ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে অস্ত্র সহায়তা দেয়া নিয়ে আলোচনা করতে এ মাসেই রাশিয়া সফরে যাওয়ার কথা উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা তার। কিন্তু এ বিষয়টি এরই মধ্যে প্রকাশ হয়ে পড়েছে।
কিম জং উন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে সবসময়ই শঙ্কিত থাকেন। কোথাও যাওয়ার আগে তিনি সর্বোচ্চ গোপনীয়তা বজায় রাখেন। ফলে এ মাসে পুতিনের সঙ্গে সম্ভাব্য সফর তিনি বাতিলও করতে পারেন। তবে পিয়ংইয়ং বা মস্কো থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
সিবিএস টেলিভিশনকে যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, কোথায় হবে বৈঠক সে বিষয়ে পরিষ্কার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। উত্তর কোরিয়া বা রাশিয়ার তরফ থেকে এ বিষয়ে কোনো তথ্য বা মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ওদিকে বিভিন্ন সূত্র নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছে, কিম জং উন সম্ভবত সাজোয়া ট্রেনে করে সফরে যেতে পারেন। হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে অস্ত্র বিষয়ক সমঝোতার খবর এমন সময়ে এসেছে, যখন তারা এ বিষয়ে সক্রিয়ভাবে অগ্রসর হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া সফরে গিয়েছিলেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোউগু।
তিনি এ সময় সমরাস্ত্র বিক্রির জন্য পিয়ংইয়ংকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন।
ওই মিটিংয়ে প্রদর্শন করা হয়েছে সমরাস্ত্র। এর মধ্যে আছে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যাপক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) হাওসোং। ধারণা করা হয় উত্তর কোরিয়া প্রথমে এই আইসিবিএম’কে বিক্রি করতে চাইছে।
তাছাড়া করোনা মহামারির পর এবারই প্রথম তার দেশের দরজা বিদেশিদের জন্য প্রথম উন্মুক্ত করে দিয়েছেন কিম জং উন। এরই মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রত্যয় ব্যক্ত করে চিঠি বিনিময় করেছেন পুতিন ও কিম।
জন কিরবি বলেন, উত্তর কোরিয়াকে আমরা রাশিয়ার সঙ্গে অস্ত্র বিক্রি নিয়ে আলোচনা বন্ধ করার আহ্বান জানাই। তাছাড়া প্রকাশ্যে পিয়ংইয়ং প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা রাশিয়াকে অস্ত্র দেবেও না, তাদের কাছে বিক্রিও করবে না। পিয়ংইয়ংকে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার আহ্বান জানান জন কিরবি। তিনি জানান, উত্তর কোরিয়া যদি রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ দেয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেবে। এমনও হতে পারে -নিষেধাজ্ঞা দেয়া হতে পারে।
রাশিয়ার কাছে অস্ত্র দিয়ে বা বিক্রি করে তাদের কাছ থেকে বিনিময়ে উত্তর কোরিয়া কী পেতে যাচ্ছে তা নিয়ে ওয়াশিংটনে যেমন উদ্বেগ আছে, তেমনি উদ্বেগ আছে সিউলেও। যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান যেভাবে যৌথ নৌমহড়া করে, সে রকমভাবে রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়াকে যৌথভাবে নৌমহড়া দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সের্গেই শোইগু। সোমবার দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা বিভাগ এসব বিষয়ে বিবৃতি দেন।
আবার ভবিষ্যতে যখন পিয়ংইয়ংয়ের অস্ত্রের খুব প্রয়োজন হবে, তখন উত্তর কোরিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ দিতে পারে রাশিয়া। এ বিষয়েও আতঙ্ক রয়েছে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো পুতিনের কাছে কিম জং উন উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র অথবা এ সংক্রান্ত ‘নলেজ’ বা জ্ঞানবুদ্ধি সরবরাহ করার জন্য আহ্বান জানাতে পারেন। এই সুবিধা দেয়া হলে উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক অস্ত্র বিষয়ক কর্মসূচিতে গতি আনতে পারবে। ফলে যদি এই দুই নেতার মধ্যে চুক্তি হয় কৌশলগত চুক্তির চেয়ে তা হবে বেশি লেনদেনের। এই মুহূর্তে রাশিয়ার খুব প্রয়োজন অস্ত্র। অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত উত্তর কোরিয়ার প্রয়োজন হলো অর্থ আর খাদ্য।
নিউ ইয়র্ক টাইমস বলেছে, কিম এবং পুতিনের মধ্যে এই বৈঠক হতে পারে রাশিয়ার পূর্ব উপকূলে বন্দর নগরী ভ্লাদিভস্তকে। এই পত্রিকাটির কূটনৈতিক সংবাদদাতা এডওয়ার্ড ওং বলেছেন, সফরের আগেই উত্তর কোরিয়ার একটি অগ্রবর্তী দল ভ্লাদিভস্তক ও মস্কো সফর করেছেন। প্রতিনিধিদের মধ্যে আছেন নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মকর্তারা। তারাই কিম জং উনের সফরের নিরাপত্তার সার্বিক দেখাশোনা করবেন।
উল্লেখ্য, এর আগে পিয়ংইয়ং এবং মস্কো উভয়েই এমন রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছে যে, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে উত্তর কোরিয়া। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ায় বৃটেনের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জন এভারার্ড।
তিনি বলেছেন, কিম জংয়ের সম্ভাব্য সফর নিয়ে প্রকাশ্যে এত প্রচারণা হওয়ার কারণে শেষ পর্যন্ত এই সফর নাও হতে পারে। কিম জং উন নিজের নিরাপত্তা নিয়ে খুব বেশি ভাবেন। এ জন্য তিনি কোথাও যাওয়ার আগে দীর্ঘসময় তা গোপন রাখেন। যদি তিনি জানেন যে, পুতিনের সঙ্গে ভ্লাদিভস্তকে তার সম্ভাব্য সাক্ষাতের বিষয় প্রকাশ হয়ে গেছে, তাহলে পুরো সফরই বাতিল করে দিতে পারেন।


