দলের যৌথ সভায় প্রধানমন্ত্রী
কিছু মানুষ চক্রান্ত করে দ্রব্যমূল্য বাড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ কষ্টে আছে। আমরা দ্রব্যমূল্য নিয়ে কাজ করছি। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে এনেছি। তারপরও কিছু মানুষ চক্রান্ত করে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়াচ্ছে। তবে মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও বেড়েছে- এটাও সত্য কথা। আগে এত ক্রয়ক্ষমতা ছিল না।
গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের যৌথসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কাজ করছে। আমরা ফ্যামিলি কার্ড করে দিচ্ছি। এর সুফল পাচ্ছেন সীমিত আয়ের মানুষ।
চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ মানুষ যেন কষ্ট না পায়। আর সামনে রোজা। রোজা উপলক্ষে যা যা আগাম কেনা দরকার তা আমরা কিনছি। যারা হতদরিদ্র তাদেরকে বিনা পয়সায় খাদ্যদ্রব্য দিয়ে থাকি। এ ছাড়াও টিসিবি’র পারিবারিক কার্ড, ওএমএস কার্ড থাকবে খাদ্যদ্রব্য কিনতে যেন অসুবিধা না হয় সেই ব্যবস্থাটাও আমরা করবো। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি যেন কমিয়ে আনা যায় সে ব্যবস্থাও আমরা নেবো। যদিও আমাদের প্রোডাকশন অনেক বেশি। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক যে মন্দা তা থেকে আমরা দূরে না। তাই আমি সব সময় একটাই আহ্বান করেছি যে এক ইঞ্চি জায়গাও যেন অনাবাদি না থাকে। আমাদের খাদ্যের যেন কখনো কোনো অভাব না হয়। তাই আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। রপ্তানি খাতকেও বহুমুখী করতে হবে। নতুন বাজার খোঁজা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে সব কিছু জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। আমরা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী প্রতিবার বাজেট প্রণয়ন করি। কারণ আমরা মানুষকে যা ওয়াদা দেই তা বাস্তবায়ন করি। এবারের নির্বাচনী ইশতেহারেও ভবিষ্যতে আমরা কী কী কাজ করবো তার বিশদ বর্ণনা দিয়েছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের কল্যাণ আওয়ামী লীগের হাতে। কারণ এ আওয়ামী লীগই দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আওয়ামী লীগই এ দেশের মানুষের খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্নতা দিয়েছে। মানুষকে শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছে। সাক্ষরতার হার বেড়েছে। চিকিৎসাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা বিনামূল্যে আমরা ঘর করে দিয়েছি। আরও কিছু বাকি আছে সেগুলোও আমরা করে দেবো। কোনো মানুষ ভূমিহীন, গৃহহীন ও ঠিকানাহীন থাকবে না। আমাদের উন্নয়ন তৃণমূলের মানুষের জন্যও। উন্নয়নের যে কাজ চলছে, তা আমাদের শেষ করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে এখন আর কেউ দুর্ভিক্ষের দেশ, ভিক্ষুকের দেশ মনে করে না। এখন সবাই মনে করে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। অথচ ’৭৫ সালের পর থেকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিকভাবে এমন অবস্থায় ছিল, তখন বাংলাদেশ বললে মানুষ মনে করতো একটা দুর্ভিক্ষের দেশ, দুর্যোগের দেশ; এদেশের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হতো। সে সময় আন্তর্জাতিকভাবে কোথাও গেলে বলতো বাংলাদেশ তো হাত পাততে আসে। এখন অন্তত এটুকু দাবি করতে পারি, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিটা পরিবর্তন হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেই বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছি। বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা অত্যন্ত জরুরি ছিল। ’৭৫-এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা এ দেশের মানুষের কোনো উন্নয়ন করেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন যাতে না হয়, অনেক চক্রান্ত ছিল, অনেক ষড়যন্ত্র ছিল। সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই আমরা নির্বাচন করেছি। নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা নির্বাচন করেছে, কেউ জয়ী হয়েছে, কেউ জয়ী হতে পারেনি। সেক্ষেত্রে একজন আরেকজনকে দোষারোপ করা বা কার কী অপরাধ এগুলো খুঁজে বের করা, এসব বন্ধ করতে হবে। আমাদের দল ছাড়া কয়েকটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, আমরা জনগণের যে সমর্থন পেয়েছি সেটা কিন্তু কাজের স্বীকৃতি। আমরা যদি একে অপরের দোষ ধরতে ব্যস্ত থাকি, এটা আমাদের বিরোধী দলকে আরও উৎফুল্ল করবে, তাদের কিছু সুযোগ দেয়া হবে। তিনি বলেন, যে দল নির্বাচন করে না, তারা তো গণতান্ত্রিক ধারায় নির্বাচন করায় অভ্যস্ত না। যেসব জরিপ আন্তর্জাতিকভাবে হয়েছিল তাতে স্পষ্ট ছিল বিএনপি তাদের জন্য নির্বাচন করলে কখনো সরকার গ্রহণ করার মতো সাফল্য অর্জন করবে না। সেরকম সিটও তারা পাবে না। আওয়ামী লীগের বেলায় সার্ভে ছিল, শুধু একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে। আওয়ামী লীগ পর্যাপ্ত সিট পাবে। একথা শোনার পর তারা নির্বাচনে আসবে না, এটা তো স্বাভাবিক। তাছাড়াও ওদের সৃষ্টি হয়েছিল অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল তাদের পকেট থেকে। তারা জানে ক্ষমতায় বসেই নির্বাচন করতে। জনগণের ভোট চুরি করা, নির্বাচনে কারচুপি করা, এসব কালচার বিএনপি’র আমলেই সৃষ্টি। তারা ওটাই ভালো বুঝতো। তিনি আরও বলেন, বিএনপি’র আগের চরিত্র দেখলাম গত ২৮শে অক্টোবর। সেখানে পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশকে পিটিয়ে মেরেছে। ’১৩ সালে এভাবে মেরেছিল। সেই একই চিত্র আমরা আবার দেখলাম। তারা বলে ওখানে উস্কানি দেয়া হয়েছিল। যে অঞ্চলে পুলিশকে মারলো সেখানে আওয়ামী লীগের কেউ ছিলই না। ওরাই পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে এম্বুলেন্সে আক্রমণ করে। গাড়ি পোড়ায়। প্রধান বিচারপতির বাড়ি, জাজেস কোয়ার্টার, সাংবাদিক, কেউ ওদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। তারা আবার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গিয়ে কাঁদে। তাদের মুরুব্বিদের কথামতো আবার কান্নাকাটি। তারা বলে সেটা উস্কানি, আসলে উস্কানিটা দিলো কে? উস্কানি দেয়ার মতো তো কেউ ছিল না। পুলিশ তখন যথেষ্ট সহনশীলতা দেখিয়েছে। এরা এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটাবে, ঘটাতেই থাকবে। দুর্নীতি করা আর মানুষ খুন করা, এটাই হচ্ছে বিএনপি’র চরিত্র।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ অবস্থায় আমরা সরকার গঠন করেছি। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস আমরা পেয়েছি। এ বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। উন্নয়নের যে কাজগুলো আমরা করে যাচ্ছি সেগুলো সম্পন্ন করতে হবে। দেশের উন্নয়নের ধারাকে আরও গতিশীল করতে হবে। যৌথসভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ এবং সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা অংশ নেন।