খোলা ড্রামের অনিরাপদ ভোজ্যতেল ব্যবহারের কারণে মানুষের মধ্যে নানাবিধ রোগব্যাধি বিশেষত অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। কিন্তু ১ জুলাই ২০২১ হতে অনিরাপদ, অস্বাস্থ্যকর ও ফুডগ্রেডহীন ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ বন্ধ করার জন্য সরকার নির্দেশনা প্রদান করলেও কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তুতির ঘাটতির দরুন সেটি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে খোলা সয়াবিন তেল বাজারজাতকরণের সময়সীমা ৩১ জুলাই ২০২২ এবং খোলা পাম অয়েল বাজারজাতকরণের সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত সরকার বৃদ্ধি করা হয়। উক্ত সময়ের পর শতভাগ ভোজ্যতেল ফুডগ্রেড বোতল, প্লাস্টিক ফয়েল বা পাউচপ্যাকে বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়া হয়। আইন অনুযায়ী অনিরাপদ প্যাকেজিং অর্থাৎ ফুডগ্রেড নয় এমন উপকরণে তৈরি প্যাকেজিং-এ ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ দÐনীয় অপরাধ হলেও এটি আজও বন্ধ হয়নি, এমনকি সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনের নাগের ডগায় খোলা ভোজ্যতেল বিক্রি হলেও প্রশাসন নির্বিকার। এ অবস্থায় অতিদ্রæত ড্রামে খোলা ভোজ্য তেল বিক্রি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষনকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দ।
বক্তান আরও বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮(১) অনুচ্ছে অনুযায়ী জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। নিরাপদ এবং গুণগত মানসম্পন্ন খাবার নিশ্চিত করা সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এটি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট- এসডিজি’র সবার জন্য সুস্বাস্থ্য সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জনের সাথেও সম্পৃক্ত। বাংলাদেশে “ভোজ্যতেল ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন-২০১৩” এবং “ভোজ্যতেল ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ বিধিমালা-২০১৫” অনুযায়ী, সকল ভোজ্যতেলে নির্ধারিত মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ বাধ্যতামূলক। আইন অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ব্যতীত ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ দন্ডনীয় অপরাধ। এছাড়াও ভিটামিন ‘ডি’ দ্বারা খাদ্য অণুপুষ্টি সমৃদ্ধকরণ সরকারের বিবেচনাধীন। কারণ ভোজ্যতেল ভিটামিন ‘ডি’ দ্বারা ফর্টিফাই করা ভিটামিন ‘ডি’ এর অবস্থা উন্নত করার একটি কার্যকর উপায়। ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ডি’ প্রিমিক্স শুধুমাত্র ভিটামিন ‘এ’ প্রিমিক্সের চেয়ে সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য। ভিটামিন ‘এ এবং ‘ডি’ এর মতো চর্বিতে-দ্রবণীয় ভিটামিন সরবরাহের জন্য ভোজ্যতেল একটি উপযুক্ত বাহন হতে পারে, কারণ বাংলাদেশে ভোজ্য তেলের ব্যবহার প্রায় সার্বজনীন। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ড্রামে বাজারজাতকৃত ৫৯ শতাংশ ভোজ্যতেলই ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ নয় এবং ৩৪ শতাংশ ভোজ্যতেলে সঠিকমাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ নেই।
২৫ এপ্রিল ২০২৪ইং নগরীর সিআরবি চত্ত¡র, বিআরটিসি স্টেশন, রেয়াজউদ্দীন বাজার সংলগ্ন এলাকায় পরিচালিত প্রচারণা কর্মসূচিতে ক্যাব যুব গ্রæপ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট রেহেনা বেগম রানু, ন্যাপ কেন্দ্রিয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিথুল দাস গুপ্ত, ক্যাব মহানগরের যুগ্ন সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব সদরঘাটের শাহীন চৌধুরী, ক্যাব জামালখানের সালাহউদ্দীন আহমদ, ক্যাব চান্দগাও এর মোঃ জানে আলম, ক্যাব পাহাড়তলীর হারুন গফুর ভুইয়া, উন্নয়ন কর্মী ফেরদৌসী বেগম মৌসুমী, সুমাইয়া আফরোজ, এডাব চট্টগ্রামের সমন্বয়কারী ফোরকান মাহমুদ, ক্যাব যুব গ্রæপের সদস্য ইমদাদুল ইসলাম, শুভ আহমদ শাকিব, মোহাম্মদ রায়হান, রাইসুল ইসলাম, আবরাব প্রমুখ।
প্রচারণা কর্মসুচির আওতায় নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন স্থানে জনসাধারনের মাঝে অস্বাস্থ্যকর ও অনিরাপদ এবং ফুডগ্রেড বিহীন ড্রামে ভোজ্যতেল ব্যবহারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সচেতনতামুলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাাংলাদেশ (ক্যাব) এর দাবি সমুহ:
১. সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান (জেলা প্রশাসন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর, বাাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বিএসটিআই) কর্তৃক ব্যবসায়ীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্ঠির লক্ষ্যে মার্কেট মনিটরিং করা, বা কোন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে না। মার্কেট মনিটরিং এ কোন জরিমানা করা হচ্ছে না। মোবাইল কোর্ট পরিচালনানা সময় আইন অমান্যকারী ব্যবসায়ীদের সরকারি নিষেধাজ্ঞা মান্য করতে বাধ্য করতে হবে।
২. আইন প্রতিপালনে ব্যবসায়ীদেরকে কেমিকেল ড্রামের পরিবর্তে ফুড গ্রেটেড বোতল বা প্যাকে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণে বাধ্য করতে হবে।
৩. রিফাইন কোম্পানীগুলো যেসকল ড্রামে তেল সরবরাহ করে সেগুলোতে লেবেল ও উৎস সনাক্তকরণ তথ্য যুক্ত করতে হবে।
৪. সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী রিফাইনারী ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোর আইনে আওতায় যথাযথ শাস্তি প্রদান করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের ব্যবসায়িক লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।
৫. অস্বাস্থ্যকর অনিরাপদ ও ফুডগ্রেডেট বিহীন ভোজ্যতেল বাজারজাতকরনে ব্যবসায়ীদের উপর চাপ সৃষ্ঠি করতে হবে।
৬. ড্রামের অস্বাস্থ্যকর স্বাস্থ্যক্ষতি সম্পর্কে নীতি নির্ধারক, উৎপাদক, সরবরাহকারী এবং সাধারন মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্ঠি করতে হবে।
৭. সরকার, জনস্বাস্থ্যবিদ, নাগরিক সমাজ, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যম, উন্নয়ন সহযোগীসহ সং¯িøষ্ঠ সকলে মিলে ভোক্তাদের খোলা ভোজ্য তেলের পরিবর্তে বোতল/প্যাকেটজাত ভোজ্যতেল গ্রহনে উৎসাহিত করতে হবে।