ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের জনগণের জন্য দীর্ঘমেয়াদী একটি শান্তির ভিত্তি হিসেবে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান সমর্থন করে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ৬ জন প্রধানমন্ত্রী। সোমবার সকালে তাদের এই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন জন হাওয়ার্ড, কেভিন রাড, জুলিয়া গিলার্ড, টনি অ্যাবোট, ম্যালকম টার্নবুল এবং স্কট মরিসন। তবে স্বাক্ষর করেননি একজনমাত্র সাবেক প্রধানমন্ত্রী পল কিটিং। এতে ৭ই অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার নিন্দা জানানো হয়। গাজায় জিম্মিদের মুক্তি দাবি করা হয়।
ওদিকে গাজায় মানবাধিকার বিষয়ক আইনসহ বিভিন্ন আইন লঙ্ঘন করে থাকতে পারে ইসরাইল- এ সতর্কতা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাবেক নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রোথ। বর্তমানে তিনি প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং প্রফেসর। এক্সে (সাবেক টুইটার) যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জোর আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেডরোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস।
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ৬ জন প্রধানমন্ত্রী যখন বিবৃতি দিয়েছেন, তখন মেলবোর্নে ফিলিস্তিনপন্থি বিশাল একটি র্যালি হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। এ অবস্থায় অস্ট্রেলিয়ার ভিতরে ইসরাইল-ফিলিস্তিন উত্তেজনার কথা জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে বিবৃতিতে।
অস্ট্রেলিয়ানদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে সবার সঙ্গে ভালবাসা ও সম্মান দেখাতে।
এতে বলা হয়, যদি আমাদের হৃদয় ঘৃণায় পূর্ণ হয়ে যায়, তাহলে আমরা সন্ত্রাসী কাজ করতে থাকবো। বিবৃতিতে ফিলিস্তিনিদের জন্য টেকসই মানবিক সহায়তা সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান অস্ট্রেলিয়ার ওই সাবেক ৬ প্রধানমন্ত্রী। তারা বলেছেন, অসংখ্য নিরপরাধ শিশুসহ নিরীহ ফিলিস্তিনিদের কয়েক হাজারের মৃত্যু এবং অসংখ্য মানুষ আহত হওয়ায় আমরা ভীতশঙ্কিত।
অন্যদিকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কেনেথ রোথ বলেছেন, গাজার আল কুদস হাসপাতালকে যদি ইসরাইল টার্গেট করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা যেতে পারে। হাসপাতালে যখন ১৪০০০ মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের বিপুল সংখ্যকের অবস্থা আশঙ্কাজনক, এসব মানুষকে আপনি সরিয়ে নিতে পারবেন না। এখান থেকে লোকজন সরিয়ে নেয়া ন্যায়সঙ্গত নয়। হামাসের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর জন্য যদি বৈষম্যহীনভাবে বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে হামলা চালানো হয়, তাহলে তা হবে অন্যায়। তিনি মনে করেন ইসরাইলের বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে রকেট হামলা করে হামাসও যুদ্ধাপরাধ করেছে। তাই বলে তাদের কর্মকাণ্ডের জবাবে গাজায় ইসরাইল বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে বোমা মারবে এটা যুক্তি হতে পারে না। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের আইন অনুযায়ী এক পক্ষের যুদ্ধাপরাধের অজুহাতে অন্যপক্ষ একই কাজ করতে পারে না। যুদ্ধের আইনগুলোর প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য প্রতিটি পক্ষের বাধ্যবাধকতা আছে।
অন্যদিকে কয়েক ঘন্টা আগে এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক আধানম ঘেব্রেয়েসাস। তিনি ইথিওপিয়ার টাইগ্রের মানুষ। যুদ্ধের ভিতর বড় হওয়া একটি শিশুর নিজস্ব অভিজ্ঞতা হিসেবে তিনি নিজের কাহিনী শেয়ার করেছেন। বলেছেন, যুদ্ধের ভিতর আটকে পড়া একটি শিশু হিসেবে আমি যুদ্ধে বারুদের গন্ধ, বোমার শব্দ এবং দৃষ্টিতে দেখা সব বিভীষিকা দেখেছি। এখন যারা যুদ্ধের মধ্যে আছেন তাদের অনুভূতিটা গভীরভাবে উপলব্ধি করি। মনে করি তাদের বেদনা আমার বেদনা। এর আগে প্যালেস্টাইনিয়ান রেডক্রিসেন্ট রিপোর্ট করেছে যে, আল কুদস হাসপাতাল থেকে উদ্ধার অভিযান এক রকম হুমকি। এমন খবরে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আধানম ঘেব্রেয়েসাস বলেন, আমরা আবারও বলছি, হাসপাতালের রোগীদের জীবন বিপন্ন করা ছাড়া তাদেরকে উদ্ধার করা অসম্ভব।


