জাহেদ কায়সার : কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল আগামী ২৮ অক্টোবর
উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার চট্টগ্রাম পতেঙ্গা ও আনোয়ারাকে যুক্ত করেছে এ টানেল। যার ফলে নদীর তলদেশ দিয়ে কম সময়ে যাতায়াত সুবিধা পাবে দুটি আলাদা শহর। দুটি টিউব ও চার লেনের সড়কে নদীর তলদেশ দিয়ে পাঁচ মিনিটে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে যাওয়া যাবে আনোয়ারায়। অন্যদিকে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব কমে আসবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজারের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার ও সময় প্রায় এক ঘণ্টা কমিয়ে আনছে এ টানেল।
২৮ অক্টোবর (শনিবার) সকাল ১০ টায় নগরীর পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলের নামফলক উন্মোচনের পর অপর প্রান্তে কাফকো কলোনি সংলগ্ন কেইপিজেড মাঠে জনসভায় যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ জনসভা হবে। সেখানে ১০ লাখ মানুষের জনসমাগম ঘটাতে তৎপরতা শুরু করেছে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ। জনসভার জন্য নৌকার আদলে প্রস্তুত কারা হচ্ছে বিশাল মঞ্চ।
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে টানেলের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে চলছে সাজসজ্জার কাজ। সংস্কারের পাশাপাশি রঙ করা হচ্ছে সড়কগুলো। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে নগরী ও আনোয়ারা প্রান্তে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ছবি সম্বলিত পোস্টার-ব্যানারে চেয়ে গেছে পুরো এলাকা ।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘ দক্ষিণ এশিয়া তথা দেশের প্রথম টানেল নির্মাণের মধ্যে কর্ণফুলী-আনোয়ারা আরেকটি শহরে রূপ নিয়েছে। আনোয়ারা থেকে চট্টগ্রাম শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজতর করেছে টানেল। মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন মিনিটে টানেল পাড়ি দেওয়া যাবে। টানেলকে ঘিরে আনোয়ারায় গড়ে উঠছে শিল্প কারখানা। আসছে বিদেশি বিনিয়োগও। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এসব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছার কারণেই।’
তিনি বলেন, স্বপ্নের এই টানেল উদ্বোধন করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে আসছেন। ওইদিন টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে কেইপিজেড মাঠে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাড়ে ৯ লাখ বর্গফুটের এই মাঠে ১০ লাখ লোকের জনসমাগম ঘটাতে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বান্দরবান, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি থেকেও নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দেবেন।’
টানেল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ বলেন, ‘যানবাহন চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত টানেল। ইতোমধ্যে একাধিকবার পরীক্ষামূলক গাড়ি চলাচল করা হয়েছে। এখন সাজসজ্জার কাজ হচ্ছে। নিরাপত্তা তথা খুঁটিনাটি বিষয়গুলো দেখা হচ্ছে। আগামী ২৮ অক্টোবর এ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পরদিন ২৯ অক্টোবর থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য টানেল উন্মুক্ত করা হবে। বর্তমানে প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৯ শতাংশ। কিছু ভবন নির্মাণের কাজ বাকি আছে। সেগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে।’
প্রায় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয়ে ৩৫ ফুট চওড়া ও ১৬ ফুট উঁচু এবং ১১ মিটার ব্যবধানে দুটি টিউবে এ টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৪০ কিলোমিটার। এটির সঙ্গে ৫.৩৫ কিলোমিটারের একটি অ্যাপ্রোচ রোডের পাশাপাশি একটি ৭৪০ মিটার সেতু রয়েছে যা মূল শহর, বন্দর এবং নদীর পশ্চিম দিককে এর পূর্ব দিকের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।
এর আগে গত ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ টানেল টিউবের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।


