লম্বা সময় ধরে ভোগা পিঠের ইনজুরি থেকে রেহাই পেতে লন্ডনে চিকিৎসা করাতে গেছেন তামিম ইকবাল। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে পিঠের নিচের দিকের দু’টি অংশে ইনজেকশন নিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক। ইনজেকশনের প্রতিক্রিয়া বোঝার জন্য গতকাল দুপুরে আবার তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। তার শরীর যেভাবে সাড়া দেবে, সেই অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা জানাবেন চিকিৎসক। বিসিবি’র একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, ৩৪ বছর বয়সী ক্রিকেটারের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দুই ডিস্ক ঘিরে তিন থেকে চারটি ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। ইনজেকশনগুলো দেওয়া হয়েছে অস্ত্রোপচারের টেবিলে। বিসিবি’র প্রধান চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের মাঝপথে হঠাৎ করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম ইকবাল। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের পর ২৮ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন তিনি। জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেও ক্রিকেটে কবে ফিরবেন তা নিয়ে রয়েছে বেশ জল্পনা-কল্পনা। কারণ লম্বা সময় ধরে ভোগা পিঠের ইনজুরি থেকে রেহাই পেতে লন্ডনে আছেন তামিম।
সেখানে চিকিৎসকের পরামর্শে নেয়া ইনজেকশন সাধারণত স্নায়ুকে নিস্তেজ করে রাখে একটি নির্দিষ্ট সময়। তবে সেই সময়টা কতদিন, সেটির নিশ্চয়তা দিতে পারেন না চিকিৎসকরাও। কারও ক্ষেত্রে ইনজেকশনের কার্যকারিতা ২-৩ মাস থেকে শুরু করে ৪-৫ মাস পর্যন্ত থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে আবার এক মাসের মধ্যে ব্যথা ফিরে আসে। আগের দফায় এই ইনজেকশন নিয়ে তামিম তিন মাসের মতো সময় মোটামুটি নির্বিঘ্নে খেলতে পেরেছিলেন। বাংলাদেশের সামনে বড় দুই অভিযানের প্রথমটি এশিয়া কাপ শুরু হতে সময় আছে আর এক মাস। বিশ্বকাপ শুরু হতে বাকি দুই মাসের একটু বেশি। ইনজেকশন ঠিকঠাক কাজ করলে ৭ থেকে ১০ দিন বিশ্রামে থাকতে হবে তামিমকে। এরপর আস্তে আস্তে তিনি ফিটনেস ট্রেনিংসহ অনুশীলন শুরু করতে পারবেন।
এখন ইনজেকশন ঠিকঠাক কাজ করলেও তার আসল চ্যালেঞ্জ হবে অনুশীলন শুরুর পরই। তখন যদি আবার ব্যথা ফিরে আসে, আরেক ধাপে ইনজেকশন নেওয়ার সুযোগ থাকবে। তাতেও কাজ না হলে শেষ উপায় অস্ত্রোপচার। এই ব্যথা তামিমকে ভোগাচ্ছে গত নভেম্বর থেকে। ভারতের বিপক্ষে সিরিজের আগে প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করার পর ড্রেসিং রুমে গিয়ে তিনি অনুভব করেন এটির অস্তিত্ব। ওই সিরিজে কোনো ম্যাচেই মাঠে নামতে পারেননি বাংলাদেশের এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। পরে ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট- বিপিএল দিয়ে মাঠে ফিরলেও টুর্নামেন্টের শেষ দিকে আবার ব্যথা মাথাচাড়া দিতে থাকে। তখন তিনি বিশ্রামে যান।
এরপর মার্চে ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ ও মে মাসে ইংল্যান্ড সফরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে খেলেন এক টানা। কিন্তু ব্যথা ফিরে আসায় গত মাসে খেলতে পারেননি আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে। পরে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচের পর তার নাটকীয় অবসর ও পরের দিন আবার প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ফেরা। তামিমের এই ব্যথা নিয়ে আগে বিভ্রান্তির কথাও বলেছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। মে মাসে ইংল্যান্ড সফরের সময় দুজন বিশেষজ্ঞ দেখিয়েছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক। তখন তার পিঠের নিচের অংশে স্ক্যান করানো হয়েছিল। কিন্তু বিসিবি’র মেডিক্যাল বিভাগ থেকে তখন বলা হয়েছিল, স্ক্যানে কিছু ধরা পড়েনি। বিসিবি কর্তারাও তাই খানিকটা সংশয়ের চোখেই দেখতে শুরু করেছিলেন এই চোটকে। তবে সেই স্ক্যান রিপোর্ট দেখেই পরে ইংল্যান্ডের বিশেষজ্ঞ টনি হ্যামন্ড নিশ্চিত করেন যে, এই ব্যাটসম্যানের পিঠের নিচের অংশের ডিস্কে কিছুটা ক্ষয় ধরেছে। এবার লন্ডনে সেটিই আরেক দফায় নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে ইনজেকশন দেওয়া হলো।


