রাউজানে পাহাড় টিলা কাটা ও বৃক্ষ নিধন চলছে অবাধে
শফিউল আলম, রাউজান ঃ রাউজানের পাহাড়ী এলাকায় চলছে নির্বিচারে পাহাড় ও টিলা কাটা চলছে বৃক্ষ নিধন বৃক্ষ নিধন করে গাছ নেওয়ার সময়ে দুগ্রুপের সংঘর্ষ গুলিবিদ্ব ৩ জন । চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার পাহাড়ী এলাকা কদলপুর আশরফ শাহ মাজারের পাশে, কমলার টিলা. দক্ষিন শমশের পাড়া, ভোমর পাড়া, শমশের পাড়া, কালকাতর পাড়া, ৭নং রাউজান ইউনিয়নের শমশের নগর, ভোমর ঢালা, রাণী পাড়া, জয়নগর, রশিদা পাড়া, পুর্ব রাউজান, মুখছড়ি, চিকনছড়া, রাউজান পৌরসভার পুর্ব রাউজান, ঢালার মুখ, রাউজান রাবার বাগান, জঙ্গল রাউজান, আইলী খীল, আইলী খীল দাওয়াত খোলা, ওয়াহেদের খীল, ডাবুয়া ইউনিয়নের মেলুয়া, কলমপতি সুড়ঙ্গা, রাধামাধবপুর, হলদিয়া ইউনিয়নের বৃন্দ্বাবন পুর, বৃকবানপুর, উত্তর আইলী খীল, বানারস, গলাচিপা, জানিপাথর এলাকা সমুহে পাহাড় টিলা কাটা হচ্ছে নির্বিচারে। সরকারী বন বিভাগের মালিকানাধীন পাহাড় টিলায় থাকা বৃক্ষ নিধন করে নিধন করা বৃক্ষ ট্রাক, জীপ ভর্তি করে নিয়ে যাওয়ার পর মাটি খোকো ও গাছ খোকো সিন্ডিকেটের সদস্যরা পাহাড় টিলা ভেকু দিয়ে কাটার পর পাহাড় ও টিলা কাটা মাটি ড্রাম ট্রাক ভর্তি করে রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় পুকুর জলাশয়, কৃষি জমি ভরাট কাজে নিয়ে যায় সড়ক পথে । রাউজানের কদলপুর এলাকায় পাহাড় টিলা কাটা সিন্ডিকেটের সদস্যদের মধ্যে পাহাড়, টিলা কাটা মাটি বিক্রয় ও পাহাড় টিলা থেকে নিধন করা বৃক্ষ বিক্রির টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দন্দ্ব হওয়ায় বাচুল নামে এক যুবদল নেতা সহ ২জন আহত হয় ।
গত ২৫ ডিসেম্বর বুধবার দিবাগত রাত ১০ টার সময়ে রাঙ্গুনিয়া থেকে গাড়ীতে করে নিয়ে যাওয়ার সময়ে অপর একটি গ্রুপ গাছ ভর্তি নসিমন আটক করে । গাছ ভর্তি নসিমন কদলপুরে নিয়ে যায়। এসময়ে গাছ ভর্তি গাড়ী আটককারী গ্রুপের হামলায় গাছ ভর্তি গাড়ীতে থাকা তিনজন গুলিবিদ্ব হয়। কদলপুর ইউনিয়নের আশরাফীয়া দরবারের প্রধান ফটক এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।গুলিতে আহতরা হলেন- পাহাড়তলী ইউনিয়নের বদুপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল বারেকের ছেলে জামাল উদ্দিন (৫৫), বাগোয়ানের গশ্চি গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে মো. মামুন (৩২), আবুল হোসেনের ছেলে মাহবুব আলম (৩০)। জামাল উদ্দিন ও মাহবুব আলম বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। রাউজান থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে গাছের গুড়িসহ নছিমনটি উদ্ধার করে গাছের মালিক বলিরহাটের ফার্নিসার ব্যবসায়ী মো. ইলিয়াসকে বুঝিয়ে দেন। পুলিশ আসার পূর্বে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পে দায়িত্বরত পুলিশের উপপরিদর্শক আলাউদ্দিন নিশ্চিত করে বলেন, গত বুধবার রাতে রাউজানে ডাকাতে গুলিতে আহত তিনজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আহত জামাল উদ্দিনের বড় ভাই মোজাম্মেল জানান, গত বুধবার রাতে আমাদের এক নিকটাত্মীয়ের মালিকানাধীন গাছের গুড়ি ভর্তি একটি নছিমন রাঙ্গুনিয়ার শিলক হতে চট্টগ্রাম নগরীর বলিরহাট নিয়ে যাওয়ার পথে পাহাড়তলী চৌমুহনী পৌঁছালে অস্ত্রধারী একদল দুর্বৃত্ত গাড়িটি ছিনতাই করে উত্তরে কদলপুরের আশরাফীয়া দরবারের গেইটের ভিতরে নিয়ে যায়।
আত্মীয় বিষয়টি খোঁজ নিতে বললে আমার ভাই অটোরিকশা যোগে সেখানে গেলে ছিনতাইকারীরা কিছু বুঝে উঠার আগে গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে জামালসহ আরো দুইজন আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয়রা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। আহতে পরিবার জানিয়েছেন এই বিষয়ে মামলা দায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অপরদিকে রাউজান উপজেলার ডাবুয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের হাসান চৌধুরীর বাড়ির সামনে রায় কিশোরী সড়ক নামে একটি সরকারি সড়ক থেকে গত কয়েকদিন ধরে অর্ধশতাধিক গাছ কাটা হচ্ছে। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে জানা যায়, হাসান চৌধুরী বাড়ির বাসিন্দা ইকবাল চৌধুরী নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি গাছগুলো কাটছেন। ইকবাল চৌধুরী নামে ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নয়, গাছগুলো বড় মিয়া আলী মাহাবুব বিক্রি করে দিয়েছেন। যারা কিনেছেন তারাই কাটছেন। পরে আলী মাহাবুবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বন বিভাগের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে গাছগুলো কাটা হচ্ছে। গাছ কাটার কাজে নিয়োজিত এক শ্রমিক বলেন, আমাদের মালিক গাছগুলো ৭০ হাজার টাকায় কিনেছেন বলে শুনেছি। আপনি, যিনি বিক্রি করেছেন তার সঙ্গে কথা বললে জানতে পারবেন।
তবে অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন ইছামতি রেঞ্জের রাউজান ঢালার মুখ স্টেশন অফিসার উজ্জল কান্তি মজুমদার বলেন, ‘কাউকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। পাহাড় টিলা কাটা প্রসঙ্গে ষ্টেশন অফিসার উজ্জল কান্তি মজুমদার বলেন, কয়েকটি স্থানে পাহাড় টিলা কাটায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও রাউজান উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। আর আমরা কাউকে অনুমতি দিতে পারিনা।’ এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাউজান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. রিদুয়ানুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি সড়কের গাছ কেউ চাইলে কেটে বিক্রি করতে পারবে না। আমরা কাউকে গাছ কাটার অনুমতি প্রদান করিনাই।’ পাহাড় ও টিলা কাটায় কদলপুর ও পুর্ব রাউজানে অভিযান চালানো হয়েছে । পাহাড় টিলা কাটা হলে আবারো অভিযান চালানো হবে ।