চীনের প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান `সেকেন্ড ইনস্টিটিউট অফ ওশানোগ্রাফি`(এসআইও)-র সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি ওশান স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ সম্পর্কিত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে চবি কর্তৃপক্ষ ।
চীনের অন্যতম ডিজিটাল সিটি হ্যাংঝুতে অবস্থিত এসআইও কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে চবির সম্মানিত উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড মোঃ কামাল উদ্দিন ও ওশানোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ও উল্লিখিত গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের চবির ফোকাল পারসন ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন গত ১৬ই ডিসেম্বর চীনের উদ্দেশে যাত্রা করেন। তারা ১৭ ও ১৮ই ডিসেম্বর ২০২৪ হ্যাংঝুস্থ এসআইও-র সকল অত্যাধুনিক রিমোট সেন্সিং ও ডাটা এনালাইসিস ল্যাব, চলমান গবেষণা কার্যক্রম ও এসআইও ক্যাম্পাসস্থ প্রধান ওশান স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন ও লিনানস্থ ওশান স্যাটেলাইট বেইজ স্টেশন পরিদর্শন করেন এবং কয়েক দফা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মিটিং শেষে ১৯শে ডিসেম্বর ২০২৪ এ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এসআইও-র পক্ষে স্বাক্ষর করেন প্রতিষ্ঠানপ্রধান তথা ডাইরেক্টর জেনারেল অধ্যাপক ড. ফ্যাং ইংজিয়া (Fang Yinxia) ও চবির পক্ষে উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মেরিন স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপিত হলে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট গবেষকদের জন্য বাংলাদেশের সমুদ্র, আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষণার সুযোগ ও সক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। এ বিষয়ে চবি ওশানোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান ড মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন বলেন, ওশান স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন (Ocean Satellite Ground Station) এর গুরুত্ব অনেক ব্যাপক এবং তা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্ব বহন করে। এর মধ্যে কিছু মূল কারণ হল:
১. সামুদ্রিক তথ্য সংগ্রহ: স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন সমুদ্রের উপর স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ ও বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি সমুদ্র সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য যেমন জলবায়ু, তরঙ্গ, সাগরের স্তর, তাপমাত্রা, শৈবাল এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্যারামিটার সংগ্রহে সহায়তা করে।
২. প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা: স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন টাইফুন, সুনামি, ঝড় ইত্যাদির পূর্বাভাস এবং পর্যবেক্ষণ করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে যথাসময়ে সতর্কতা প্রদান করা যাবে, যার ফলে মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব।
৩. মৌসুমি ও জলবায়ু গবেষণা: স্যাটেলাইটের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের নিরীক্ষণ করা সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তন ও তাপমাত্রার পরিবর্তনসহ বিভিন্ন পরিবেশগত বিষয়গুলি পর্যবেক্ষণ করা এ গ্রাউন্ড স্টেশনের মাধ্যমে হয়, যা সমুদ্রবিদ্যা ও জলবায়ু গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪. মৎস্য শিকার ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা: এ গ্রাউন্ড স্টেশন মাছের উপযোগী (fishery) পরিবেশ, মাছের জীবনচক্র ও অন্যান্য সামুদ্রিক সম্পদগুলির প্রাপ্যতা সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে। এটি মৎস্য শিকার শিল্প ও সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করে।
৫. জাতীয় নিরাপত্তা ও সমুদ্র গবেষণা: স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন সামুদ্রিক অঞ্চলগুলোর উপর নজরদারি ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে সহায়তা করে, যা জাতীয় নিরাপত্তা ও সমুদ্র গবেষণার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৬. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন আন্তর্জাতিক পরিসরে সমুদ্র গবেষণায় সহযোগিতা ও তথ্য বিনিময়কে উৎসাহিত করে। এটি বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মধ্যে তথ্য শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে বৈশ্বিক সমুদ্র বিষয়ক গবেষণায় অবদান রাখে।
সামগ্রিকভাবে, ওশান স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন বাংলাদেশের সামুদ্রিক গবেষণা, পরিবেশ পর্যবেক্ষণ, দুর্যোগ মোকাবিলা ও সমুদ্রসম্পদ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের মাধ্যমে টেকসই সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশীয় ও বৈশ্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে।