এরই মধ্যে গুঞ্জন চলছে ওয়ানডে ক্রিকেট থাকবে কিনা! টেস্ট ক্রিকেটও এখন প্রায় বিপন্ন। বলার অপেক্ষা রাখেনা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দাপটে এই দুই ফরম্যাট নিয়ে প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে শঙ্কা। আর ফ্র্যাঞ্জাইজি লীগে টাকার ঝনঝানিতে ক্রিকেটাররাও ঝুঁকছেন সেই দিকেই। ভারতের আইপিএল’র হাত ধরে একে একে বাংলাদেশে বিপিএল, অস্ট্রেলিয়াতে বিগব্যাশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজে সিপিএল, শ্রীলঙ্কায় এলপিএল, পকিস্তানে পিএসএল সহ ফ্র্যাঞ্জাইজি লীগ বছরজুড়েই আয়োজন হচ্ছে। আর দুবাইয়ে টি-টেন লীগে খেলতেও ক্রিকেটাররা থাকেন মুখিয়ে। অন্যদিকে ভারত, অস্ট্রেলিয়ার মতো বড় দেশের টি-টোয়েন্টি আসরগুলোতে সুযোগ পায় না বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। বেশির ভাগ বিদেশ লীগে দেশের অন্যতম তারকা সাকিব আল হাসানকেই দেখা যায় টাইগারদের ব্র্যান্ডঅ্যাম্বাসেডর হিসেবে। এই বছর থেকে শুরু হওয়া জিম আফ্রো টি-টেন ও কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টিতে খেলছে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার।
যেমন- প্রথবার বিদেশে ফ্র্যাঞ্জাইজি লীগ খেলার সুযোগ হয়েছে মুশফিকুর রহীম, তাসকিন আহমেদদের। শ্রীলঙ্কা প্রিমিয়ার লীগেও ডাক পেয়েছেন তাসকিন, তাওহীদ হৃদয় শরীফুল ইসলামরা। আর তাই বছরে দু’টি বিদেশ লীগ খেলতে পারবে দেশের ক্রিকেটাররা এমন সিদ্ধান্তের কথাও পুনঃবিবেচনার কথা ভাবছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বিসিবি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামুদ্দিন সুজনের কণ্ঠেও। গতকাল সংবাদ মাধ্যমে তিনি বলেন, ‘এর আগে আমাদের একটা পলিসি ছিল যে, (বছরে) সর্বোচ্চ দুইটা লীগে আমরা অনুমতি দেবো। কিন্তু এখন যেভাবে ঘরোয়া লীগগুলো হচ্ছে, এর ফলে সংখ্যায় না গিয়ে, ওয়ার্কলোডটাকে বিবেচনায় নিচ্ছি। আন্তর্জাতিক ম্যাচ, ঘরোয়া লীগ খেলার জন্য যে ওয়ার্কলোড দরকার, এগুলো বিবেচনা করে এবং ভবিষ্যতে যে টুর্নামেন্টগুলো আছে, সেগুলোতে অংশগ্রহণও আরেকটি বিবেচনার বিষয়। সবগুলো বিবেচনা করেই আমরা ছাড়পত্র দিচ্ছি।’ আসন্ন লঙ্কান প্রিমিয়ার লীগে সুযোগ পেয়েছেন বাংলাদেশের কয়েকজন ক্রিকেটার।
সাকিব আল হাসানের খেলা নিশ্চিত হয়েছে আগেই। এছাড়াও তার দলে খেলছেন জাতীয় দলের বাইরে থাকা। এছাড়া শরীফুল ইসলাম ও তাওহীদ হৃদয়কেও অনাপত্তিপত্র দিয়েছে বিসিবি। তবে তাসকিন আহমেদ পাননি সেটি। এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন নিজামুদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘লঙ্কান প্রিমিয়ার লীগে এখন পর্যন্ত তাসকিনের বিষয়টা বিবেচনায় আছে। তার যে সামপ্রতিক অংশগ্রহণও ছিল, তার ওয়ার্কলোড বিবেচনা করে হয়তো এই লঙ্কান প্রিমিয়ার লীগে আমরা তাসকিনের বিষয়টাকে ভিন্নভাবে চিন্তা করছি। অন্যান্য ক্রিকেটার যাদের, প্রায় সবাইকেই আমরা ছাড়পত্র দিচ্ছি।’ অন্যদিকে বেশি লীগ আয়োজন হওয়া ও বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কদর বাড়াকেও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিসিবি’র প্রধান নির্বাহী। তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্রিকেটের জন্য এটি একটি ইতিবাচক দিক যে, দেশের বাইরের বিভিন্ন লীগে ডাক পাচ্ছে। সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বোর্ড যেটা করছে, প্রতিটি ক্রিকেটারের ওয়ার্কলোড এবং তাদের আগের অংশগ্রহণ ও ভবিষ্যৎ অংশগ্রহণ- সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আমরা অনাপত্তিপত্র দেয়ার পরিকল্পনা করেছি। সেভাবেই আমাদের ক্রিকেটারদের অনাপত্তিপত্র দেয়া হচ্ছে।’
বিবেচনায় তাসকিনের ক্ষতিপূরণও
৩০শে জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া এলপিএল’র জন্য সাকিব আগে থেকেই অনাপত্তিপত্র নিয়ে রেখেছেন। জাতীয় দলের বাইরে থাকায় মিঠুনকে নিয়েও সমস্যা হয়নি। সবকিছু ঠিক থাকলে ২৯শে জুলাই থেকে এশিয়া কাপের প্রাথমিক স্কোয়াড নিয়ে ক্যাম্প শুরু করবে বিসিবি। তাই গোটা আসর নয়, কয়েক ম্যাচের জন্য ছাড় পাচ্ছেন হৃদয়-শরীফুল। তবে তাসকিনকে অনাপত্তিপত্র দিচ্ছে না বিসিবি। এর আগেও আইপিএল, পিএসএল ও কাউন্টিতে খেলার জন্য ডাক পেয়েও খেলা হয়নি এই পেসারের। দেশের জন্য টাকার কথা বাদ দিয়ে এইসব আসরে না খেলাতে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে তাসকিনকে। এবার এলপিএল-এ না খেলাতেও তাকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে কিনা তা নিয়ে বিসিবি’র প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘আগে আমরা অনাপত্তিপত্রের বিষয়টি ঠিক করি কারণ তার (তাসকিন) ছাড়পত্রের বিষয়টি বিবেচনায় আছে। তারপর এই ধরনের ক্ষতিপূরণ যেহেতু অতীতে দেয়া হয়েছে, এটি আলোচনার বিষয় হতে পারে। তবে এই মুহূর্তে এটার ব্যাপারে বলতে পারবো না। এটা অবশ্যই বোর্ডের পলিসি’র ব্যাপার। বোর্ড এটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।’
তামিমের বিষয় ক্লাসিফাইড
ইনজুরির কারণে এশিয়া কাপ কিংবা বিশ্বকাপ খেলা হবে কি তামিম ইকবালের! এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো জানা যাবে দিন কয়েক বাদেই। এরই মধ্যে তিনি আছেন ইংল্যান্ডে। সেখানে চিকিৎসককে দেখিয়েছেন। জানা গেছে, অস্ত্রোপচার লাগলে তিনি দু’টি আসরই মিস করবেন। আর ইনজেকশন নিয়ে খেললে শতভাগ ফিট হয়ে খেলতে পারবে না। যে কোনো সময় দেখা দিতে পারে ইনজুরি। কি অবস্থা তার! বিসিবি’র সঙ্গে ৩১শে জুলাই তার আলোচনায় বসার কথা। সেখানেই তার বিষয়ে হবে সিদ্ধান্ত। তবে তামিমের ইনজুরি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ বিসিবি’র প্রধান নির্বাহী। নিজামুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘শুধু তামিমের বিষয় নয়। যেকোনো ক্রিকেটারের মেডিকেল এসেসমেন্টের বিষয়টা খুবই ক্লাসিফাইড ইনফরমেশন। এই ইনফরমেশনগুলো আমরা যতটুকু শেয়ার করতে পারবো, ততোটুকুই শেয়ার করবো। যখন সময় হবে, আমরা আপনাদের… প্লেয়ারদের সঙ্গে আলোচনার বিষয় আছে। সবকিছু আলোচনার পর সিদ্ধান্ত যখন হবে, তখন আমরা অফিসিয়ালি জানিয়ে দেবো।’


