একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির এবং দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তকে ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে আদালতে উপস্থিত করে আলাদা আলাদা মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। পরে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ছানা উল্যাহ শুনানি শেষে ৭ করে তা মঞ্জুর করেন।
তাদের রাজধানীর রমনা ও ভাষাণটেক থানায় করা হত্যা মামলায় রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এরমধ্যে সাংবাদিক শ্যামল দত্তের বিরুদ্ধে গুলি করে যুবক ফজলুকে হত্যার অভিযোগে ভাষাণটেক থানায় করা মামলায় এ রিমান্ডের আবেদন করেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. সাহিদুল বিশ্বাস। আর মোজাম্মেল হক বাবু ও শাহরিয়ার কবিরের বিরুদ্ধে গৃহপরিচারিকা লিজাকে হত্যার অভিযোগে রমনা মডেল থানার মামলায় রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. পায়েল হোসেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন গত ১৮ জুলাই রমনা থানাধীন এলাকায় আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণে গুলি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। এতে অনেক সাধারণ মানুষ আহত হন। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ লিজা আক্তার গত ২২ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় গত ৫ সেপ্টেম্বর লিজা আক্তারের বাবা মো. জয়নাল শিকদার বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ ১৭৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। এ মামলা আসামি হলেন মোজাম্মেল বাবু ও শাহরিয়ার কবির। আর ভাষাণটেক থানাধীন এলাকায় বিজয় মিছিল করতে গেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ফজলু। এ ঘটনায় গত ১১ সেপ্টেম্বর নিহত ফজলুর ভাই সবুজ বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ ১৬৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ মামলার আসামি শ্যামল দত্ত।
গ্রেফতারের পর সকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়।
এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ থেকে আটক হওয়ার পর দুই সংবাদিক শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল বাবুকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
একইদিন রাতে রাজধানীর বনানী থেকে গ্রেফতার করা হয় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরকে। আবার একই দিন রাতে শ্যামলী থেকে গ্রেফতার করা হয় সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনকে। তাকেও আজ আদালতে তোলার কথা রয়েছে। যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলায় তাকে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হয়েছে বলেও জানা গেছে।
১৬ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয়ে আনা হয় ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালানোর সময় আটক হওয়া সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু, শ্যামল দত্ত, মাহাবুবুর রহমানসহ চারজনকে।
এর আগে, আইনি বিষয় সম্পন্নের পর ওইদিন দুপুর সোয়া ৩টার দিকে তাদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয় পুলিশ। গাড়িতে তোলার সময় বিএনপির নেতাকর্মী ও স্থানীয় জনতা তাদের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন ও ডিম ছুড়ে।
১৫ সেপ্টেম্বর রাতে অবৈধভাবে ভারত যাওয়ার উদ্দেশ্যে ধোবাউড়ায় যান মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্ত। এসময় তাদের সঙ্গে ছিলেন একাত্তর টিভির সিনিয়র রিপোর্টার মাহাবুবুর রহমান (জেমসন মাহাবুব)। মোজাম্মেল হোসেন বাবুর গোঁফ ও শ্যামল দত্তের দাড়ি ফেলে দিয়েছেন পরিচয় লুকাতে। তবে শেষ পর্যন্ত সীমান্ত পাড়ি দিতে পারেননি তারা।
ভোরে উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ও পোড়াকান্দুলিয়া সীমান্তের মাঝামাঝি এলাকা থেকে স্থানীয় জনতা তাদের আটক করে থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। এ সময় তাদের বহনকারী একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, তারা দালালের সাহায্যে ভারতের মেঘালয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ধোবাউড়া যান। রাজু ও মুশফিক নামে দুই যুবকের সহযোগিতা নিয়ে তারা সীমান্ত পার হতে চেয়েছিলেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া হয়ে শ্যামল দত্ত সপরিবারে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে একাধিক সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তাকে ওই দিন আটকে দিয়েছিল ইমিগ্রেশন পুলিশ। এর পর থেকে তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এছাড়া শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন মোজাম্মেল বাবু।