তখন পুকুটি শূন্য শূন্য মনে হয়। পাখিগুলোকে সবসময় দেখে রাখি, যাতে কেউ তাদের বিরক্ত না করেন।
আগত অতিথি পাখি গুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এলাকার সকল মানুষ আন্তুরিক ভাবে দেখভাল করেন। তাই রাউজানকে নিরাপদ মনে করেন আগত অতিথি পাখিরা। রাউজান উপজেলার ১৫ নং নোয়াজিশপুর ইউনিয়নের আবদুল অদুদ চৌধুরী সড়কের পাশে ঈশা খা দিঘি । দিঘির পশ্চিম পাড়ে রয়েছে নান্দনিক নোয়াজিশপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, এলাকাবাসীর কবরস্থান । উত্তর পাড়ে রয়েছে নোয়াজিশপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, পুর্ব পাড়ে রয়েছে সনাতন ধর্মীয় অনুসারীদের শশ্বান । বিশাল আয়তনের ঈশা খা দিঘী । রাউজানের সুন্দর ঐতিহবাহী ঈশা খা দিঘিতে প্রতি বৎসর শীতের মৌসুমে আসে অতিথি পাখীর দল । শীতের মৌসুম শেষে অতিথি পাখী দিঘি ছেড়ে চলে যায় । রাউজানের ৮নং গহিরা ইউনিয়নের কোতায়ালী ঘোনা এলাকায় রয়েছে বিশাল আয়তনের সুলতান নসরত বাদশা দিঘি । ঐ দিঘির দক্ষিন পাড়ে রয়েছে বিশাল পাকা ঘাট, কবরস্থান, পশ্চিম ও উত্তর পাড়ে এলাকাবাসীর কবরস্থান । নসরত বাদশার দিঘিতে ও শীতের মৌসুমে হাজার হাজার অতিথি পাখী আসেন । শীতের মৌসুম শেষে অতিথি পাখীরা চলে যায় । এবার ও শীতের মৌসুমে ঈশা খা দিঘি ও নসরত বাদশার দিঘিতে এসেছে হাজার হাজার অতিথি পাখী । অতিথি পাখীরা দল বেধে দিঘিতে বিচরন করছে । অতিথি পাখীর কিচির মিছির শব্দে এলাকা মুখরিত হয়ে উঠেছে ।
অতিথি পাখীর এই কোলাহল দেখতে প্রতিদিন এলাকার বিভিন্ন বয়সী লোকজন এসে ঈশা খা দিঘি ও নসরত বাদশার দিঘিতে আসেন বলে জানান কোতয়ালী ঘোনা এলাকার বাসিন্দ্বা শাহজাহান ও নোয়াজিশপুর নদীম পুর এলাকার বাসিন্দ্বা রাশেদ । এছাড়া ও নোয়াজিশপুর নদীম পুর দিঘিতে ও অতিথি পাখীর বিচরন দেখা যায়। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও হালদা গবেষক ড.মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, সারাবিশ্বে প্রায় ১২ হাজার প্রজাতির পাখি রয়েছে এর মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ৭শত প্রজাতির পাখি আছে। এর মধ্যে ৩’শত প্রজাতির পরিযায়ী পাখী। যার দুইশত দশ প্রজাতির পাখি শীতকালে বাকি পাখি অন্যসময় বিশেষকরে গ্রীস্মকালে আসে। শীতে বরফে যখন সব ঢেকে যাই এবং খাদ্য সংকট তৈরি হয় তখনই এসব পাখি প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য, পর্যাপ্ত খাদ্যে এবং নিরাপদ প্রজননের জন্য রাশিয়া, সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, তিব্বত, চীন, ইউরোপ, ফিলিপাইন, এশিয়ার কিছু এলাকা, হিমালয় পর্বতমালার আশপাশ থেকে তুলনামূলক আমাদের দেশে কম ঠান্ড ও খাবার পাওয়া যায় তাই এসব এলাকায় আসে তারা। তিনি জানান, পরিযারী পাখি প্রায় ১০ থেকে ১১ হাজার মাইল অতিক্রম করে বাংলাদেশে আসে তখন আমাদের দেশের জলশায়গুলোতে পানি কমে যায় এবং প্রচুর খাদ্য পাওয়া যায়। মার্চের শেষের দিকে যখন গরম পড়ে এবং শীতপ্রধান এলাকায় বরফ গলা শুরু করে তখন আবার এরা দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে নিজের দেশে ফিরে যায়।