আফগানিস্তানকে সিরিজে টানা তিন ম্যাচে হারাতে পারলেই আইসিসি’র ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে প্রথমবার পাঁচে উঠবে বাংলাদেশ! এমনই সমীকরণ নিয়ে মাঠে নেমেছিল টাইগাররা। কিন্তু এখন উল্টো নিজেদের মাটিতে হোয়াটওয়াশের চোখ রাঙানিতে স্বাগতিকরা। আজ চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেয়ামে শেষ ম্যাচ হারলেই লিটন দাসের দলকে বরণ করতে হবে লজ্জার এই রেকর্ড। প্রথম ম্যাচে আফগানরা বৃষ্টি আইনে জিতলেও দ্বিতীয়টিতে তারা জিতেছে রেকর্ড গড়া ১৪২ রানের ব্যবধানে। ঘরের মাঠে বাংলাদেশ সবশেষ হোয়াইটওয়াশ হয়েছে ২০১৪ তে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এরপর দেশের মাটিতে মাত্র দুটি সিরিজ হেরেছে টাইগাররা। বলার অপেক্ষা রাখে না ৫০ ওভারের ফরম্যাটে উড়তে থাকা টাইগারদের অনেকটাই মাটিতে আছড়ে ফেলেছে সফরকারিরা। এমন পরিস্থিতিতে কতটা স্বস্তিতে আছে দল! গতকাল বৃষ্টির কারণে স্বাগতিকরা অনুশীলন করেনি। তবে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন সহকারী কোচ নিক পোথাস। তিনি অবশ্য জানিয়েছেন দল বেশ আত্মবিশ^াসী।
তিনি বলেন, ‘আমরা খেলোয়াড়দের পেশাদারিত্ব নিয়ে কথা বলেছি। ছেলেরা তাদের কাজ সম্পর্কে জানে, তারা ভীষণ পেশাদার। তাই আমাদের খুব বেশি ভাবতে হয় না। ছেলেরা সবসময় প্রস্তুত থাকে। ফ্যান্টাস্টিক একটা গ্রুপ।’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। গেল দুই দিন টিম হোটেলেই বিশ্রাম নিয়েছে লিটন দাসের দল। গতকাল অনুশীলনের কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে হোটেলেই কাটিয়েছে তারা। অন্যদিকে আফগানরা সিরিজ জিতেও গতকালও ঘাম ঝরিয়েছে মাঠে। বলার অপেক্ষা রাখে না, তারা টাইগারদের ঘরের মাঠে হোয়াটওয়াশ করতে দারুণ ভাবে মুখিয়ে আছে। এই হারের অন্যতম কারণ স্বাগতিকদের চরম ব্যাটিং ব্যর্থতা। কোচ পোথাস মনে করেন আফগানদের স্পিনেই কাবু হয়েছে টাইগার ব্যাটাররা। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে আফগানিস্তানের স্পিন বিশ্বের সেরা স্পিন অ্যাটাক। এটাই ফ্যাক্ট। তাদের ৩ স্পিনার সাদা বলের ক্রিকেটে প্রচুর ম্যাচ খেলে। এখন সারা বিশ্বেই খেলে বেড়াচ্ছে। তাদের মতো খেলোয়াড় থাকা একজন অধিনায়কের স্বপ্ন। তবে এই চ্যালেঞ্জ নেওয়াটা আমাদের জন্য অ্যাডভান্টেজ। কারণ এটা আমাদের আরও ভালো করে তুলবে। এই লেভেলের স্পিন মোকাবিলা করার পর আপনি যে কাউকে মোকাবিলা করতে পারবেন। বিশ্বের আর কোনো দলেই এমন মানের ৩ স্পিনার নেই। তাই বলব এই প্রস্তুতিটা আমাদের জন্য খুবই উপকারী। র্যাঙ্কিংয়ে তারা কত সেটা বড় বিষয় নয়। তবে তাদের কোয়ালিটির দিকে দেখুন, আমি মনে করি বিশ্বের সেরা স্পিনারদের মধ্যে এই ৩ জন আছে। তাই ইতিবাচক দিকই দেখছি।’
আফগানিস্তান এর আগে দুটি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশের বিপক্ষে। সেখানে শুধু একটি করে ম্যাচেই জয় ছিল তাদের। কিন্তু এবার দারুণ ভাবে স্বাগতিকদের চেপে ধরেছে তারা। তামিম ইকবাল নেই তাই দলের ওপেনিংয়ে ফেরানো হয়েছে নাঈম শেখকে। কিন্তু এই তরুণ ওপেনার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পাচ্ছেন না। শেষ ম্যাচে ২১ বলে ৯ রান করে আউট হন তিনি। এছাড়াও আফিফ হোসেন ধ্রুব দুই ম্যাচে সুযোগ পেয়ে ভীষণ ভাবে ব্যর্থ। তার ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ৪ রান। এছাড়াও অধিনায়ক লিটন দাস দুই ম্যাচে দলের জন্য ব্যাট হাতে ৩৯ রানের অবদান রেখেছেন। সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদী হাসান মিরাজদের মতো অভিজ্ঞরাও ব্যর্থ। দলের পক্ষে দুই ম্যাচে সর্বোচ্চ এক ফিফটিতে ৭০ রান করেছেন মুশফিকুর রহীম। ৬৭ রান এসেছে তরুণ তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাট থেকে।
তবে অধিনায়ক লিটন ও আফিফ সহ কারো ব্যাটিং নিয়ে অসন্তুষ্ট নন কোচ পোথাস। তিনি বলেন. ‘(লিটনকে নিয়ে দুশ্চিন্তা) মোটেও না। হি ইজ অ্যা ওয়ার্ল্ড ক্লাস প্লেয়ার। আর আফিফ কেন, বিশ্বের যে ব্যাটারই রান না করে আউট হয়ে গেলে সে বলবে না সে খুশি। ব্যাটার হিসেবে আমি আফিফকে নিয়ে শতভাগ খুশি, কারণ সে কোয়ালিটি ব্যাটার।’
তবে টাইগারদের সহকারী কোচ স্বীকার করে নিয়েছেন শেষ দুই ম্যাচে ব্যাটারদের ঘাটতির কথা। সেই সঙ্গে স্মরণ করিয়েছেন এই ব্যাটারদের পূর্বের সাফল্যের কথাও। পোথাস বলেন, ‘হ্যাঁ, এই মন্তব্যটা ঠিক আছে। সর্বশেষ ২ ম্যাচ। আমরা ভুলে গেছি যে ইংল্যান্ড, ভারত, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছি। এগুলো ভুলে গেলে হবে না তো। আমরা ২ ম্যাচে বিচার করছি। লম্বা সময় ধরে বিচার করতে হয়।’ অন্যদিকে নিজেদের হোয়াইটওয়াশ ঠেকানোর ম্যাচের একদশেও আসবে নিশ্চিত পরিবর্তন। ইনজুরিতে ইবাদত ছিটকে পড়ায় তার পরিবর্তে শরিফুল ইসলাম বা তাসকিন আহমেদকে দেখা যেতে পারে। তবে নাঈম ও আফিফকে দেয়া হতে পারে আরেকটি সুযোগ।


