ইউক্রেনে রাশিয়ার মিসাইল হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার কোনো হামলায় এত বেশি নিহতের ঘটনা ঘটেনি। রাশিয়ার দাবি অনুযায়ী, তাদের মিসাইল ও ড্রোন হামলাগুলোর টার্গেট শুধুমাত্র সামরিক ও কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ইউক্রেন বলছে, নিহতরা সবাই বেসামরিক নাগরিক। অপরদিকে রাশিয়ার দাবি, তারা ইউক্রেনের রিজার্ভ সেনার অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, যাতে তাদেরকে ফ্রন্টলাইনে পাঠাতে না পারে দেশটি। তাদের হামলা সফল হয়েছে বলেও দাবি করেছে মস্কো।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে জানানো হয় যে, ইউক্রেনে হামলা নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ এক ব্রিফিংয়ে বলেন, রাশিয়ান বিমান বাহিনী ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর রিজার্ভ ইউনিটের অস্থায়ী স্থাপনাগুলিকে লক্ষ্য করে দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে। সবগুলো মিসাইলই টার্গেটে আঘাত হেনেছে। এতে শত্রুদের বেশ কয়েকটি পবস্থান ধ্বংস হয়ে গেছে। এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর রিজার্ভ সেনাদের অগ্রগতি থামিয়ে দেয়া।
বিবিসি জানিয়েছে, কিয়েভ, উমান, দনিপ্রোপেত্রোভস্ক, ক্রেমেঞ্চুক ও পোলতাভা অঞ্চলে বিস্ফোরণের রিপোর্ট পাওয়া গেছে।
এসব শহরে বেসামরিক ভবনে মিসাইল পড়েছে বলে অভিযোগ করছে ইউক্রেন। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান জানান যে, দীর্ঘ ৫১ দিন পর কিয়েভে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। তবে কিয়েভের হামলাগুলো ছিল মূলত সামরিক টার্গেটে। সেখানে কোনো বেসামরিক হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, এই হামলা দেখিয়ে দিয়েছে যে কি কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। শুক্রবার করা এক টুইটে তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার এই আচরণ বন্ধ করতে হবে অস্ত্রের মাধ্যমে। আমাদের প্রতিরোধকারীরা সেটা করে দেখাচ্ছে। এছাড়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। তিনি পশ্চিমা দেশগুলোতে রুশ নিষেধাজ্ঞা জোরদারের আহ্বান জানান ওই টুইটে।
এদিকে ইউক্রেনের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, রাশিয়া মোট ২৩টি মিসাইল ছুড়েছিল। এরমধ্যে ২১টিই তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। যদিও বিভিন্ন ধ্বংসের মাত্রা দেখে এমন দাবি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। রাশিয়ার মিসাইল হামলার পর ইউক্রেন প্রায়ই বেশির ভাগ মিসাইল ধ্বংসের দাবি করে থাকে। সাম্প্রতিক এই হামলা এমন সময়ে হলো যখন ইউক্রেন বড় পর্যায়ের কাউন্টার অফেন্সিভ চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। পশ্চিমা মিত্রদের থেকে দেশটি বিপুল পরিমাণ অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা পেয়েছে এই কাউন্টার অফেন্সিভের জন্য। শত শত আধুনিক ট্যাংক এমনকি যুদ্ধবিমানও পাঠানো হচ্ছে ইউক্রেনে। এছাড়া পশ্চিমা দেশগুলো থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রায় ৫০ হাজার ইউক্রেনীয় সেনা দেশে ফিরেছে।
যুদ্ধের একদম প্রথম দিকে রাশিয়া দ্রুত ইউক্রেনের বিশাল এলাকা দখল করে নিয়েছিল। এরপর ইউক্রেন কাউন্টার অফেন্সিভ চালিয়ে কিছু এলাকা পুনরায় নিজেদের দখলে আনতে সক্ষম হয়। তবে এখনও ইউক্রেনের পাঁচ ভাগের এক ভাগ অঞ্চল রাশিয়ার দখলে রয়ে গেছে। গত প্রায় ৬ মাসে ইউক্রেনের সামান্য অগ্রগতিও হয়নি। বরঞ্চ সোলেদার ও বাখমুতের মতো শহর দখল করে নিয়েছে রুশ সেনারা। ফ্রন্টলাইনের আরও বেশকিছু স্থানেও অগ্রসর হচ্ছে রুশরা, যদিও তা খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনো জয় নয়। ইউক্রেন এখন আবারও সফল কাউন্টার অফেন্সিভ চালানোর চেষ্টা করছে। বহুদিন ধরেই তারা এর প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশটি ও এর মিত্ররা আশা করছে এবারের কাউন্টার অফেন্সিভ সফল হলে রাশিয়ার হাত থেকে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি শহর উদ্ধার করতে পারবে তারা। রাশিয়ার তরফ থেকেও বারবার ইউক্রেনের কাউন্টার অফেন্সিভের কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। যদিও দেশটি ইউক্রেনের সফল হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে।