আরো একবার নিজেদের সুর তাল লয়ে বাঁধতে ব্যর্থ সাকিবরা। ম্যাচের প্রথম ভাগে উজ্জ্বল ছিলেন টাইগার বোলাররা। কিন্তু পরে দলের একাট্টা ব্যাটিংটা দেখা গেল না একেবারেই। তরুণ ব্যাটার তাওহিদ হৃদয় লড়াই করলেন বুক চিতিয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হৃদয় ভাঙে টাইগার ভক্তদেরই। এশিয়া কাপের সুপার ফোর পর্বে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে হার দেখলো বাংলাদেশ। গতকাল কলম্বোয় সম্ভাবনাময় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে ২১ রানে হেরে যায় সাকিবের দল। রণসিংহে প্রোমাদাসা স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতে স্বাগতিকদের ২৫৭ রানে আটকে রাখে বাংলাদেশ। জবাবে ১১ বল বাকি রেখে ২৩৬ রানে অলআউট হয় টাইগাররা। তিনটি করে উইকেট নেন দাসুন শানাকা, মাতিশা পাতিরানা ও মহেশ থিকশানা।
সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচ পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছিল সাকিবের দল।
এদিন দলীয় ৫৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সাজঘরে ফেরেন বাংলাদেশের ‘মেক শিফট ওপেনার’ মেহেদী হাসান মিরাজ। দাসুন শানাকার শর্ট লেংথের বলে পুল করতে গিয়ে টাইমিং ঠিকঠাক হয়নি মিরাজের। ব্যাটে লেগে ক্যাচ যায় মিড উইকেটে। ২৯ বলে ২৮ রান করেন আসরে এর আগে সেঞ্চুরি পাওয়া মিরাজ। নাঈম শেখ যে ইনিংস খেললেন সেটা দেখতেও ধৈর্য লাগে! মিরাজের পর নাঈম শেখও মিডিয়াম পেসার শানাকার শিকার। শানাকার সাধারণ এক বাউন্সারে আসে আরো একটি উইকেট। মিরাজ তবুও পুল করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু নাঈম বুঝেই উঠতে পারেননি শর্ট বলটা। ব্যাট সরিয়েও নিতে পারেননি, শেষ মুহূর্তে ব্যাট চালাতে গিয়ে খাড়া উপরে তোলেন ক্যাচ। ৪৬ বলে ২১ রানের ইনিংসটিতে নাঈম স্বচ্ছন্দ ছিলেন না একেবারেই। ম্যাচে নাঈমের স্ট্রাইক রেটও আলোচনার বিষয়। কমপক্ষে ৪০ বল স্থায়ী ইনিংসে এ শতাব্দীতে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের কোনো ওপেনারের এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্ট্রাইক রেট। ২০১২ সালে মিরপুরের ফাইনালে নাজিমউদ্দিন খেলেছিলেন ৫২ বলে ১৬ রানের ইনিংস। স্ট্রাইক রেট ছিল ৩০.৭৬। পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনালে বাংলাদেশ সে ম্যাচ হেরেছিল ২ রানে। ওই ফাইনাল শেষে মুশফিক-সাকিবের কান্নার ছবি এখনও হৃদয় ছুঁয়ে যায় ক্রিকেটপ্রেমীদের।
গতকাল ওপেনিংয়ে ৫৫ রানের জুটি গড়েন নাঈম শেখ ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে পরবর্তী ২৮ রানে চার উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় টাইগাররা। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক দাসুন শানাকার রিভিউয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে পরে লঙ্কানদের এক সফল রিভিউয়ে উইকেট হারান ৭ বলে ৩ রান করা সাকিব। পাতিরানার রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে অ্যাঙ্গেল করে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট চালিয়ে কট-বিহাইন্ড হন সাকিব। গ্রুপ পর্বে পাল্লেকেলেতেও পাতিরানার বলেই কট-বিহাইন্ড হয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। জ্বর থেকে ওঠা লিটন দাসকে এশিয়া কাপে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে কাজ হয়েছে বলা যাবে না। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে উইকেটে থিতু হয়ে উইকেট খোয়ালেন এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার লিটন কুমার দাস। বাঁহাতি স্পিনার দুনিথ ওয়াল্লালাগের বলে উইকেটকিপার কুশল মেন্ডিসের গ্লাভসে ধরা পড়েন তিনে নামা লিটন। এর পর ৭২ রানের জুটি গড়ে টাইগারদের আশা ধরে রাখেন তাওহিদ হৃদয়-মুশফিকুর রহীম। কিন্তু অভিজ্ঞ মুশফিক ধৈর্য হারালে ফের বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
৩৫ ওভারশেষে শ্রীলঙ্কার স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ১৫৩ রান। একই সময়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় সমান উইকেট হারিয়ে ১৪৯ রানে। শেষ ১৫ ওভারে শ্রীলঙ্কা গতি পায় সাদিরা সামারাবিক্রমার দুর্দান্ত ইনিংসের সুবাদে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দায়িত্বটা হৃদয়ের কাঁধে চাপিয়ে সাজঘরে ফেরেন মুশফিকুর রহীম। ৪৮ বলে ২৯ রান করেন বাংলাদেশের এ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। শানাকার বলে রাজিথার হাতে ক্যাচ দেন মুশফিক। ৩৭.২তম ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৫৫/৫-এ।
৫ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে মহেশ থিকশানা ছিলেন খরুচে। তবে পরে ম্যাচের গতিপ্রকৃতি পাল্টে দেন থিকশানাই। নিজের ষষ্ঠ ওভারে এসে তিনি পান গুরুত্বপূর্ণ উইকেটের দেখা। তার ক্যারম বল পেছনের পায়ে ভর দিয়ে খেলতে গিয়ে মিস করেন শামীম হোসেন পাটোয়ারী। এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত রিভিউ করলেও কাজে আসেনি। ৪১.৩তম ওভার শেষে ১৮১/৬ সংগ্রহ নিয়ে চাপ বাড়ে টাইগারদের ওপর। তবে তখনও ক্রিজে ভরসা হয়ে ছাপ রাখছিলেন হৃদয়। ৪৩.১তম ওভার শেষে ১৯৭/৬ সংগ্রহ নিয়ে ভালো মতোই ম্যাচে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পরবর্তী ৩৯ রানে শেষ চার উইকেট হারায় টাইগাররা। এ সময় থিকশানা হানেন জোড়া আঘাত। থিকশানার এক ডেলিভারিতে ভুল করে বসেন হৃদয়। ৪৩.২তম ওভারে এলবিডাব্লিউ এর সিদ্ধান্ত দেন ম্যাচের আম্পায়ার। পরে রিভিউয়ে আম্পায়ার্স কলে উইকেট খোয়ান বাংলাদেশের তরুণ ব্যাটার। টাইগারদের সম্ভাবনাও কার্যত শেষ হয়ে যায় তখনই। ৯৭ বলে ৮২ রান করেন হৃদয়। ইনিংসে হৃদয় হাঁকান ৭টি চার ও একটি ছক্কা। একই ওভারের শেষ বলে আবারো এলবিডাব্লিউ। দলীয় ২০০ রানে আউট হন তাসকিন আহমেদ। স্কোর বোর্ডে ১৬ রান যোগ হতেই পাতিরানার বলে বোল্ড হন শরীফুল ইসলাম। শেষ দিকে ১৫ বলে ১৫ রানের ইনিংস খেলে টাইগার ভক্তরদের কিছুটা আনন্দ দেন নাসুম আহমেদ।


