শামসু উদ্দীন, টেকনাফ:
টেকনাফে দাম্পত্য জীবনে কলহ ও পারিবারিক বিরোধের জেরে পুত্রের ছুরিকাঘাতে পিতা খুন হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের পানখালী নামক এলাকায়। খুন হওয়া দিনমজুর একই এলাকার মৃত ফকির মোহাম্মদের ছেলে শাহ আলম ওরফে শাহাব মিয়া শাবু (৬৬)।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, হ্নীলা পশ্চিম পানখালীর শাহ আলম ওরফে শাহাব মিয়া শাবু’র (৬৬) দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবনে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছিল। উক্ত জেরধরে দূর্বৃত্ত পুত্র দিয়ে দিন-মজুর স্বামীকে ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত করা হয়েছে। এরপর চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বামী শাহ আলম ওরফে শাহাব মিয়া শাবু (৬৬) মৃত্যু বরণ করেছে। এঘটনায় প্ররোচানাকারী হিসেবে শাবু’র স্ত্রী নুর নাহারকে আটক করে রেখেছে জনতা। ঘটনার পর হতে দূবর্ৃৃত্ত ছেলে ঘাতক জয়নাল পলাতক রয়েছে।
৪জুন (মঙ্গলবার) ভোররাত ৪টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা পশ্চিম পানখালীর মৃত ফকির মোহাম্মদের পুত্র দিন-মজুর ও কৃষক শাহ আলম ওরফে শাহাব মিয়া শাবু (৬৬) মৃত্যুবরণ করেন। আইনী প্রক্রিয়া শেষে মৃতদেহ বাড়িতে আনার প্রস্তুতি চলছে।
সূত্রে আরো জানা যায়,গত ১লা জুন বিকালের স্বামী শাহ আলম ওরফে শাহাব মিয়া শাবু ও স্ত্রী নুর নাহারের মধ্যে পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ঝগড়ার সুত্রপাত হলে স্থানীয় মরহুম কবির আহমদ মেম্বারের পুত্র নুরুল ইসলামের নিকট নালিশ করতে যায় নুর নাহার। কিছুক্ষণ পর স্বামী শাহ আলম ওরফে শাহাব মিয়া শাবুও একই বিষয়ে নালিশ করতে যায়। ইতিমধ্যে নুর নাহার হোয়াইক্যং এলাকায় বসবাসরত তার ছেলে ডাকাত জয়নালকে ফোনে ডেকে নিয়ে আসে। তখন নুরুল ইসলাম স্বামী-স্ত্রীকে সাথে নিয়ে পথিমধ্য হতে সমাজ সর্দার ফরিদকে ডেকে ভিকটিমদ্বয়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। ঘরের আঙ্গি প্রবেশের সাথে সাথে পিতা পক্ষ এবং মা পক্ষ দু’গ্রæপের মধ্যে থেমে থেমে প্রায় ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলে। এসময় সালিশকারীরা কোন প্রকারে ঝগড়া থামিয়ে উত্তেজনার মধ্যে সমাধান না করে কয়েক দিন পর পরিস্থিতি শান্ত হলে সমাধানের আশ্বাস দিয়ে স্ত্রী নুর নাহারকে আপাতত এক ছেলের বাড়িতে থাকার আহবান জানালে পরিস্থিতি শান্ত হয়। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ডাকাত জয়নাল কোথা হতে ছুরি এনে একেবারে ছোট ভাইকে ছুরিকাঘাত করার জন্য ধাওয়া করে। তখন পিতা সাবু বাঁধা দিতে গেলে ছেলে জয়নাল তার বাবাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
উল্লেখ্য,হ্নীলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আলহাজ্ব এইচকে আনোয়ারের আমল হতে দাম্পত্য ও পারিবারিক খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। যা চেয়ারম্যান, মেম্বার, সমাজ সর্দার ও গণ্যমান্য ব্যক্তি পর্যন্ত সালিশ গড়ায়। কিন্তু তাদের বিরোধ সমাধান না হওয়ায় পুরো পরিবার দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত এই স্বামী-স্ত্রীর বিরোধের কারণে দূর্বৃত্ত ছেলের হাতে ছুরিকাঘাত হয়ে কৃষক ও দিনমজুর পিতাকে মৃত্যুবরণ করতে হল।
নিহতের ভাই সোনা মিয়া জানান,ছুরিকাঘাতকারী ঘাতক ছেলে ডাকাত জয়নাল পালিয়েছে ও প্ররোচনাকারী স্ত্রী নুর নাহারকে আমরা স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আটক করে রেখেছি। আমার ভাইয়ের বিচার নিশ্চিত করতে আমি বাদী হয়ে মামলার পর তাকে পুলিশে হস্তান্তর করা হবে।
স্থানীয় গ্রাাম পুলিশ নুর আহমদ কালু জানান,বিষয়টি থানা পুলিশ অবহিত হওয়ার পর এসআই জালাল আহমদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে স্থানীয় লোকজন ও পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে তথ্য উপাত্ত যাচাইয়ের পর ফিরে যায়। মৃতদেহ পোস্টমর্টেম শেষে বাড়িতে আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার হোছাইন আহমদ জানান,ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পরিবারিক বিরোধের জেরে সংঘর্ষে ছুরিকাঘাত হওয়া চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহ আলম ওরফে শাহাব মিয়া শাবু’র (৬৬)মৃত্যু হয়।
হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান,এই ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা খুবই দুঃখজনক। উক্ত বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশা রাখি। তিনি সর্বস্তরের মানুষকে এই জাতীয় কর্মকান্ড থেকে বিরত থেকে এলাকা ও সমাজকে শান্তিপূর্ণ বসবাসের উপযোগী রাখার আহবান জানান।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ ওসমান গণি জানান,আমরা বিষয়টি জেনেছি। তবে এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। বিষয়টি খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনানূগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।